Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফুলদানীর ব্যবসা দিয়ে শুরু অস্ত্রের ব্যবসা দিয়ে ধরা

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২৬ AM
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২৬ AM

bdmorning Image Preview


গত কয়েক দিনে নওগাঁয় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন অনেকে। ঘটনায় শহরের অস্ত্র ব্যবসায়ী অনন্যা বিপণীর মালিক কাজী রেজাউল করিম বাবলুকে আটক করেছে পুলিশ। কাজী বাবলুকে আটকের পর বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ

এর আগে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নওগাঁয় শহরের চকবাড়িয়া এলাকায় পারিবারিক কলহের জের ধরে এলাকার সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ওমর ফারুক তার অবৈধ পিস্তলের ছোড়া গুলিতে মামুনুর রশিদ নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাকে আটকের পর তার কাছ থেকে একটি পিস্তল রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ

ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ জানতে পারে অনন্যা বিপণীর মালিক কাজী বাবলুর কাছ থেকে নিয়েছে বিভিন্ন সময় পিস্তল নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে ওমর ফারুক। এমন তথ্য পাওয়ায় তৎপর হয়ে দ্রুত কাজী বাবলুকে আটক করে পুলিশ

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শহরের অফিস পাড়ার কাজী আব্দুল মতিনের ছেলে কাজী রেজাউল করিম বাবলু প্রায় ১০ বছর আগে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে অনন্যা বিপণী নামে একটি দোকান দেন। সেই দোকানে প্রথমে ঘর সাজানো ফুলদানিসহ বিভিন্ন উপকরণ তোলেন। এরপর কিছুদিনপর বিভিন্ন পাথড়ের আংটি যুক্ত ব্যবসায় শুরু করেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে পরিচিত হন শহরের বিভিন্ন মহলে। এর পাশাপাশি খেলনা অস্ত্র বিক্রির উদ্দ্যেশে তার ফেসবুকে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বরে পৃথিবীর সেরা অ্যান্টিক কিছু কালেকশন শিরোনামে পিস্তল, শর্টগান, রিভালবারসহ অস্ত্রের ৩০টি ছবি আপলোড করেন

কাজী বাবলুর বিরুদ্ধে জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি অনেক আগে থেকে নওগাঁ তিন/চারজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় আগ্নেয় অস্ত্রের ব্যবসা করে আসছিলেন। কাজী বাবলুর জেলা বিভিন্ন উপজেলার ১০/১২ জনের একটি বড় গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপের সবাই জেলার ওই প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি টেন্ডরবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে রাণীনগরে উপজেলার করজগ্রামে পুকুর দখল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আজিম উদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী শাহাদাত হোসেন সায়েমের নেতৃত্বে। ওই দিন সায়েমের অফিস রাণীনগর থেকে অস্ত্র উদ্ধারসহ গ্রেফতার করে পুলিশ

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাণীনগর উপজেলা সদরের লোহাচুড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামের সাদেক আলীর বাড়ি তল্লাশি করে। সাদেক আলীর জামাই আসিফ উল ইসলাম পলককে গ্রেফতার করে। পলককের বিছানার বালিশের নিচ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে

১৩ সেপ্টেম্বর নওগাঁ সদর উপজেলার বুজরুক আতিথা গ্রামের বদর উদ্দীনের ছেলে অস্ত্র ডাকাতিসহ ১৪ মামলার আসামী আজাদুল ইসলামকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই দিন ভোর রাতে আজাদুলের বাড়িতে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনায় আজাদুলের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় অস্ত্র বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে

২৪ আগস্ট নওগাঁর রাণীনগরে গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লটারির ড্র চলাকালিন সময়ে দুবৃর্ত্তদের ছোড়া গুলি মাথায় লেগে রুবায়েত হোসেন নামে এক কিশোর আহত হয়েছে। ঘটনায় আরো দুইজন আহত হয়েছে।

এমতাবস্তায় ১৭ সেপ্টেম্বর নওগাঁয় শহরের চকবাড়িয়া ওমর ফারুক অনন্যা বিপণীর মালিক কাজী বাবলু আটক হওয়ারপর প্রশাসন এই চক্রের জড়িতদের অন্য সদস্য আশ্রায়প্রশ্চয় দাতাদের আইনের আওয়াতায় নিতে উঠে পরে লেগেছে

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা জানান, জাতীয় স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বৃহৎ দলগুলো তাদের আধিপত্ত বজায় রাখতে অস্ত্র প্রদর্শন কালো টাকার ব্যবহার বৃদ্ধি করে। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ করতে এই সব কালো টাকার মালিক, অস্ত্রধারী, তাদের প্রশ্রয়দাতাদের দ্রুত আইনের আওয়াতায় আনতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানান, অনন্যা বিপণীর মালিক কাজী বাবলু নওগাঁয় অবৈধ্য আগ্নেয় অস্ত্রধারী। সে সব সময় আগ্নেয় অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতো কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায়। কাজী বাবলুকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক সন্ত্রাসী প্রশ্রয়দাতারা আটক হবে।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী যেই দলেরই হোক না কেন তাদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানান।

নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই জানান, কাজী বাবলুর বিরুদ্ধে জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি অনেক আগে থেকে নওগাঁ তিন/চারজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় আগ্নিয় অস্ত্র ব্যবসা, ভয়ভীতি টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে করে আসছিলেন। বিস্তারিত জানতে কাজী বাবলুকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে আশা রাখা যায় অনেক তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে

পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, কাজী বাবলুকে আটকের পর প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি খুব চতুর। তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে এই চক্রের অন্য জড়িতদের আটক করা সম্ভব হবে।

অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি আমি যোগদানে আগে অস্ত্রসহ একটি ছবি ফেইস বুকে আপলোড করেছেন বলে জানতে পেরেছি। কোন ব্যক্তির কাছে বৈধ্য অস্ত্র থাকলেও কেউ কোন মিডিয়ায় আপলোড করতে পারেন না। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীরা জনসাধারণের যাতে কোন ক্ষতি না করতে পারে সেই জন্যে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সন্ত্রাসী যেই দলেরই হোক না কেন তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে

Bootstrap Image Preview