নিজ গ্রামে নারীর এগিয়ে চলা ও সমাজের দৃষ্টি বদলের গল্প উঠে এসেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কিশোরীদের তোলা আলোকচিত্রে। অবরোধবাসিনী নারী নয়, নিজের গ্রামে নারীর দিনবদলের চিত্র ধরা পড়ে কিশোরীদের ক্যামেরায়। কিশোরীদের তোলা এসব ছবি দিয়েই সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী।
আজ মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর সিক্স সিজন হোটেলে কেয়ার বাংলাদেশের আয়োজনে ‘আমার চোখে বদলে যাওয়া’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকায় সুইডিশ রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাল্য বিবাহ ও নারী শিক্ষার হার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নারীদের নানা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতেও জোর দিয়েছিল কেয়ার বাংলাদেশ। ওই সময়ই কিশোরীদের হাতে ডিজিটাল ক্যামেরা তুলে দেয় তারা।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি কানাডা হাই কমিশনের এইড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বিভাগের প্রধান ফেড্রা মন মরিস। প্যানেল আলোচক ছিলেন নিজেরা করি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির এবং চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানা।
কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়া চৌধুরী বলেন, “২০১৬ সালে মূলত আমরা এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমটি শুরু করি। তখনও বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশিই ছিল। এ নিয়ে মানুষের মনে নানান নেতিবাচক ধারণাও ছিল। আমরা এটাকে বদলাতে চেয়েছি বরাবর। হয়তো সেই পথেই ইতিমধ্যে আমরা হাঁটছি।"
“সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কন্যা শিশুর শিক্ষা, খেলাসহ বেড়ে ওঠার পথে সব অধিকার আদায়েও আমরা স্থানীয় মানুষকে বোঝাতে পেরেছি। কন্যাশিশুরা সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে যখন এগিয়ে এল, তখন ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকল দৃষ্টিভঙ্গি।” বলে মন্তব্য করেন জিয়া।
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার বলেন, “নারীকে দেখার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যে শুধু সমাজকে বদলে দেবে তা নয়, এটি একইসঙ্গে ভূমিকা রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতেও। জেন্ডার সমতা নিয়ে সরকার হয়তো নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পরিবর্তনটা আসতে হবে নিজেদের মধ্য থেকে। পরিবারের নারী সদস্যদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি যখন বদলাতে শুরু করবে, তখনই আসবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল।”
রাষ্ট্রদূত এ সময় নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা কমাতে সংশ্লিষ্টদের আরো উদ্যোগী হতে আহ্বান জানান।
কানাডা হাই কমিশনের এইড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বিভাগের প্রধান ফেড্রা মন মরিস বলেন, “নারীকে নিয়ে সমাজের নীতিগুলো যখন বাস্তবায়িত হতে শুরু করবে, তখন উন্নতির সবগুলো সূচকের উল্লম্ফন হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে নারীর সমতা বিধান যে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা, তা নয়। এটি গোটা বিশ্বের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নারীরা উঠে আসছেন, জনগণ সচেতন হচ্ছে।”
পরে নিজেদের তোলা ছবি নিয়ে কথা বলেন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা কিশোরী শিপন হাজরা, জেসিয়া আক্তার, শিউলি সেনাপতি এবং সাজিনা আক্তার।