Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ট্যুরের টাকার জন্য নাতি-নাতনিদের পরিকল্পনায় নানা খুন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৪৭ PM
আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৪৭ PM

bdmorning Image Preview


পরীক্ষা শেষে ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল দুই ভাই-বোন আনিকা তাবাসসুম ও শাহাদাত মুবিন আলভীর। প্রয়োজন বেশ কিছু টাকার। এর জন্য পুরান ঢাকার খাজে দেওয়ান রোডের বাসিন্দা নানা হাজি মনসুর আহম্মেদের জমানো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। প্রায় দুই মাস সময় নিয়ে এই পরিকল্পনা করা হয়। এতে আনিকার অনুরোধে যুক্ত হন তাঁর বন্ধু রাজু। রাজু পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁর ভাই রায়হান ও বন্ধু সাঈদকে সহযোগী হিসেবে ভাড়া করেন ৩০ হাজার টাকায়।

ঘটনার দিন একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় সেখানে মনসুর আহম্মেদ বাদে পরিবারের সবাই দাওয়াতে যান। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য মনসুর আহম্মেদের বাড়িতে ঢোকেন রায়হান ও সাঈদ। আগে থেকেই বাড়ির মূল দরজা ও দোতলার ফ্ল্যাটের নকল চাবি বানিয়ে রেখেছিলেন আনিকা। ঢাকা ডেন্টালের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা তাঁর নানাকে চেতনানাশক (সিডেটিভ ইনজেকশন) পুশ করে অচেতন বানিয়ে টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ইনজেকশন পুশ করার সময় মনসুর আহম্মেদ ধস্তাধস্তি ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁর মাথায় আঘাত করেন রায়হান ও সাঈদ। ইনজেকশন পুশ করা ও মাথায় আঘাত পাওয়ার একপর্যায়ে তিনি মারা যান বলে ধারণা করছে পুলিশ। 

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বকশীবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে চকবাজার থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরে বুধবার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সেদিন মনসুর আহম্মেদের ঘর থেকে ৯২ হাজার টাকা খোয়া যায়। এর মধ্যে ৬২ হাজার টাকা আনিকার বকশীবাজারের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।’ 

ঘটনার দিন খাজে দেওয়ান রোড ও বিয়ের অনুষ্ঠান চান কমিউনিটি সেন্টারের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রথমে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এসব ফুটেজে দেখা যায়, রায়হান ও সাঈদ বাড়ির ভেতরে থাকা অবস্থায় বাইরে ছিলেন রাজু। মুখে মাস্ক পরে, কানে হেডফোন লাগিয়ে পুরো ঘটনায় ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করেন তিনি। একপর্যায়ে রাজু বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকা আলভীকে তাঁর নানার ঘরে উপস্থিত থাকতে বলেন। এরপর আলভী সেখানে যান। তখন রায়হান আর সাঈদ মনসুর আহম্মেদকে মারধর করতে থাকেন। রাজু তাঁর নানার ড্রয়ারে থাকা টাকা নিয়ে বাকি দুজনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। 

যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, মূলত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই মেয়ের ঘরের নাতি-নাতনিদের পরিকল্পনায় ঘরে ঢুকেছিলেন গ্রেপ্তারকৃতরা। কিন্তু ঘটনাক্রমে পরিস্থিতে পড়ে তাঁরা হত্যাকাণ্ড ঘটান। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে মনসুর আহম্মেদের পরিবারের সবাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। অসুস্থ থাকায় তিনি বাড়িতে একা অবস্থান করছিলেন। রাত ১২টার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা ফিরে এসে তাঁকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে কাপড় গুঁজে দেওয়া এবং অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। তাঁর মাথা ও নাকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। অচেতন দেহের পাশে পড়ে ছিল একটি ব্যবহৃত সিরিঞ্জ। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত মনসুর আহম্মেদের বড় ছেলে শনিবার রাতে একটি হত্যা ও দস্যুতার মামলা দায়ের করেন। সেখানে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও আড়াই লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করা হয়। পুরো হত্যাকাণ্ডটির পরিকল্পনা করেন মনসুর আহম্মেদের মেয়ে উজমান আহমেদের দুই সন্তান আলভী ও আনিকা। 

এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মনসুর আহম্মেদের পাশে পড়ে থাকা সিরিঞ্জের সূত্র ধরে আগায় চকবাজার থানার পুলিশ। ছয় দিন অভিযান চালিয়ে হত্যা ও চুরির সঙ্গে যুক্ত শাহাদাত মুবিন আলভী, আনিকা তাবাসসুম, রাজু, সাইদ ও রায়হানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

Bootstrap Image Preview