অর্ডার দেওয়া পণ্য বুঝে না পেয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেছেন ক্রেতারা।
গতকাল সকালে অর্ধশতাধিক ক্রেতা কার্যালয়টিতে উপস্থিত হন। তবে কার্যালয়টি বন্ধ ছিল। সেখানে ইভ্যালির কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। তখন সমবেত ক্রেতারা সেখানে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষুব্ধ ক্রেতাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন তারা।
বিক্ষুব্ধ এক ক্রেতা জানান, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও পণ্য না পেয়ে তারা ইভ্যালির কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হন। কিন্তু কার্যালয় বন্ধ পান এবং সেখানে ইভ্যালির কাউকে পাননি। এ সময় কয়েকজনের সঙ্গে ওই কার্যালয়ে কর্মরত গার্ডদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
এদিকে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালি ডট কমের সদস্যপদ স্থগিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ই-ক্যাব। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে ই-ক্যাব জবাব চেয়েছে, ‘কেন ইভ্যালির সদস্য পদ বাতিল করা হবে না?’ ইভ্যালির জবাব পেলে এ ব্যাপারে অ্যাকশন নেবে ই-ক্যাব।
ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, গত বুধবার (১৪ জুলাই) এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্সপেকশন রিপোর্ট, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত রিপোর্ট, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রিপোর্ট এবং হাজার হাজার গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটা মূলত একটা শোকজ।
শাহাব উদ্দিন আরও বলেন, ই-ক্যাবের গঠনতন্ত্রের ৯(ডি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে চাই, তবে তার আগে এটা তাদের জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ। জানতে চাই, অভিযোগগুলোর ব্যাপারে তারা কী বলতে চায়।
ই-ক্যাব মনে করে, ইভ্যালির এসব আচরণ সার্বিকভাবে দেশের ই-কমার্স খাতের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনলাইন কেনাকাটায় মানুষের আস্থা কমে যাবে। এই খাতের যেসব কোম্পানি বিধি অনুযায়ী কাজ করছে, ইভ্যালির কারণে তারাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
গ্রাহক ধরার কৌশল হিসেবে অফারের ক্ষেত্রে ‘আগ্রাসী’ নীতি গ্রহণ করে ইভ্যালি। আদতে যেটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকা দামের পণ্য কিনলে পণ্যের সঙ্গে পাওয়া যাবে আরো ১৫০ টাকা! এসব অফার দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ে অধিকাংশ গ্রাহক। পরে দেখা যায়, বিষয়টা মোটেও তা নয়।
ক্যাশব্যাক নয়, তারা আসলে গ্রাহককে একটা ভাউচার দেবে। সেই ভাউচার দিয়ে আবার তাদের কাছ থেকেই পণ্য কিনতে হবে। অভিযোগ আছে- মূল পণ্য, যেটা গ্রাহক অর্ডার করেছিলেন, সেটা দেওয়ার খবর নেই কিন্তু ওই ভাউচার দিয়ে তাদের কাছ থেকে এক প্রকার বাধ্য করে পণ্য কিনিয়ে নিচ্ছে।
দিনের পর মাস যায়, গ্রাহকের পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় না, এমন অভিযোগ অসংখ্য। এ ব্যাপারে তাদের যেমন নীতিমালা নেই, সরকারও এ সংক্রান্ত কোনো আইন তৈরি করেনি। সেই সুযোগ নিয়ে ‘দিচ্ছি, দেব’ বলে ইভ্যালি গ্রাহকদেরকে হয়রানি করে থাকে। অনেকে বলছেন, এটা একটা কৌশল। টাকা নিয়ে তারা তাদের ব্যবসায় লগ্নি করে।