Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারো সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রামের জেলেরা

বশির আলামুন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:১৬ PM
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:১৬ PM

bdmorning Image Preview


দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটানোর পর অবশেষে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার জেলারা। এখন যেন উৎসব চলছে উপকূলীয় এলাকায়। 

এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের বেঁধে দেওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ২৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সোমবার (২৯ অক্টোবর) থেকে সমুদ্রে মাছ শিকারে বাঁধা নেই জেলেদের। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া দেখা দেওয়ার কারণে আবার থমকে গেছে জেলেদের যাত্রা। 

সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকালে নগরীর ফিসারীঘাটে গিয়ে দেখা গেছে এরই মধ্যে মাছ ধরার বোট ও ট্রলারগুলো মেরামত করা হয়েছে। জালের ক্রুটি সারানো হয়েছে।

ফিশিং ব্যবসায়ী আর জেলেরা জানিয়েছেন, প্রায় সব মা মাছই এসময়ের মধ্যে ডিম ছেড়ে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগের দুই মাসে জেলেদের জালে যে হারে ইলিশ ধরা পড়েছিল আগামী কয়েকদিন একই হারে ইলিশ জালে আটকা পড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে নগরীর ফিসারীঘাট ও উপকূলের কয়েকটি ফিশারি ঘাট ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা নৌকা ও জাল মেরামতসহ সবরকম প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে। কয়েকটি ঘাটে দ্বিগুণ শ্রমিক ও মজুরি দিয়ে নৌকা মেরামতসহ জাল মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। অনেকে নৌকায় জাল উঠানোর কাজ করছেন।

জেলেরা জানান, মাছ ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন উপকূলের লক্ষাধিক জেলে। তাদের সবরকম প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। সোমবার থেকে সবাই মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে।

জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞার এই ২২ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত থেকেছেন বেশিরভাগ জেলে। এদের মধ্যে যেসব অসাধু জেলে নদীতে মাছ শিকারে গেছেন তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক হয়ে জেল-জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন। এবছর অভিযানের সফলতা দেখছে মৎস্য অধিদফতর। তাদের ধারণা পর্যাপ্ত পরিমাণ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। চলতি বছরের চেয়ে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।

চট্টগ্রাম ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি নুর হোসেন জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সমুদ্রে নিন্মচাপের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সমুদ্র এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। এরপরও দীর্ঘ অপেক্ষার পর জেলেরা সমুদ্রে যেতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আর সমুদ্রে না গেলে আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি এবার মাছ শিকার ভালো হবে।

তিনি বলেন, সমুদ্র অশান্ত হলেও ভয় নেই জেলেদের। তাদের দু'চোখে এখন কেবল মাছ শিকারের স্বপ্ন। তাই জেলে পাড়ায় এখন উৎসবের আমেজ চলছে। এর সাথে সাথে দাদন ব্যবসায়ীদের উৎপাত বেড়েছে। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। এখানকার প্রায় ৫ হাজার বোট সাগরে ও নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। চট্টগ্রামের বাশঁখালী, আনোয়ারা, সিতাকুন্ড, মিরসরাই, মোট্রা, কক্সবাজরের সদর উপজেলা, টেকনাফ, মহেষখালী, কতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার প্রায় ৬ লাখ জেলে নদীতে ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বিকল্প কোন কর্মসংস্থান নেই। 
সোমবার ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। কেউ কেউ পাথরঘাটা পৌর শহরের পাইকারি মুদি দোকানে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রায় সকল ফিশিং বোটেই ইতোমধ্যে মাছ ধরার জাল তোলা হয়েছে। অনেক জেলে জালের বুননে এখনো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা মা মাছ ডিম ছেড়ে দেওয়ায় অন্যান্য মাছের সাথে এবার জালে বড় ইলিশ ধরা পড়বে। চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরশ^রাই, মহেষখালী ওকুতুবদিয়া উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে এ উৎসব। 

চট্টগ্রাম জেলা সহকারী মৎস মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২২ দিন বঙ্গোপ সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ২৮ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় জেলেরা সাগরে যেতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, এ সময়ে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা, বাশঁখালী, সিতাকুন্ড, মিরসরাই উপজেলায় ১৫ হাজার ৩শত ৫০ পরিবার এবং চট্টগ্রাম মেট্রো এলকার কাট্টলী, হালিশহর, পতেঙ্গা, সদরঘাট, ফিরিঙ্গি বাজার, পাথরঘাটা এলাকায় প্রতি পরিবারে ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। 
 

Bootstrap Image Preview