Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

 মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য কারাম উৎসব উদযাপন

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৫৫ PM
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নওগাঁর মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উদযাপিত হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে ছিল সাজসাজ রব।

বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বনগ্রাম কারাম উৎসব উদযাপন কমিটি ও আদিবাসী উন্নয়ন কেন্দ্র (আউক) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওঁরাও সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব কারাম। ওঁরাওদের গ্রামে গ্রামে কারাম বৃক্ষর (খিলকদম) ডাল পূজাকে কেন্দ্র করে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর ভাদ্র মাসে পূর্ণিমায় উত্তরের সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা এই উৎসব পালন করে।

কারাম একটি গাছের নাম। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। এই কারাম গাছকে তারা মঙ্গলের প্রতীক বলে মনে করেন। ওই গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা, নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর কারাম উৎসব পালন করে থাকেন তারা। পূজা শেষে ওই ডাল উঠিয়ে গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেয়। ওঁরাও, সাঁওতাল, মুন্ডা, পাহান, মালো, মাহাতোসহ প্রায় ৩৮টি জাতিসত্তার মানুষ কারাম উৎসব পালন করেন।

এ উৎসব উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীত পরিবেশিত হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৮টি সাংস্কৃতিক দল একসঙ্গে মাঠে নাচ-গান পরিবেশন করে। নাচে-গানে ও ঢোল-মাদলের আওয়াজে মাতোয়ারা হয় বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ।

আয়োজিত আলোচনা সভায় আদিবাসী উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রী নন্দলাল ওঁরাও'র সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব ও নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর, কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, নওগাঁ সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, লেখক ও আদিবাসী বিষয়ক গবেষক স্বপন রেজা, সাংবাদিক ও নাট্যকার আজাদুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা দিপঙ্কর লাকড়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, প্রতিভা গ্রামীণ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি রামপদ শিং প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শুধু নিছক বিনোদনের জন্য না, আদিবাসীদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বক্তারা আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিরও দাবি জানান। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বনগ্রাম আদিবাসী পল্লীতে কারাম (ডাল) পূজা অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব কালে গাছ দেবতা যেন ভাল ফসল দেয় সে প্রার্থনা করা হয়। এই গাছকে ঘিরে চলে আরাধনা গান। শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সের ওঁরাও এই গানের সুরে সুর মিলিয়ে গাছ দেবতার প্রার্থনায় মেতে উঠে। গাছ দেবতার আনুকুল্য পাওয়ার জন্য ধান, শর্ষেদানা, কলাই, গম প্রভৃতি ফসলের বীজ এই কারাম গাছের গোড়ায় রাখা হয়। যেন গাছ দেবতা সামনের বছর ভাল ফলন দেয় ও জগতের সব বিপদ-আপদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন।

সে প্রার্থনা করে রাতভর চলে এই সম্প্রদায়ের নৃত্যগীত ও হাড়িয়া পান। কারাম উৎসবকে ঘিরে ওঁরাও গ্রামগুলোতে প্রস্তুতি চলে ১৫ থেকে ২০ দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত নাচ-গান চলে। ওঁরাওরা এ উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে।

Bootstrap Image Preview