Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কালের বিবর্তনে স্মৃতিতে ঢাকা পড়েছে ঢেঁকি!

এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:০৯ AM
আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:০৯ AM

bdmorning Image Preview


গ্রাম বাংলার তরুণী-নববধূ ও কৃষাণীদের কণ্ঠে ‘ও বউ চাল ভাঙ্গে রে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, নতুন চাল ভাঙ্গে হেলিয়া দুলিয়া, ও বউ চাল ভাঙ্গে রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ এ রকম গান আর শোনা যায় না। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষাণীদের ঘরে ধানের নতুন চাল ভাঙ্গা বা চাল গুঁড়া করা, আর সে চাল দিয়ে পিঠা, পুলি, ফিরনি, পায়েশ তৈরী করার ধুম পড়ে যায়। এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গে আটা তৈরীর সময় গ্রাম্য বধূরা গান গাইতে থাকেন।

চারদিকে পড়ে যায় হৈ-চৈ। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন যেন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আগের মত আর চোখে পড়ে না। এক সময় ছিল ঢেঁকি গ্রাম জনপদে চাল ও চালের গুঁড়া-আটা তৈরীর একমাত্র মাধ্যম। বধূরা কাজ করতো গভীর রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত। এখন ঢেঁকির সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তালা উপজেলায় ঢেঁকির শব্দ আর নেই। ফলে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ জনপদের কাঠের তৈরী ঢেঁকি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানেও ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে। তবুও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ বাড়ীতে ঢেঁকি রাখলেও তারা ব্যবহার করছে না। তবে আবার কেউ কেউ দরিদ্র নারীদের দিন মজুরী দিয়ে ঢেঁকিতে ধান-চাল বা আটা তৈরী করতে দেখা গেছে। সেখানে একটু হলেও ধুপধাপ শব্দ শোনা গেছে। ঢেঁকি শিল্প হলেও এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।

এক সময় ঢেঁকি শিল্পের বেশ কদর ছিল। যখন মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে চিড়া-আটা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে কৃষকের ঘরে এখন আর ঢেঁকি চোখে পড়ে না। তেল-বিদ্যুৎ চালিত মেশিনদিয়ে ধান ও চাল ভাঙ্গার ফলে ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। সে সময়ে কবি-সাহিত্যিকগণ ঢেঁকি কে নিয়ে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন। আর ঢেঁকি ছাঁটা আউশ চালের পান্তা ভাত পুষ্টিমান ও খেতে খুব স্বাদ লাগতো। বর্তমান প্রজন্ম সে স্বাদ থেকে বঞ্চিত। প্রাচীনকালে ঢেঁকির ব্যবহার বেশী হলেও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলার ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে।

গাবতলী কাগইলের দাসকান্দি গ্রামের বাউল গায়ক বাদশা বয়াতি জানান, ঢেঁকি নিয়ে বহু গান গেয়েছি। এখন ঢেঁকি নেই বহু গ্রামীণ গান আর গাওয়া হয় না।

সরজমিনে তালা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম গুলতে ঘুড়ে ঢেঁকির দেখা মেলেনি। তবে গ্রামের অনেকের মুখে শোনা গেছে আগে অমুকের বাড়িতে ঢেঁকি ছিলো এখন আর নেই । 

তালার সদরে মো: আয়শা সুলতানা আশা জানান, ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে সে আটায় পিঠা-পুলি ও পায়েশ তৈরী করে নতুন স্বামীকে খাওয়াবো, কিন্তু কোথাও ঢেঁকির সন্ধান পাচ্ছি না। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে। তবে ঢেঁকি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। সে জন্য এ ঢেঁকি শিল্প রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য সকলের সহযোগিতা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

 

Bootstrap Image Preview