এটা বরিশাল মেডিকেল এর একটি ওয়ার্ডের একরাতের দৃশ্য। বিছানা নাই, রোগী মাটিতে।
আসন সংখ্যার তিনগুন রোগী , ডাক্তার নার্স তো তিনগুন হয় না।
তাই রোগী যা পাবার কথা তার ৩ ভাগের ১ ভাগ পায়।
মেঝেতে রোগী, মেঝে পরিস্কার কিভাবে হবে?
সুইপারের কাজও ঠিকমতো হয় না।
৩ গুন সিরিঞ্জ , স্যালাইন সেট, ঔষধ লাগে।
তার মানে তিনদিনের সাপ্লাই একদিনে শেষ।
নার্সদের সংকট আরো বেশী। যা দরকার আছে তার ৩ ভাগের একভাগ । ৩ গুন রোগী এলে সেটা হয়ে যায় ৯ ভাগের ১ ভাগ।
মজার বিষয় হলো হাসপাতালের অধিকাংশ বিষয়ে ডাক্তারের কোন কর্তৃত্ব নাই।
তাই চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া ছাড়া তার কিছু করার নাই।
হাসপাতালের প্রশাসনে তার ভূমিকা সীমিত।
এর জন্য ডাক্তার দায়ী না।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার গলদের দায় তার না।
এখানে রোগী ও চিকিৎসক দুজনেই ভিক্টিম।
একা ডাক্তার বসে থাকলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে না।
প্রত্যেক রোগীর বিছানা পাওয়ার অধিকার আছে। তেমনি বেড যা আছে তার চেয়ে বেশী রোগী ভর্তি করা রোগীর প্রতি অবিচার। তাকে অপ্রতুল চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালের বেড বাড়াতে হবে। হাসপাতাল বাড়াতে হবে। এটা কার কাজ?
বিছানা ছাড়া চিকিৎসা দেয়া, মেঝেতে রাখা আর রাস্তায় রাখা একই কথা।
রোগীর প্রতি এই অবহেলা ও অবিচারের দায় কার? ১৬ কোটি মানুষের জন্য প্রতি ১০০০০ এ ০.৬ টি বেড বরাদ্দ আছে। তাদের মধ্যে ১% অসুস্থ হলে , রোগীর সংখ্যা ১০০. তার মানে প্রতি বেডে ৩ থেকে ৪ জন রোগী থাকবেই।বাকি রোগীরা হাসপাতালে এসে মেঝেতেও জায়গা পাবে না।
কার দোষ?
ডাক্তার থাকে না, ডাক্তারকে সাজা দিন।
বেড থাকে না, ওষুধ থাকে না। এটার শাস্তি কাকে দেবেন?
স্বাস্থ্য সেবা মানবাধিকার । এটা কোন রাজনৈতিক বিষয় না। এটা মানুষের প্রাপ্য।
তিনগুন রোগী দেখার ফলে ক্লান্ত চিকিৎসকের ভুল হলে তার দায় কার?
রোগী আর চিকিৎসক দুজনই মানুষ।
তারা দুপক্ষই অবিচারের শিকার।
ডাক্তারের ঘাড়ে দোষ দিয়ে , অদক্ষ স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা একধরণের প্রতারনা।
লেখকঃ ডাঃ আব্দুন নূর তুষার
চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)