জাতীয় ঐক্য গঠনের পর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ড. কামাল হোসেনের এক বক্তব্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বৃহত্তর ঐক্যজোটের মধ্যে। ড. কামাল সোমবার সকালে বিবিসিকে বলেন, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো এবং ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে নীতিগত আপত্তি নেই তার।
এমন বক্তব্যের পরই গতকাল তাঁরা বলছেন, ‘যেখানে আমরা একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সেখানে এ ধরনের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।’
এই ঘটনার পরে গতকাল সন্ধ্যায় মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বৃহত্তর ঐক্যজোটের বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালে কামাল হোসেনকে ফোন করেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বৃহত্তর ঐক্যজোটের অন্যতম নেতা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি ড. কামালের কাছে জানতে চান এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে। জবাবে ড. কামাল জানান, তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেননি। তাঁর বক্তব্য ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি প্রতিবাদ পাঠাচ্ছেন বলেও জানান।
এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ড. কামালের কাছে এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে জানতে চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
জোটের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে ড. কামাল হোসেন নিজেই বলেছেন—এটা তাঁদের দলের অবস্থান। এ বিষয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেননি। সুতরাং তাঁর নিজস্ব মতামত নিয়ে কোনো কথা বলত রাজি নই।
বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ড. কামাল জানান, তাঁদের নবগঠিত জোটের শরিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। এটি শুধুই তাঁর দলের অবস্থান। তিনি বলেন, ‘এটি একটি সিম্পল প্রভিশন। আমি মনে করি, সবাই এটি বলতে দ্বিধা করবেন না। তবে এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত আমরা বসে নিইনি।’
এদিকে জাতীয় ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করতে এবং সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন এগিয়ে নিতে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমন্বয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি এবং একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে দুই জোটের সাত নেতাকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে সমন্বয় কমিটি। এই কমিটি যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়নসহ সাংগঠনিক বিষয়াদি দেখভাল করবে। এই কমিটির মধ্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন এবং নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহিদুল ইসলাম রয়েছেন।
আর পাঁচ সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের কাজ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এতে ড. কামাল হোসেন, ডা. বি চৌধুরী, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না থাকতে পারেন। বিএনপি এলে বাকি একজন পূর্ণ করে এই স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। আজ মঙ্গলবার রাতে ড. কামাল হোসেনের বাসায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে স্টিয়ারিং কমিটি চূড়ান্ত করা হবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে তিন রাজনৈতিক দলের যুক্তফ্রট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমন্বিত পাঁচ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্য ঘোষণা দেওয়া হয়। এর বাইরে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ব্যানারে শনিবার এই জোটের প্রথম যে সমাবেশ হয়, সেখান থেকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয় এবং আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেসব দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়।