মাদক কাণ্ডে গ্রেফতার বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের বড় ছেলে আরিয়ান খানে। গ্রেফতারের পর আরিয়ানকে গত দুই দিন দীর্ঘক্ষণ ধরে জেরা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (এনসিবি)। সেই জেরার কিছু কিছু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে।
এক শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজি পত্রিকার খবর অনুযায়ী, চার পাতার বয়ানে অনেক কিছু বলেছেন আরিয়ান। বয়ানে এই তারকাপুত্র বলেছেন, ‘আমার বাবা শাহরুখ খান অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন। এই মুহূর্তে একসঙ্গে তিনটি ছবির শুটিং করছেন উনি। আর বাবা এতটাই ব্যস্ত যে অনেক সময় ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য ম্যানেজার পূজার কাছে আমায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়।’
আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে আদালতে বেশ কিছু প্রমাণ পেশ করেছে এনসিবি। এনসিবি আদালতকে জানিয়েছে যে আরিয়ানের মুঠোফোন থেকে বেশ কিছু আপত্তিকর ছবি আর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট তারা উদ্ধার করেছে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে আর্থিক লেনদেনের উল্লেখ আছে। আর এই আর্থিক লেনদেনের চ্যাট থেকে এনসিবি জানতে পেরেছে, যুক্তরাজ্য আর দুবাইয়ে মাদক নিয়েছেন আরিয়ান।
খবর অনুযায়ী, আদালতে শুনানির সময় নাজাল স্প্রে চেয়েছিলেন আরিয়ান। তাঁকে তা দেওয়া হয়েছে। এনসিবির হেফাজতে আরিয়ান, মুনমুন, আরবাজ ছাড়া আরও পাঁচ অভিযুক্ত আছেন। এনসিবি আদালতকে জানিয়েছে যে তাঁদের সবাইকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
৭ অক্টোবর পর্যন্ত আরিয়ানকে এনসিবির হেফাজতেই থাকতে হবে। মাদক-কাণ্ডের অন্য দুই অভিযুক্ত আরবাজ মার্চেন্ট আর মুনমুন ধামেচাকেও ৭ অক্টোবর পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২০ হাজার রুপি জরিমানাসহ কারাদণ্ড হতে পারে।
বিষণ্নতা ঘিরে মান্নাত: মাদকসহ আরিয়ান ধরা পড়ার পর থেকেই বিষণ্নতা ঘিরে ধরেছে যেন মান্নাতে (শাহরুখ খানের বাড়ি)। শাহরুখ-গৌরিকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন সালমান খানসহ অনেকে।
এরমধ্যে শাহরুখ-ভক্তদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটিকে ‘শাহরুখের বিরুদ্ধে আক্রমণ’ হিসেবেও দেখছেন। যার জবাব দিয়েছে ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। এনসিবির জোনাল পরিচালক সামির ওয়াংখেড়ে বলেছেন, শাহরুখের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু নেই।
পিংকভিলাকে ওয়াংখেড়ে আরও জানালেন, ‘গত ১০ দিনে আমরা প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেফতার করেছি। এদের মধ্যে বড় জোর ৪-৫ জন পরিচিত মুখ। এতে কি বলা যায় যে আমরা টার্গেট করে কাউকে ধরেছি?’
সামির আরও জানালেন, ‘যখনই কোনও পরিচিত বা জনপ্রিয় কাউকে গ্রেফতার করা হয় তখনই সেটার মিডিয়া কাভারেজ হু হু করে বেড়ে যায়। অথচ এনসিবি সারা বছরই মাদক কারবারি ও বিতরণকারীদের গ্রেফতার করে আসছে।’
মাদককাণ্ডে প্রমোদতরি থেকে শাহরুখ খানের ছেলের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন আরবাজ মার্চেন্ট নামে তার এক বন্ধু।
তাকে নিয়ে গতকাল (৪ অক্টোবর) রাতভর চলেছে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি। আরবাজকে গাড়িতে নিয়ে রাতেই বেরিয়ে পড়েছিল সংস্থাটি। কোথায় কোথায় নেশার বেচাবিক্রি ও আসর বসে সে স্থানগুলোতে গেছেন তারা। এবার আরিয়ানের জন্য শাহরুখের বাসাতেও মাদক-অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে এনসিবি।
আর এটি হতে পারে আজ (৫ অক্টোবর) রাতেই। সংস্থাটি শাহরুখ-তনয়কে নিয়ে আরও গভীরে তদন্ত চালাতে চায়। এ কারণে সম্ভাব্য অন্যতম জায়গাটি হতে পারে আরিয়ানের বাসা।
এদিকে, শাহরুখপুত্র গ্রেফতারের দু’দিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে এনসিবির হাতে। জানা গেছে, শনিবার পার্টিতে যে মাদক আনা হয়েছিল, তা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধ্যমে কেনা হয়। অন্যদিকে, আরিয়ানের মাদক-জোগানদার শ্রেয়স নায়ারও এনসিবির হেফাজতে।
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর মুম্বাই থেকে গোয়াগামী একটি প্রমোদতরিতে এক মাদক পার্টি থেকে আরিয়ানকে আটক করে এনসিবি। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এনসিবির হেফাজতেই থাকতে হবে আরিয়ানকে।
সামির জানালেন, এ ধরনের পার্টির আয়োজন যারা করে থাকেন তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।