Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কালীগঞ্জে সাইকুল হত্যা; পোস্টমর্টেমের কাগজ বলে চার্জশিটে স্বাক্ষর নেন পুলিশ 

সোহেল আহমেদ খান, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৩ AM
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৩ AM

bdmorning Image Preview


গাজীপুরের কালীগঞ্জের আলোচিত সাইকুল হত্যাকাণ্ডের তথ্যে ৩নং আসামির জবানবন্দিতে পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্থানীয় প্রভাবশালী জালাল উদ্দিন জালুর নাম উঠে আসলেও রহস্যজনক কারণে চার্জশিট থেকে তা বাদ পড়েছে। একইভাবে বাদ পড়েছে ওই পরিকল্পনাকারীর ছেলে মাসুদের নামও। এমনকি ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলাল উদ্দিন বদলি হওয়ার পর পেছনের তারিখ উল্লেখ করে চার্জশিট দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী মোসাঃ রোকেয়া বেগম।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপারের কাছেও একটি অভিযোগ করেছেন তিনি। গতকাল সোমবার সকালে মামলার বাদী সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার বাদীর অভিযোগ, চলতি বছরের ২৯ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই আলাল উদ্দিন তাকে থানায় ডেকে নেয়। এ সময় একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিসের কাগজ জানতে চাইলে ওই এসআই বলেন, লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আনতে আবেদনে তার (বাদীর) স্বাক্ষর প্রয়োজন। এরপর তিনি স্বাক্ষর দেন। পরে তিনি জানতে পারেন ওই কাগজটি ছিল চার্জশিট জমা দেয়ার বিষয়ে বাদীকে অবহিতকরণ নোটিশ।

এসময় রোকেয়াকে এসআই আলাল জানান, ২০ আগস্ট তিনি বদলি হয়ে গেছেন। তবে এই থানায় তিনি আবার আসবেন। এ মামলার তদন্ত কাজ তিনিই শেষ করবেন। বদলি হওয়ার পর পেছনের তারিখ উল্লেখ করে তিনি চার্জশিট জমা দেন। বাদী আরো জানান, নোটিশে ২৯ আগস্ট তার স্বাক্ষর নিলেও তা ১৬ আগস্ট উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানিয়ে তিনি গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করছেন।

এ মামলার তদন্ত কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাদী রোকেয়া বেগম আরো বলেন, মামলার ৩নং আসামি আল-আমিন আদালতে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে জালাল উদ্দিন জালুর নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আল-আমিনের জবানবন্দির পর পুলিশ জালুকে আটকও করে। কিন্তু আল-আমিনের জবানবন্দিতে আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে দায়সারাভাবে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা কী এটা তদন্ত না করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চার্জশিট জমা দিয়েছে ওই এসআই। 

সূত্র জানায়, সাইকুল হত্যা মামলার আসামি আল-আমিনের জবানবন্দিতে পরিকল্পনাকারী হিসেবে জালুর নাম উঠে আসে। একই জবানবন্দিতে জালুর ছেলে মাসুুদসহ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করে আল-আমিন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসআই আলাল উদ্দিন চার্জশিট থেকে জালু ও তার ছেলের নাম বাদ দেন। তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার আগেই ওই এসআই’র বদলি হয়। তারপরও তিনি পেছনের তারিখ দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। জমার তারিখ ১৯ আগস্ট উল্লেখ করা হলেও আদালতের জিআর শাখায় চার্জশিটটি ১১ দিন পর অর্থাৎ ৩০ আগস্ট জমা হয়। জিআর শাখা থেকে আদালতে ধার্যের তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর। অনিবার্য কারণে বিচারক চার্জশীট গ্রহণ করা বা না করার শুনানী করতে পারেনি। পরবর্তীতে পূনরায় ধার্যের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

জানা গেছে, আলোচিত সাইকুল হত্যা মামলার ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু ওই মামলার ২নং ও ৩নং সাক্ষী এ মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অথচ ওই এসআই ১৬১ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করে চার্জশিটে সংযুক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে মামলার ২নং সাক্ষী আবদুল গণি প্রতিবেদকে বলেন, তাকে সাক্ষী করা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। তাছাড়া এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে তার কোনো ধারণাও নেই বলে জানান তিনি। ৩নং সাক্ষী আজগর আলী বলেন, তাকে সাক্ষী করা হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। তবে পথের ধারে সাইকুলকে গুরুতর আহত দেখে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এরচেয়ে বেশি কিছু তার জানা নেই।

মামলার ৩নং আসামি আল-আমিন বলেন, সাইকুলকে মারা হবে এমন পরিকল্পনার কথা তিনি জানতেন। আর এ কারণে ঘটনার পর জালু তাকে ওই মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ১০ বছর ধরে তিনি জালুর তোয়ালে কারখানায় কাজ করছেন। এসআই আলাল এজাহারভুক্ত আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। তা দিলে এজাহারভুক্ত আসামিদের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দেবেন। টাকা না পেয়ে তিনি মনগড়া গল্প তৈরি করে চার্জশিট দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন জালুকে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে আগ্রহী নয়। পরে তার মুঠো ফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলাল উদ্দিনের সঙ্গে মুঠো ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুবকর মিয়া এ ব্যাপারে প্রতিবেদকে বলেন, তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বাদীর যদি তা পছন্দ না হয় তবে তিনি আদালতে না রাজী দিতে পারবেন। 

Bootstrap Image Preview