নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
‘মাছে ভাতে বাঙালি' এই কথাটি বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যস্বরূপ। আর তাই মাছ ধরার মৌসুমে দেশের কিছুকিছু স্থানে আলাদাভাবে থাকে কিছু আয়োজন। ঠিক তেমনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের জালিয়া বিল এলাকার মানুষেরা বছরে একবার মেতে ওঠে মাছ ধরার আনন্দে।
মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) ‘হাইত’ উৎসব হয়ে গেল এই এলাকায়। এ উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে হইহুল্লোড় করে সারা দিন বিলে মাছ শিকার করেন ইউনিয়নের জালিয়া বিলপারের বাসিন্দারা।
এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, অনেক বছর আগে থেকেই খাল-বিল, জলাশয়ে ভরা ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় হেমন্তকালে ‘হাইত’ উৎসব হয়ে আসছে। সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে এবারও গতকাল ইউনিয়নের জালিয়া বিলে হাইতের আয়োজন করা হয়। সাধারণত বছরের এ সময় খাল-বিলের পানি কমে হাঁটুসমান হয়ে এলে হাইতের আয়োজন করেন বিলপারের মানুষ। তারা একত্রে বসে একটি তারিখ ঠিক করে দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেন। সেই সঙ্গে এলাকায় মাইকিংও করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক ভুঁইয়া বলেন, 'দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এই উৎসব উপলক্ষে আমাদের এলাকায় আসেন। তারা নিজ বাড়ি থেকে পিঠাপুলি নিয়ে আসেন। পরে সারা রাত ধরে বিলের পাড়ে সবাই মিলে সেগুলো খায়। ভোরের আলো ফুটলেই শত শত মানুষ একত্রে জাল, পলো ইত্যাদি নিয়ে বিলে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। ভাগ্য ভালো হলে কেউ বড়সড় মাছ পান। আবার কেউ ফেরেন খালি হাতে। তাতে আনন্দের কমতি হয় না।'
পাঁচ কিলোমিটার দূরের আচারগাঁও ইউনিয়ন থেকে আসা মোহাম্মদ দুলাল মিয়া (৩৫) বলেন, গত সোমবার রাতেই পলো নিয়ে তিনি জালিয় বিলপারের ঘোষপালা গ্রামে বোনের বাড়িতে এসেছেন। গতকাল সারা দিন মাছ ধরেছেন। তেমন বড় কোনো মাছ পাননি। তবে আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দের কমতি হয়নি বলে জানান তিনি।
উত্তর চন্ডীপাশা গ্রামের মো. সানাউল্লাহ (৩৫) বলেন, এখন বিলগুলোতে আর আগের মতো মাছ নেই। তাই হাইত আগের মতো জমেও না। তবু হাইত আয়োজনের খবর পেলে দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে মাছ শিকারিরা আগের দিনই বিলপাড়জড়ো হয়। ছেলে-বুড়ো রাত জেগে বসে থাকে ভোর হওয়ার আশায়। আলো ফুটলেই একসঙ্গে সবাই বিলে নেমে পড়ে মাছ ধরতে। তারপর যত না মাছ ধরা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় আনন্দ-উল্লাস।