Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

শেখ জাকির হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪৫ PM
আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪৭ PM

bdmorning Image Preview


স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কক্ষের করিডোরে তাকাতেই চোখে পড়ে গেল কাঁচে ঘেরা একটি ঘর। বেশ সাজানো ঘরটির উপরে লিখা আছে লাইব্রেরী। লাইব্রেরী রয়েছে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্যসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক শতাধিক বই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তার বারান্দার করিডোরটি লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহারের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি নজির স্থাপন করেছেন। পাশাপাশি কক্ষের করিডোরে লাইব্রেরী স্থাপনে বাংলাদেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা লাইব্রেরীগুলোতে পাঠকের হাহাকার দেখা গেলেও লাইব্রেরীতে প্রতিদিন পাঠক সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তির বিকাশে বিশ্ব যখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তথ্য ও প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা দেশের বেশির ভাগ গ্রামে বিস্তৃত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে লাইব্রেরীটি উদ্বোধনের পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপিত লাইব্রেরীতে বাড়ছে পাঠক সংখ্যা। পাশাপাশি লাইব্রেরীটি স্থাপন করে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর কবির।

পাঠক অভাবে উপজেলা সদরে অবস্থিত বীরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরীর বেহাল দশাই বলে দেয় লাইব্রেরীগুলিতে এখন সংকটকাল চলছে।

হাসপাতালে রোগীরা আসেন সেবা নিতে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে তাদের অলস সময় কাটে। তাছাড়া রোগী যখন হাসপাতালে নিঃসঙ্গতায় ভুগেন তখন তাদের অবসরকালে বই হতে পারে বিশেষ সঙ্গী। এমন ধারণায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয়েছে এ লাইব্রেরী।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সুজালপুর ইউনিয়নের শীতলাই গ্রামের মোঃ রবিউল ইসলামের ছেলে রহিম বখস উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ লিয়ন ইসলাম বলেন, আমার আম্মা মজিদা বেগম বেশ কয়েক জ্বরে ভোগছেন। তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছি। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। করিডোরে লাইব্রেরী দেখতে পেয়ে আম্মুকে নিয়ে বই পড়ে সময় পার করছি। এখানে বই পড়ে জানতে পারলাম খাবার কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। কিভাবে জীবানু মুক্ত রাখা যায়। পুষ্টি খাবার কি কি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী এটি আমার কাছে প্রথম। এখান থেকে অনেক কিছু জানা যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী গড়ে তোলা হবে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবে। তাই আমি দাবি জানাচ্ছি দেশের প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।

নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ শাহজাহান সিরাজ বুলবুল বলেন, আমার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন কে নিয়ে এসেছি। পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। এখানে লাইব্রেরী দেখতে পেয়ে বই পড়ে সময় পার করছি। এখানে বই গুলি সব স্বাস্থ্য সেবা মুলক লেখা। অল্প সময়ে বেশ কিছু জানতে পারলাম। বিশেষ করে এখানে প্লেস রোগ এবং ডেঙ্গু রোগের উপর লেখা বইটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পারলাম।

দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী স্থাপন নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমার জানা মতে দেশে সম্ভবত এটি প্রথম। লাইব্রেরীর অস্তমিত সম্ভবনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে সাহায্যে করবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরীটি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সেবায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করি।

বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ খয়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বর্তমান প্রজন্মের সন্তানরা কেন যেন লাইব্রেরীমুখী নয়। এ কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরী থাকলেও সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বর্তমানে পাঠক সংকটে আমাদের লাইব্রেরীগুলি দৈন্য দশায় ভূগছে। তাই এই সংকট মুহুর্তে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী স্থাপনের উদ্যোগটি প্রসংশার দাবি রাখে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার ছোট শিশুটির বয়স ৬মাস। তাকে এখন পুষ্টিকর কি খাবার খাওয়াতে হবে তাই নিয়ে ভাবছিলাম। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলাম। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শর এক পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরীটি আমার চোখে পড়ে যায়। সেখান হতে একটি শিশু পুষ্টির বই নিয়ে এসেছি। বইটি আমি পড়েছি। আমার স্ত্রীকে পড়তে দিয়েছি। বইটি থেকে শিশু স্বাস্থ্য সেবার অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাইব্রেরীটি যেন কোন না কোন ভাবে একজন চিকিৎসকের ভূমিকার রাখেছে। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

লাইব্রেরীর উদ্যোক্তা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর কবির জানান, ১সেপ্টম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে লাইব্রেরীটি। এর শুভ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ সেবা বিভাগের যুগ্ন সচিব মোঃ আনোয়ান হোসেন। স্বপ্ন সময়ে লাইব্রেরীটিতে পাঠকের বেশ সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন রোগী এবং রোগীর সাথে আসার তাদের স্বজন এখানে বসে বই পড়ে। আমাদের চিকিৎসক হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই যেন উপকৃত হয় এমন চিন্তা থেকে লাইব্রেরীটি স্থাপন করা হয়েছে।

এখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সমস্যা, শিশুদের নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য, শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, বার্ড ফ্লু, বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী স্বাস্থ্য তথ্যসহ বাংলায় লেখা স্বাস্থ্য সেবা মুলক নানা ধরণের বই রয়েছে যা খুব প্রয়োজনীয়। কেউ চাইলে অনুমতি সাপেক্ষে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়তে পারেন। পাঠকের সংখ্যা বাড়লে লাইব্রেরীর পরিধি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। লাইব্রেরী থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় তবেই স্বার্থক হবে আমাদের এই ছোট উদ্যোগটি।

দিনাজপুর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নজমুল ইসলাম বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে আমাদের চিকিৎসকদের মন-মানসিতার। চিকিৎসকরা এখন এটিকে পেশা নয় সেবা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর এর উদাহরণ হিসেবে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী স্থাপনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম তুলে ধরতে পারি। যেটি ব্যাপক প্রসংশিত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে আমাদের অনেক বড় ধনণের অর্জন রয়েছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে।

Bootstrap Image Preview