Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পোকা দমনের আরেক সহায়িকা পার্চিং পদ্ধতি  

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৩৯ PM
আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৩৯ PM

bdmorning Image Preview


আর্থিক ক্ষতি কমানো, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া, আধুনিক কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রমে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুতই ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। রক্ষা পাচ্ছে নির্মল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।

ক্ষতিকর পোকা দমনে এক সময় জমিতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। এখন সে প্রবণতা কমেছে। ধান ক্ষেতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করে পোকা দমন করা হচ্ছে। কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিনা খরচে পোকা দমনের পরিবেশ বান্ধব এ পদ্ধতি।

ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ধান ক্ষেতের মাঝে ১৫-২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে আর ক্ষেতের পোকা ধরে খাচ্ছে নানা জাতের পাখি। এভাবে কীটনাশক ছাড়া সহজেই দমন হচ্ছে পোকা।

পোকা দমনের পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। পার্চিং ইংরেজী শব্দ। পাখি বসে এমন উঁচু ডাল বা খুঁটির নাম পার্চ। আর পার্চ থেকে পার্চিং নামের উদ্ভব। ফসলের জমিতে ধৈঞ্চা গাছ, ডাল, কঞ্চি, বাশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পাখি ক্ষতিকারক পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে। ফসলের পোকা দমনের এই পদ্ধতি অত্যান্ত কম ব্যয়বহুল এবং পরিবেশবান্ধব।

পার্সিং দুই প্রকার- ডেড পার্সিং ও লাইভ পার্সিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্সিং এবং ধইঞ্চা, কলা গাছ ইত্যাদি জীবন্ত পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্সিং।

কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনের এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে ধানের জমিতে পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৯'শ ৬৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকরা ২৮ হাজার ৯'শ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এর শতভাগ জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমন করেছে কৃষকরা। এতে ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, পোকা দমনে এই পদ্ধতি শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ কার্যকর। এ কারণে প্রতি একরে কীটনাশক খাতে চাষিদের খরচ কমেছে দুই হাজার টাকারও বেশি। পাশাপাশি কৃষকেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার শুরুর পর পাখির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মহাদেবপুর সদর, উত্তরগ্রাম, খাজুর, হাতুড়, চান্দাশ, সফাপুর, ভিমপুর, রাইগাঁ, চেরাগপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার দেখা গেছে। জমিতে পুঁতে দেওয়া গাছের ডাল ও বাঁশের কঞ্চিতে শালিক, ফিঙে, বুলবুলিসহ নানা জাতের পাখি এসে বসছে। একটু পরপর ডাল থেকে জমির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল পাখিগুলো। যে জমিতে পোকা বেশি সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি।

উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক মকবুল বলেন, ধান লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে জমিতে ডাল পুঁতে দিয়েছি, ওই ডালে পাখি বসে পোকা ধরে খেয়ে ফেলে। জমিতে পোকা আক্রমণ করতে পারে না। কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না বিধায় উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে।

একই গ্রামের কৃষক ইয়চিন বলেন, ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এতে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব সুন্দর একটি পদ্ধতি। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কীটনাশক ব্যবহার না করে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় কৃষকদের ফসল উৎপাদনে খরচ কমে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ধান ক্ষেতে বেশি ক্ষতি করে মাজরা পোকা। এই পোকা ধান গাছে গর্ত করে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মাজরার মথ থেকে ২০০-৩০০ বাচ্চার জন্ম হয়। শুধু একটি পাখির দ্বারা প্রতিমাসে কমপক্ষে দুই লাখের উপরে পোকা ধ্বংস করা সম্ভব।

Bootstrap Image Preview