Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভোলার অধিকাংশ মুড়ির কারখানা

এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৬ AM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৬ AM

bdmorning Image Preview


অপরুপ সৌন্দয্যের লীলাভূমি প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ দ্বীপজেলা ভোলা। বর্তমানে ভোলা শহরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও কৃষি নির্ভর মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা। কিন্তু এরই মধ্যে ভোলাতে পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকা সত্বেও জ্বালানির অভাবেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিছু শিল্পকারখানা।

যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও প্রাকৃতিক জ্বালানির অভাব বৃদ্ধি পাওয়া এবং গ্যাস সাপ্লাই কর্তৃপক্ষের তালবাহানার কারণে অনেক ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা বন্ধের পথে। যার মধ্যে অন্যতম হল ভোলার কৃষিভিত্তিক মুড়ির মিল।

কৃষিভিত্তক ভোলা ধান উৎপাদনে অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত। ভোলায় আবাদ হতো বিভিন্ন প্রজাতির ধান। বর্তমানেও ভোলায় প্রচুর ধান উৎপাদন হয়। ভোলার উৎপাদিত ধানের মধ্যে মুড়ি তৈরির উৎকৃষ্ট ধান উৎপাদন হওয়ার কারণে ভোলা অনেক আগে থেকেই মুড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এক সময় ভেজালমুক্ত মুড়ি ভাজায় জন্য ভোলার অনেক সুনাম ছিল।

ভোলার বাপ্তা ইউনিয়নের মুছাকান্দি ও চাচরা গ্রামে ঢেঁকিছাটা চালে তৈরি ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মুড়ি ভাজায় এখনো ভোলার এই ২টি গ্রামের মুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন ভাজা এসব মুড়ি যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। এই দুই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের পেশাই ছিলো মুড়ি ভাজা ও বিক্রি করা। রোজা উপলক্ষে মুড়ির চাহিদা বেড়ে যেতো। আর তাই দিন-রাত নারীদের পাশাপাশি মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত ছিলো পুরুষরাও।

মধ্যবাপ্তা ৫নং ওয়ার্ডের মুছাকান্দি গ্রামের কয়েকশত নারী-পুরুষ মুড়ি তৈরির কাজ করতেন এক সময়। তবে এখন তা আর পাওয়া যায় না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের ব্যবসায়েও লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া। এখন মুড়ি ভাজা হয় মেশিনে। কিন্তু হঠাৎ করেই জ্বালানি তথা লাকরি ও কাঠের ভুসির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি ভাজা প্রায় বন্ধের মুখে।

কয়েক বছর আগে ভোলা সদর, বাংলাবাজার, ব্যংকের হাট, লালমোহন, চরফ্যশনসহ আরো আনেক স্থানে একাধিক মুড়ির মিল ছিল। তবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলা সদরে উষামা ফুড প্রোডাক্টস এন্ড মুড়ি মিল ও চরফ্যাশনে হাতে গোনা দুই তিনটি মুড়ি মিল ছাড়া বাকি সবগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে।

ভোলা সদর কালিবাড়ি রোড, ভদ্র পাড়ায় অবস্থিত উষামা ফুড প্রোডাক্ট এন্ড মুড়ি মিলের মালিক মোঃ ফজলুর রহমান দুলাল বলেন, আমি মুড়ি ব্যবসার সাথে জরিত প্রায় ১৫ বছর। আগে আমরা কাঠের ভুসি ও শুকনা কাঠ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করতাম, কিন্তু এখন কাঠের ভুসি ও শুকনা কাঠের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের ব্যবসার খরচের সাথে তাল মিলিয়ে লাভ করতে পারছি না। তবে এখন কাঠের ভুসিও পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, মুড়ি উৎপাদনের জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা হল গ্যাস। কিন্তু সিলিন্ডার গ্যাস কিনে আমাদের ব্যবসায় লাভ করা মোটেও সম্ভব নয়। ভোলা এখন প্রাকৃতিক গ্যাসে ভাসছে। কিন্তু আমরা সুন্দরবন গ্যাস সাপ্লাই অফিসে বাণিজ্যিকভাবে তথা কারখানায় নতুন সংযোগ এর জন্য কাগজ-পত্র জমা দিয়েছি কিন্তু তাতে কোন সুরহা হচ্ছে না। তাই প্রভাব পরছে মুড়ির দামের উপর। যার ফলে ১ টাকার মুড়ি বিক্রয় করতে হচ্ছে ৫ টাকায়। আমরা ৫০ কেজি চাল ক্রয় করি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে।

তিনি আরও বলেন, এক কেজি চাল থেকে ৭৫০ গ্রাম মুড়ি উৎপাদন হয়। এই চাল থেকে মুড়ি ভাজতে আমার ৫০ কেজির বস্তায় খরচ হয় ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। বাজারে চিকন মুড়ি নামে যে মুড়ি চলে তা পাইকারি বিক্রয় করি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা খুচরা বিক্রেতারা তা বিক্রয় করে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে। ভোলার স্থানীয় মুড়ি মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারের বকেয়া টাকা উঠানোর জন্য আমাদের বাজার ধরে রাখার সুবিধার্থে কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলাসহ আশপাশের জেলা শহর থেকে অধিক টাকা দিয়ে মুড়ি আমদানি করতে হয় এবং তা স্বল্প লাভে বাজারে বিক্রয় করতে হয়। আগে আমরা ভোলা থেকে বিভিন্ন জেলায় মুড়ি রপ্তানি করতাম এখন জ্বালানির সংকটের কারনে আমদানি করতে হচ্ছে।

তিনি জানান, ভোলার সকল মুড়ি মিল মালিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসন এর কাছে জোর দাবি রইল অতি দ্রুত আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য। তাহলে আমরা মুড়ির পুরোনো ব্যবসাটা ধরে রাখতে পারবো। ভোলাবাসিকে সতেজ ও তাজা মুড়ি দিতে পারবো।

খুচরা মুড়ি বিক্রেতা লক্ষণ চন্দ্র দে জানান, আমরা পাইকারদের কাছ থেকে মুড়ি ক্রয় করে খুচরা মুড়ি বিক্রয় করি। মোটা মুড়ি কেজি প্রতি কিক্রয় করি ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। আর চিকন মুড়ি বিক্রয় করি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। আমাদের ভোলায় সকল মুড়ির মিলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভোলার বাহিরে পাইকার থেকে মুড়ি ক্রয় করি এবং তা খুচরা বিক্রয় করি। ভোলায় যখন মিলগুলি ছিলো তখন মুড়ির দাম ছিলো সীমিত। ভোলা শহরের মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিল মালিকদের পাশাপাশি আমরা মুড়ি বিক্রেতারা বিপাকে পরেছি।

Bootstrap Image Preview