ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে চায়। তারা সবসময় উভয় দেশের মধ্যে মিলবন্ধন দেখতে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে সীমান্তে বেড়া থাকলেও মানুষের মনের বেড়া উঠে যাচ্ছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসা ভারতীয় দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকাসহ ১১টি গণমাধ্যমের প্রধান সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ নাথ ১৫ সেপ্টেম্বর হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিডিমর্নিংকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিডিমর্নিং এর হেড অব নিউজ ফারুক আহমাদ আরিফ। ক্যামেরায় ছিলেন মেরিনা মিতু। ২ পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজকে প্রকাশিত হলো।
ফারুক আহমাদ আরিফ: বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে আরো গভীর সম্পর্ক কিভাবে তৈরি করা যায়?
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: যদি আমাদের যাতায়াত, ব্যবসায়-বাণিজ্য, ভিসা সহজকরণ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান করা হয়। এই যে তারকাঁটার বেড়া সেটা কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না। হৃদয় তো একই হৃদয়।
ফারুক আহমাদ আরিফ: হৃদয় তো তারকাঁটা মানে না।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: হা হা, হৃদয় তারকাঁটার বেড়া মানে না। আপনারা দেখছেন দক্ষিণ কোরিয়া-উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কত বছর দেয়াল ছিল। ১০ হাজার মানুষের ধাক্কায় সেটা ভেঙে ফেলেছে।
ফারুক আহমাদ আরিফ: জার্মান তো একই হয়ে গেল।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: জার্মান এক হয়ে গেল। তো তারকাঁটা কোন ব্যাপার না। দুই দেশে যদি যাতায়াত সহজ হয়, শিক্ষা-দীক্ষা এক হয়। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি ভারতে যায়। আর্থিক, সামাজিক একটা আদান-প্রদান হয়। আগে তো বিদেশ চলে যেত এখন কম টাকায় ভালো চিকিৎসা হয়। ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত।
ফারুক আহমাদ আরিফ: অনেক জায়গায় প্রশংসিত হচ্ছে।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: খুব প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যে ট্যুরিজম আছে তা অনেক। কলকাতার মানুষদের বাংলাদেশের পর্যটনের উপর খুব আগ্রহ আছে। তারা প্রত্যেক ছুটিতে কোথাও না কোথাও যায়। বাংলাদেশের পর্যটনের একটি ভালো অবকাঠামো তৈরি হয় আর সেই সংবাদটি সেখানে গেলে তবে কোটি কোটি পর্যটক আসবে বাংলাদেশে। পর্যটনের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতির আদান-প্রদান হয়। এখানকার জামদানী শাড়ি, এখানকার কারুশিল্প যেগুলো আছে এসব অর্থনৈতিক একটা বিরাট ব্যাপার। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মরিশাসের মতো ছোট দেশ বাংলাদেশের চেয়ে ছোট দেশ। ওয়ান দ্যা রিচেস কান্ট্রি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মরিশাস পর্যটনের দ্বারা প্রচুর সম্পদশালী হয়েছে। বাংলাদেশে এতো সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রবাল, চট্টগ্রাম, সিলেটের চা বাগান, সুন্দরবনসহ অনেক দর্শনীয় স্থান আছে।
ফারুক আহমাদ আরিফ: প্রাচীন কিছু স্থাপত্য আছে বাংলাদেশে। যেমন জমিদার বাড়ি ইত্যাদি।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: এগুলো দেখার জন্যে যদি ইনফ্রাস্টাকচার তৈরি হয়, থাকার ভালো ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তো ভারতীয় পর্যটকে বাংলাদেশ ভরে যাবে। ভারতের কোটি কোটি পর্যটক আসবে বাংলাদেশে। তারা দার্জিলিং, শিলংয়ে ঠাই পায় না। বাংলাদেশের কথা শুনলেই তো বাঙালিদের মনটা আবেগে ভরে উঠে। অনেকের পিতৃভূমি, মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছিল। আমাকে আসার সময় ৫ মাসের ভিসা দেয়া হয়েছে। আমি বলেছি ১০ বছর করে দাও। আমি আমেরিকার ভিসা চেয়েছিলাম ১৫ দিন, তারা ১০ বছর দিয়ে দিছে। বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ১০ বছর, ২০ বছরের ভিসা দিক না, সব মানুষকে দেয়া হোক। একটা এগ্রিমেন্ট করা হোক। আদান-প্রদানের ভাব বিনিময়, সাংস্কৃতিক বিনিময় হয় এটা বিরাট কিছু। বিবাহ ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে হয় ধর্মমত যায় হোক। আত্মীয় হয়। আমার শুশুরবাড়ি বাংলাদেশে।
ফারুক আহমাদ আরিফ: কোথায়?
