রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিল হলেও বেঁচে আছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী বলেন, ‘খালেদা জিয়া অনেক জটিল অবস্থায় আছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তবে বেঁচে আছেন।‘
এদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি আজ বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। এক কথায় দেশনেত্রীর অবস্থা খুবই খারাপ।‘
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে নানান অসুখে ভুগলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন ক্রিটিকাল বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটির বলছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে। পুরনো অসুখের সঙ্গে একাধিক নতুন ও জটিল উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার রক্তে হিমোগেøাবিন দ্রুত কমে যাচ্ছে। হিমোগেøাবিনের মাত্রা বাড়তে দেয়া হচ্ছে রক্ত। এরই মধ্যে তার লিভার থেকে ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। লিভার জটিলতার কারণে তিনি রক্তবমি করেছেন। শরীরে খনিজ অসমতা চরম আকার ধারণ করেছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দেয়া হচ্ছে ইনস্যুলিন। অক্সিজেনের লেভেল ওঠানামা করায় লাগছে অক্সিজেন সাপোর্ট।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে এভাবেই জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রতিটি মুহূর্ত লড়ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোনো গুজবে কান দেবেন না। তাঁর বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চাইলে আমাকে ফোন করবেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ খালেদা জিয়াকে দেখে এসে বলেন, ‘তিনি কতক্ষণ, কয় মিনিট, কয়দিন বাঁচবেন তা আমি বলতে পারব না। যে কোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারেন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে- রোগমুক্তি কামনায় দোয়া, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মৌনমিছিল।
এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে নিয়ে সোমবার রাত থেকে নানা ধরনের গুজব ছড়াতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব গুজব ছড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা উদ্বেগ দেখা দেয়। পরে চিকিৎসক ও বিএনপি নেতারা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে যেসব কথা ছড়ানো হচ্ছে সবই গুজব। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের কেউ নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, সোমবার রাত থেকেই খালেদা জিয়া খুব বেশি দুর্বল হতে থাকেন। তাঁর শরীরে হরমোনাল অসমতা চরম আকার ধারণ করে। প্রধান ইলেকট্রোলাইট অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ দুর্বলতা। চিকিৎসকের ভাষায় ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে এটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সোমবার রাত থেকে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। কিডনির ক্রিয়েটিনিন বর্ডার লাইন অতিক্রম করেছে। খাওয়া-দাওয়ার রুচিও কম। ডায়াবেটিস ১২-১৩-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। হাসপাতালসূত্র জানান, খালেদা জিয়ার গলার দিকে সেন্ট্রাল ভেনাস ক্যাথেটার লাইন লাগানো আছে, যা চিকিৎসকের ভাষায় বলা হয় সিভি লাইন। রোগীর মাল্টিপল ডিজিজ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেই এটি সংযুক্ত করা হয়। সিভি লাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় রক্তনালি সংযুক্ত করা হয়। এর তিন-চারটি চ্যানেল রয়েছে যার দ্বারা একসঙ্গে সব ধরনের ওষুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত একজন চিকিৎসক জানান, শারীরিক দুর্বলতার মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে তাঁর রক্তবমিসহ শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এতে তাঁর রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে শুরু করে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে দ্রুত রক্ত দিতে চাইলেও শারীরিক দুর্বলতার কারণে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থা দ্রুতই অবনতি ঘটতে থাকলে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সোমবার রাত ১০টার দিকে তাঁর শরীরে রক্ত দিতে সক্ষম হন তাঁরা।