Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নাহিদ- শাজাহান এবার মন্ত্রিত্বে নেই কেন?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২৯ PM
আপডেট: ০৬ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


৪৬ জন সদস্য নিয়ে নতুন পুরাতন অনেককে রেখেই গঠিত হতে যাচ্ছে এবারের মন্ত্রিপরিষদ। এবারের মন্ত্রিপরিষদে এসেছে বেশ কিছু নতুন মুখ তেমনি বাদ পরেছেন বেশ কয়েক মেয়াদে মন্ত্রিত্বে থাকা অনেকেই। পুরণদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন তার মধ্যে সব থেকে বেশি আলোচনায় এসেছে যাদের নাম তারা হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রি নুরুল ইসলাম নাহিদ ও নৌ ও পরিবহন মন্ত্রি শাজাহান খান। ঠিক কি কারণে সাবেক অ দাপুটে এই মন্ত্রিরা বাদ পড়েছেন সেসব নিয়ে সাধরন মানুষের মনে কৌতুহলের অন্ত নেই। কিছু বিষয় ধরে আমরা চেষ্টা করেছি কৌতুহলী পাঠকের জিজ্ঞাসা মেটাতে।

নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত নৌমন্ত্রী শাজাহান খান নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। একই মন্ত্রণালয়ে এবার কোনো মন্ত্রী না রেখে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে।

অন্যদিকে প্রশ্নফাঁস আর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সিলেবাস বৃদ্ধি, জেএসসি-পিইসি পরীক্ষা চালুর কারণে ব্যাপক সমালোচিত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও ঠাঁই পাননি মন্ত্রিসভায়। এবার তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ডা. দীপু মনি। এ ছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বিতর্কিত যত মন্তব্য শাজাহান খানের

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তার মন্তব্য নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই ছিল বেশি। সারাদেশে পরিবহন খাতে একের পর এক নৈরাজ্যের পরও বারবার পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ নেয়ায় তিনি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন। নানা ইস্যুতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত শাজাহান খানের পদত্যাগেরও দাবি ওঠে একসময়। তবে নিজের জায়গা ছাড়েননি তিনি।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর বাস চাপায় দুজন প্রাণ হারায়, আহত হয় আরও বেশ কয়েকজন। ওই ঘটনা পর হাসিমুখে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

৩০ এপ্রিল সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে শাজাহান খান বলেন, দুর্ঘটনার জন্য চালকদের সাজা বাড়ানো হলে দুর্ঘটনা কমবে না। তবে দুর্ঘটনা রোধে চালক, পরিবহন মালিক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা বলেন সাজা বাড়ালেই দুর্ঘটনা কমবে, এই কথার সঙ্গে একমত না। তাহলে দেশে কোনো খুন হত না, খুনের সাজা হলো ফাঁসি। তারপরেও কি খুন বন্ধ রয়েছে?’ চালকদের শাস্তি বাড়ানোর বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে শাহজাহান খান ওই সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি বলতে পারেন দুনিয়ার কোথাও দুর্ঘটনা হয় না? সেদিনও তো কয়েকজন, ছয়জন বাংলাদেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল আরব কোনো কান্ট্রিতে, সৌদি আরবে। তাহলে সেই দুর্ঘটনায় কী বলবেন? সেখানে কি ড্রাইভারের ফাঁসি হয়?’ সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ সম্ভব নয়, তা কমাতে সব পক্ষের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

৪ মে ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শুধু চালকদের সচেতন হলে চলবে না, চালকের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীকে সচেতন হতে হবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কেবলমাত্র চালকদের দোষী বলা ঠিক নয়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যাত্রীদেরও খামখেয়ালিপনা থাকে’ বলেন শাজাহান খান।

২০১১ সালের ১৪ আগস্ট মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন। আহত হন তিনজন। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে শাহজাহান খান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকেরা দায়ী নন। অবৈধভাবে লাইসেন্স নেয়া অদক্ষ চালকদের কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের বিষয় নিয়ে যখন দেশবাসী ক্ষুব্ধ, তখন মন্ত্রী এ মন্তব্য করে বসেন।

বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ওই খবরে মন্ত্রী আরও বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যোগ্য চালকদেরই লাইসেন্স দিয়েছে। পরীক্ষার মাধ্যমেই তারা লাইসেন্স পেয়েছেন। তবে দুর্ঘটনা কার হাতে ঘটবে, এটা বলা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত বছরের ১ মে শাজাহান খান বলেন, ‘উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্ঘটনা কম ঘটে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার বাঁকগুলো সরলীকরণ, ফুটওভার ব্রিজ, পাতালপথ নির্মাণের ফলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শাজাহান খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে প্রথমে ৩০৪ ধারায় মামলা নিতে হবে। পরে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবেই ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা নেয়া যাবে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি।

২০১৭ সালের ১ মার্চ তিনি বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে চালকদের পক্ষে সাফাই গেয়ে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে। সমাধান হবে, তবে সময় লাগবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাসচালক নেতারা কোনো নির্দেশনা মানতে চাইছেন না। চালকেরা মনে করেছেন, তারা মৃত্যুদণ্ডাদেশ বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের মতো রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাবেন না। তাই তারা স্বেচ্ছায় গাড়ি চালাচ্ছেন না। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে।

শাজাহান খান বলেন, দুনিয়ার কোথাও দুর্ঘটনার জন্য ফাঁসি বা যাবজ্জীবন দেয়ার আইন বা বিধান নেই। আমি মনে করি, চালকদের তিন বছর শান্তি হওয়া উচিত। সারা পৃথিবীতে এসব অপরাধের জন্য বেশি হলে পাঁচ থেকে সাত বছরের শাস্তি হয়। খুন করা হলে ৩০২ ধারার মামলা করতেই পারে। কিন্তু ফাঁসি দিয়ে বা যাবজ্জীবন দিয়ে খুন বন্ধ করা যায় না।

২৯ জুলাই ২০১৮ রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ১৬ জন দুর্ঘটনায় মারা যায়। সেখানে এত আলোচনা হয় না, শুধু বাংলাদেশেই হচ্ছে। আমি মনে করি যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে ততটুকু শাস্তি পাবে এবং যে শাস্তি পাবে সেই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই।’

‘আপনার নিয়ন্ত্রিত পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের বাসগুলোর রেষারেষিতে রাজধানীতে এমন দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, আহত কিংবা পঙ্গু হচ্ছে। এর দায় শ্রমিক সংগঠনগুলো কিভাবে এড়াতে পারে?’ এ বিষয়ে তিনি বলেন- ‘এ প্রোগ্রামের সঙ্গে কি এটা রিলেটেড? আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রে গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছে। এগুলো নিয়ে আমরা যেভাবে কথা বলি, ওখানে কি এগুলো নিয়ে কেউ এভাবে কথা বলে?’

যেসব কারণে সমালোচিত ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ

২০০৯ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নাহিদ। ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শকদের প্রতিবেদন দেয়ার ক্ষেত্রে ‘সহনশীল মাত্রা’য় ঘুষ খাওয়ার বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ ছাড়া একের পর এক বোর্ড পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, জেএসসি-পিএসসি পরীক্ষা, পাঠ্যপুস্তকে ভুলসহ নানা কারণে সমালোচিত হন তিনি।

২০১৩ এবং ২০১৪ সালে দেশে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নাহিদ সারাদেশে ব্যাপক সমালোচিত হন।

Bootstrap Image Preview