প্রায় দুই বছর আগে ছোট মেয়ে কঙ্কনের আবদার মেটাতে লিলিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন বগুড়া জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান।অতি অল্পদিনে লিলি পরিবারের সবার কাছে প্রিয় ও আদরের হয়ে উঠে।পরিবারের সবার কাছে প্রিয় সেই লিলি মা হবেন আর সেই কারণে তোড়জোড় শুরু করে তাকে নেয়া হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্লিনিক অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে লিলির সাতটি বাচ্চা প্রসব করানো হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বরে রাজশাহীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সাতটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে নগরের কাজীহাটা এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমানের পোষা কুকুর লিলি। জানা গেছে এটিই রাজশাহীতে কুকুরের সিজারিয়ান অপারেশন প্রথম।
অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটেরিনারি ক্লিনিক অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি ভ্যাটেরিনারি অফিসার ডা. হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে গর্ভবতী কুকুরটিকে তার মালিক নিয়ে এসে জানান, বাচ্চা হওয়ার পর কুকুরটির বন্ধ্যাকরণ করে নিতে চান। কারণ পরবর্তীতে কুকুরটির কাছ থেকে তাঁরা আর বাচ্চা নিতে চান না। ৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কুকুরটিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিলির সাতটি বাচ্চা প্রসব করানো হয়।
কুকুরটির মালিক আতিকুর রহমান বলেন, আগেরবার কুকুরটি বাগানে বাচ্চা দিয়েছিল। তখন তার ছোট মেয়ে বাগানেই লিলির পরিবারকে খাবার দিত। বাচ্চাগুলোকে একসময় পাশের বাড়ির ছেলেরা মেরে ফেলে। তারপর থেকে লিলি যেন উন্মাদ হয়ে যায়। খাওদা-দাওয়া ছেড়ে সারাদিন কান্নাকাটি করত। একপর্যায়ে প্রতিশোধ নিতে সে পাশের বাড়ির মুরগি মারা শুরু করল। লিলি মুরগি মারলেও পোষা কুকুরের মালিক হিসেবে তাঁকে ক্ষতিপুরণ দিতে হতো। কুকুরটির বাচ্চা হলে আবার একই ঝামেলায় পড়তে হবে ভেবে তিনি বন্ধ্যাকরণের জন্য এটিকে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগে নিয়ে যান। তখন ভেটেরিয়ানরা পরামর্শ দেন যে বাচ্চা প্রসবের সময় না হলে এ রকম ছোট প্রাণীদের বন্ধ্যাকরণ করা যায় না। তাই এবার বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য ওষুধবাবদ তিন-চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এবারের বাচ্চাগুলো কী করবেন, জানতে চাইলে আতিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিভাগেই বাচ্চাগুলোকে রেখে দেওয়া হবে। যত দিন না বাচ্চাগুলো বড় হচ্ছে, তত দিন ওর মা-ও ওখানে থাকবে। তিনি প্রতিদিনই একবার করে লিলিকে দেখতে যান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেনারি অ্যান্ড সাইয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এসএম কামরুজ্জামান বলেন, মানুষের মতোই প্রাণীর সিজার করে বাচ্চা প্রসব করানোর ঘটনা এখন সচারচর হয়। বিশেষ করে দেশের যে সকল প্রাণী হাসপাতাল বা ক্লিনিগুলোতে সুব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি জানান, গরু-ছাগলের পাশাপাশি বিড়ালের সিজার করে বাচ্চা জন্ম দেয়ার ঘটনা প্রায়শই হয়। সৌখিন মানুষেরা সাধারণত পোষা প্রাণীর সিজার করে বাচ্চা প্রসব করিয়ে থাকেন।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. হুমায়ন কবির বলেন, সিজার করে কুকুরের ৭টি বাচ্চা প্রসব করানোর বিষয়টি অনেকটাই বিরল। রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি প্রাণী হাসপাতালে সিজারের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।