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: না, কেউ যদি বলে আর কি
ফারুক আহমাদ আরিফ: ও আচ্ছা।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: হা হা। এটা কিন্তু আনন্দের ব্যাপার। যদি কেউ বলে আমার শুশুরবাড়ি কলকাতা এটা আনন্দের, আমি মাঝে মাঝে কলকাতা যাই। হা হা ...।
ফারুক আহমাদ আরিফ: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। থাকতে দিয়েছে, খেতে দিয়েছে, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এটা নিয়ে অনেকজন অনেকভাবে বিশ্লেষণ করে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটাতে কি ভারতের কোন লাভ-ক্ষতি ছিল? না বাংলাদেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকে, মানবতার প্রতি একটা সম্মান থেকে এই কাজটা করেছে?
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: ভারতের নিশ্চয়ই লাভ ছিল। কারণ পাকিস্তান যেভাবে আমাদের সীমানায় আক্রমণ করতেছিল। রাত-দিন তারা গুলি চালাতো ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাতে। যুদ্ধেরভাব সবসময় থম থম ছিল পাকিস্তান-ভারতে। আমাদের পাকিস্তান সীমান্তে যেতে হতো। প্রত্যেক দিন গোলাগুলি হচ্ছে কাশ্মিরে। এখানে এই পরিস্থিতি তখন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যেটা হলো-সেখানে ভারতের হান্ড্রেড পার্সেন্ট সমর্থন ছিল। আমেরিকা অপোস করেছিল। তাদের জাহাজ পর্যন্ত এসেছিল।
রক্তিম: মুক্তিযুদ্ধের সময়।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: হ্যাঁ, এতে ভারতের লাভ হয়েছে। ভারত চাইছিল বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে সরে আসতে পারলে ভালো। কারণ বাংলা আমাদের দেশ। অনেকের পিতৃভূমি, মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এখানে একটা মিল থাকবে। কারণ সেখানকার শাসক এখানে এসে আমাদের শান্তির পরিবেশটা বিঘ্নিত করছে। এখন আমরা দেখছি ভারত বাংলাদেশে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সবচেয়ে ফার্স্ট ফেভারিট কান্ট্রি হচ্ছে ভারতের বাংলাদেশ। প্রতিবেশির সাথে যদি ভালো সম্পর্ক না থাকে তাহলে কোন দেশেই শান্তি থাকে না। উন্নয়ন হয় না। আমি তো আশা করি এমন দিন আসবে যখন বাংলাদেশ-ভারত পলিটিকেলি বিভাজন থাকবে কিন্তু অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিরাট একটা মিলন হয়ে যাবে। আমাদের দেশের মোদি সরকার, এখানকার শেখ হাসিনা সরকার দু’জনেরই মহৎ উদ্দেশ্য আছে। ভারত শক্তিশালী দেশ, বাংলাদেশ দুর্বল দেশ। ভারত সবসময় বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চায়।
ফারুক আহমাদ আরিফ: বাংলাদেশ দুর্বল না ছোট দেশ। দুর্বল বললে ভিন্ন দিকে চলে যায়।
বিজয় কৃষ্ণ নাথ: না, সে অর্থে না। শিক্ষা-দীক্ষা এসব ব্যাপারে অনেক দুর্বল। এখানে টেকনোলজি নাই। ইনডাস্ট্রি নাই। কন্সট্রাকচার ইনডাস্ট্রি ছাড়া কিছু নাই এদেশে। বিগ ইনডাস্ট্রি নাই। আমাদের দেশে বিরাট ইনডাস্ট্রি। কি নাই সেখানে? পৃথিবীর থার্ড লার্জেস্ট ইকোনোমি হচ্ছে ভারতবর্ষের। আর গত ৪ বছরে ভারত বিদেশ থেকে এক পয়সা ঋণ নেয়নি। সাহায্য নেয়নি। এমনকি সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছে। কেরালার বন্যায় সাহায্য দিতে চেয়েছিল আরব। সরকার নেয়নি। সৌদি বলেছিল আমরা ৭ শ কোটি ডলার দিব। মোদি বলছিল আমরা নেব না। আমাদের সম্পদ আছে। আমরা ভিখারী না। হা হা। ইউ আর নট ভিগার। আমাদের সম্পদ দিয়ে আমরা মোকাবেলা করবো।