Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোহিঙ্গাতে প্রাণচঞ্চল ভাসানচর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৯:০১ AM
আপডেট: ০৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৯:০১ AM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


আগের ভাসানচরের সঙ্গে বর্তমানের ভাসানচরের ছবিটাকে ঠিক মেলানো যাবে না। ভাসানচর দুটো দৃশ্য একেবারেই আলাদা। রোহিঙ্গাদের কারণে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ভাসানচর।

গত ৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি আসা পর্যন্ত এতটা প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না বঙ্গোপসাগরের নতুন চরটিতে।

কিন্তু এক মাসের কম সময়ের মধ্যে নতুন যাওয়া ১৮০৪ জন রোহিঙ্গা বেশ মানিয়ে নিয়েছে নতুন পরিবেশে। রোহিঙ্গাদের আবাসনকে ঘিরে ব্যাপক  প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার ওয়্যারহাউস পেরিয়ে খানিকটা পথ পেরোলেই দেখা যাবে সারি সারি দোকান।

আবার ধাপে ধাপে যে গুচ্ছ বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে, তার মাঝের সড়কেও বসে গেছে দোকান। রোহিঙ্গাদের ঘরগুলোর সামনের দোকানে এক তরুণ পরোটা ভাজছেন। আর কেউ কেউ টেবিলে বসে চিনি দিয়ে পরোটা খাচ্ছেন। কেউ কেউ পরোটা-চিনির প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জন্য।

অথচ মাত্র মাসখানেক আগে এসব রোহিঙ্গা এসেছে। এদের মধ্যে একজন দিলদার বেগম। কক্সবাজারের কুতুপালং শিবিরে থাকতেই কাপড় সেলাই করতেন। তিনি জানান, ২৬ দিন ধরে তিন সন্তান- হেদায়েত, আজিত আর হাসিনাকে নিয়ে স্বস্তিতেই আছেন।আশা করছেন বাকি সময়টাও ভালোই কাটবে।

মায়ানমারে ফিরবেন কিনা, জানতে চাইলে দিলদার বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী থাকে যুক্তরাস্ট্রে, আমি মায়ানমার যাব কেন! গেলে তো যুক্তরাস্ট্রেই যাওয়া উচিত। প্রায় প্রতিদিন স্বামীর সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। সামনেই কাঠমিস্ত্রি আবুল হোসেন একটি আলমারি বানাচ্ছেন। তিনি জানান, ছেলে আরাফাতের জন্য পানের দোকানের একটি শোকেস বানিয়ে দিচ্ছেন।

রাখাইনের মংডু থেকে ১১ বছর আগে কক্সবাজারে আসেন আবুল হোসেন। শিবিরের জীবনের অনিশ্চয়তা, পাহাড়ের ঢালুতে থেকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, আয় কমে যাওয়া- সবকিছু ভেবেই স্ত্রী আর ছয় সন্তান নিয়ে তিনি ভাসানচরে এসেছেন। দেখা গেল, দুই হাজার রোহিঙ্গার জন্য আলু দিয়ে মুরগির মাংস আর সাদা ভাত রান্না হচ্ছে।  

আগেরবারের মতো এবারও যেসব রোহিঙ্গা ভাসানচরে এল, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের রান্না করা খাবার দেওয়া হবে। আবুল কাশেমের কাছ থেকে মাছ কিনছিলেন হামিদা বেগম। জানালেন, কক্সবাজারের তুলনায় মাছের দাম ভাসানচরে কম। ১৩০ টাকা কেজি দরে তেলাপিয়া মাছ কিনলেন তিনি।

২০১৭ সালের আগস্টের নারকীয় ঘটনার সময় হামিদার স্বামী নিহত হন মায়ানমারের সেনাদের হাতে। শুক্রবার পর্যন্ত তাদের রান্না করা খাবার দেওয়া হবে। এরপর প্রতিটি পরিবারকে রেশন, চুলা, গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হবে।

সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন কর্মী রোহিঙ্গাদের খাবার তৈরির সঙ্গে যুক্ত। নরসুন্দর সমর চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘তিন বছর আগে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে এখানে এসেছি। আর রোহিঙ্গাদের আবাসনের কাছে এসেছি গত বৃহস্পতিবার।

বাজারে (বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে গড়ে ওঠা দুটি বাজারের একটি) কাজ কমে যাওয়ায় এখানে এসেছি। রোহিঙ্গাদের চুল কাটা আর শেভ করে গড়ে ৬০০ টাকা করে পাচ্ছি। সমর চন্দ্র জানান, চুল কাটতে ৫০ টাকা, ফোম শেভের জন্য ৫০ টাকা আর ক্রিম শেভের জন্য ৩০ টাকা নিচ্ছেন।

গত ছয় দিনে রোহিঙ্গারা তাঁর কাছে মূলত চুল কেটেছে। আর যাঁরা শেভ করেছেন, বেশির ভাগই ফোম দিয়ে করিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview