Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রেকর্ড মূল্যপতনে সমান হচ্ছে রুপি-টাকার মান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৪১ PM
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপি আরও দরপতনের দিকে যাচ্ছে। ভারতীয় রুপির বিপরীতে ডলারের পাশাপাশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি টাকা। গেল সপ্তাহে নিম্নমুখী ধারায় রুপির রেকর্ড মূল্যপতন হয়েছে। বৃহস্পতিবার একটা পর্যায়ে ১০০ রুপির দাম নেমে দাঁড়িয়েছিল ১১৩ টাকা। অতীতে কোনো সময় এতো কম দামে রুপি পাওয়া যায়নি।

অর্থ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা থেকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতির গতি যে শ্লথ হয়ে আসছে সে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে।

 

মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএনের খবরে বলা হচ্ছে, মুদ্রাবাজারে অস্থির অবস্থাকে কেন্দ্র করে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আবারও স্থগিত করেছে। এ ঘটনার পর শুক্রবার এক ডলার কেনাবেচা হয়েছে ৭৪ রুপির উপরে। রুপির মানের এই পতন এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

তবে দিনের শেষভাগে রুপির দাম কিছুটা চাঙা হয়। এ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। যদিও তারা আশা করছে, তেলের দর বৃদ্ধি এবং রুপির ধসের পরও মূল্যস্ফীতিকে টেনে ধরতে পারবে।

চলতি বছর শক্তিশালী ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম ১৫ শতাংশের মতো কমে যায়। যা বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে রুপির সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স।

এদিকে এই দরপতন ঠেকাতে ভারত সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা ভারতীয় কম্পানির ইস্যু করা বন্ডে বিদেশি বিনিয়োগকে সহজ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে সরকার বিদেশিদের জন্য ওয়াশিং মেশিন, ডায়মন্ডস কেনার বিষয়ও সহজ করে দিয়েছে।

রুপির এই পতনে ভুগছে ভারতের পুঁজিবাজারও। গত এক মাসে দেশটির বেঞ্চমার্ক সূচক সেনসেক্স ৮ শতাংশেরও বেশি পতনে নামে।

চলতি বছর ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ শক্ত হয়েছে। শেষ প্রান্তিকে যা ৮ দশমিক ২ শতাংশ ছুঁয়েছে। তবে বিশ্বের অন্যতম এনার্জি আমদানিকারক দেশটি তেলবাজারে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। যার ফলে দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই তেলের দাম বাড়ছে।

আমদানি-রফতানিকারকদের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে পণ্য বেশিরভাগ কেনাবেচা হয় ডলারে। ফলে টাকা শক্তিশালী হলে বা রুপির মান কমলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। তবে যারা ভারত ভ্রমণ করবেন কিংবা কাঁচা টাকা ভাঙান তারা লাভবান হবেন।

অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী এনএস ভেঙ্কটেশ বলেন, তেলের উচ্চমূল্যের কারণে ভারতীয় মুদ্রা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এতে ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে মুদ্রাটি। তবে ভারতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি রুপির মান ৬৯-এর কাছাকাছি স্থিতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

ভেঙ্কটেশ বলেন, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) রুপির উত্থান-পতনের বিষয়টি দেখছে। ফলে মুদ্রা বিনিময় বাজারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।

বিশ্বে এখন যে কয়টি দেশকে উদীয়মান বাজার বলা হচ্ছে, তার মধ্যে ভারত একটি। শক্তিশালী মার্কিন অর্থনীতির কাছে দেশটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ রুপির বিপরীতে মার্কিন ডলার ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড বাজার গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়। এসময় বন্ডের ইয়েল্ড ছিল সর্বোচ্চ।

ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জ্বালানিতে ট্যাক্স কমানোর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশকিছু সূচক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। আমাদের ওপরও সেই প্রভাব পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের হার বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতির জন্য সমস্যা।

এইএসবিসির কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলেন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারত প্রবৃদ্ধিতে একটি চমক দেখিয়েছে। কিন্তু এখান থেকে আবারও পেছনের দিকে যেতে হতে পারে।

তারা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ভারতের জন্য এখন সুনির্দিষ্ট মাথাব্যথা।

এদিকে রুপির মান কমায় বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য সুখবর বলছেন দেশের পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা জানায়, ডলারের বিপরীতে রুপির মান কমায় এখন ওই দেশে ভ্রমণের খরচ কমেছে। প্রতিবছরই রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক বাংলাদেশ থেকে ভারত ঘুরতে যায়। এখন চলছে ভারত ভ্রমণের সুবর্ণ সময়। এ সুযোগ অনেকে গ্রহণ করছেন। এখন ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। ডালের মানও রুপির তুলনায় বেড়েছে। সব মিলিয়ে ভারতে ভ্রমণ আরও বাড়বে।

Bootstrap Image Preview