Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে রক্তাক্ত সংঘর্ষের পিছনে দায়ী কারা? পুলিশ, চীনা নাকি বাংলাদেশি শ্রমিক!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৮ PM
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৮ PM

bdmorning Image Preview


চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়  এস আলম গ্রুপের কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছেন আহত পুলিশ ও শ্রমিকেরা। আজ শনিবার সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। আহত শ্রমিকেরা পুলিশকে দায়ী করেছেন। পুলিশের অভিযোগ, বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল ছোড়ায় ঘটনার সূত্রপাত হয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত শ্রমিক মো. জাহেদ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এই সময় চীনা কর্মকর্তারা আমাদের কাছে আসেন। এখানে কাজ করতে হলে কোনো বিরতি নেয়া যাবে না।এই বলে তারা আমাদেরকে মারধর শুরু করেন। তাদের দলে ১০-১২ জন ছিল। একজন চীনা আমাকে লাথিও মারেন। পরে বিষয়টি আমরা অন্য শ্রমিকদের জানাই।’

একই কথা বলেন আরেক শ্রমিক মো. সাজ্জাদ। তিনি জানান, প্রায় সময় চীনা শ্রমিকেরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের নির্যাতন করে। শুক্রবারও কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করেছে চীনারা। এরপর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে থমথমে পরিস্থিতি। পরে শ্রমিকরা আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’

নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে চীনা শ্রমিক-কর্মকর্তার দ্বারা বাংলাদেশি শ্রমিক নির্যাতনের তথ্য আছে পুলিশের কাছেও। বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিককে চীনা শ্রমিক মারধরের ঘটনা আমরা শুনেছি।’

নাম প্রকাশ না করারা শর্তে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়েকজন স্থায়ী শ্রমিক জানান, বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখানকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চীনাদের নির্যাতন। যা ক্ষুব্ধ করে তোলে শ্রমিকদের। দাবি আদায় ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে যোগ দেয় তারা।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে নামের বিদ্যুৎকেন্দ্রে শনিবার সকাল ১১টার দিকে শ্রমিকদের বিক্ষোভে গুলির ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন।

নিহত শ্রমিকরা হলেন আহমদ রেজা, রনি হোসেন, মো. শুভ, মো. রাহাত ও মো. রায়হান। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের ২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে সংঘর্ষে আহত শ্রমিক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে কথা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক দুই ধরনের শ্রমিক আছে জানিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০১৯ সাল থেকে চুক্তিভিত্তিক বৈদ্যুতিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকরা এখনও মার্চের বেতন পাননি। গত ১০ এপ্রিল মার্চের বেতন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেয়া হয়নি। আগামী ২০-২২ এপ্রিল বেতন দিবে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।’

জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে অসন্তোষ চলছিল। পরে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেয় এসব দাবি নিয়ে তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। এ জন্য সব শ্রমিক শনিবার সকালে কারখানায় হাজির হন। পাশাপাশি শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন।’

বাঁশখালীর বাসিন্দা ও কারখানাটির শ্রমিক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার দাবিতে শুক্রবারও কারখানার শ্রমিকরা মিছিল ও বিক্ষোভ করে। রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। কিন্তু এতে আশ্বস্ত হতে পারেনি শ্রমিকরা। শনিবার সকাল ৬টার দিকে তারা কারখানায় জড়ো হন। এরপর বিক্ষোভ শুরু করেন।

কারখানার আরেক শ্রমিক প্রিয়তম সূত্রধর বলেন, ‘প্রতিমাসে দেরিতে বেতন দেয়া হয়। শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন দেয়ার জন্য এর আগেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। শুক্রবার কয়েকজন মুসলিম শ্রমিককে মারধর করে চীনারা। মুসলিম শ্রমিকরা সেহেরি, ইফতার ও নামাজের সময় দাবি করলেও তা দিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। এসব কারণে সংঘর্ষ হয়।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাসও পান শ্রমিকরা। কিন্তু শনিবার সকালে তারা আবার আন্দোলন শুরু করেন।

ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সংঘর্ষের সময় শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসী যোগ দিয়েছিল।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছিল। সকালে এসব দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা হোসাইন রানা বলেন, ওই বিদ্যুকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব রয়েছে চায়নার দুইটি কোম্পানি। শনিবার কিছু শ্রমিক দাবি দাওয়া নিয়ে চায়না কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে যায়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা চায়না নাগরিকদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ চায়না নাগরিকদের রক্ষা করতে গিয়ে গুলি করে।

সূত্রঃ নিউজবাংলা

Bootstrap Image Preview