মোবাইল ফোনে কল করে স্কুল ছাত্রীকে দিনের পর দিন যৌন হয়রানি করে আসছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক। গণিত শেখানোর নাম করে তাকে মোবাইল ফোনে বাসায় ডেকেছেন তিনি, আপত্তিকর দাবি করার পাশাপাশি সুবিধা দিলে মাসিক ফি সহ সব খরচ বহন করবেন বলেও প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। অশালীন এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকায় সাধারণের মাঝে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। শিক্ষকের এমন কথোপকথনে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষকের এমন মনোভাবে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। ফোনো রেকর্ড টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর, লুকোচুরিতে ব্যস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ, একই সাথে এলাকা ছেড়েছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুক সুনামগঞ্জে হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সাথে সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহীন উদ্দিনের ফোনালাপ ভাইরাল হয়। যেখানে শাহীন নামের ওই শিক্ষক দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে শোনা গেছে ফোনালাকালে ঐ শিক্ষক ছাত্রীকে করুচিপূর্ণ নানা ইঙ্গিত প্রধান করেন। ওই ছাত্রী নানাভাবে আপত্তিকর এসব কথা এড়িয়ে যেতে চাইলেও বার বার অশালীন কথার মাধ্যমে প্রলোভন দিতে থাকেন শিক্ষক, পাশাপাশি এ বিষয়ে কাউকে না জানাতেও অনুরোধ করেন অভিযুক্ত শিক্ষক শাহীন।
লোক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বজনরা নিজেদের আড়াল করলেও এই রেকর্ড টি ছড়িয়ে পরলে ক্ষোভে ফুসে ওঠেন বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। এই ঘটনায় দ্রুত বিচার দাবি করেন তারা। শিক্ষকের এমন কান্ডে শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার (১২ জানুয়ারি) এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছেন স্থানীয় অভিভাবক ও স্থানীয়রা। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করছে। অভিলম্বে তাকে অপসারণ না করা হলে আন্দোলনের ডাক দেয়া হুশিয়ারী দিয়েছেন অভিভাবকমহল।
শিক্ষার্থী সালমান তালুকদার বলেন, আমার জানা মতে শাহিন উদ্দিন স্যার খুবই ভালো মানুষ ছিলেন, স্যারকে নিয়ে এরকম কল্পনা জিবনেও করিনি, একজন শিক্ষক হয়ে এত জঘন্যতম একটা অপরাধ কীভাবে করলেন তিনি। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মাজিদ বলেন, গত ২৫ বছরে এর বেশি সময় ধরে আমাদের এই স্কুলে শাহিন সাহেব শিক্ষকতা করছেন, তিনি আমাদের মনে আজ যে আঘাত দিয়েছেন তা খুব কষ্টদায়ক, শাহিন সাহেবের কাছ থেকে এরকম খারাপ পাওনা আসে করিনি, আমার মেয়ে এবং ভাতিজিও এই স্কুলে লেখাপড়া করে,তাদের কোন নিরাপত্তা্র আসায় কালথেকে এই স্কুলে দিবো? তাকে যদি অপসারণ না করা হয়। তাহলে আমরা গ্রামের মুরুব্বিরা আন্দোলনের ডাক দিবো।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ে ছোট মানুষ, সে তেমন কিচ্ছুই বুঝে না, আমরা গ্রামের সবাই স্যারকে খুবই সম্মান করতাম, কিন্তু সেই স্যার নাকি আমার মেয়ের জিবন নষ্ট করতে লাগলো, এখন মামলা করার মতো আমাদের সাদ্যও নেই। আমি সরকারের কাছে ওই শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শাহীন উদ্দিনের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এব্যাপারে হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহোরাব উদ্দিনকে বুধবার সকাল ৯টায় কল দিলে তিনি জানান তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন, কিন্তু ঘন্টাখানেক পর প্রধান শিক্ষক সহোরাব উদ্দিনকে হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই দেখা যায়। এঘটনার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কিছু না বলেই স্কুলের পেছন দিকে পালিয়ে যেতে থাকেন প্রধান শিক্ষক। এসময় শিক্ষক সহোরাব উদ্দিনকে অনুসরণ করে ছুটে থাকে এ-প্রতিবেদক। নিজেকে ক্যামেরা থেকে আড়াল করতে দ্রুত সটকে পরার চেষ্টা করছেন তিনি। কেননা তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষক- ছাত্রীর ফোনালাপ ছড়িয়ে পরেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অবশেষে হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহোরাব উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে ভার্সিটিতে লেখাপড়া করে, সে আসছে তার সাথে দেখা করার জন্যে দ্রুত যাচ্ছিলাম। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেকর্ড শিক্ষকের কিনা তা তদন্ত করতে হবে। এ ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকে আজকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটনার পর এলাকায় নেই, তিনি অসুস্থ্য বলেও দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো জানিনি। খোঁজ নিয়ে এবং তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।