Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফরিদগঞ্জে রাস্তা নির্মানে মহাদুর্নীতি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২০, ১০:৪৩ PM
আপডেট: ০৮ জুন ২০২০, ১০:৪৩ PM

bdmorning Image Preview


মহিউদ্দিন।। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসারা বাজার-টু-তেলিশাইর ঈদগাহ সড়কের আইডি- ৪১৩৪৫৪০৫৫ কে ব্যবহার করে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে অপর একটি সড়ক দীঘিরপাড়-টু-দিঘদাইর নামক সড়কটি নির্মাণ করে সরকারের প্রায় সোয়া কোটি টাকার গচ্ছা দিতে হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার নজরুল ইসলাম ও সুলতান আহমেদসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানায়, বাসার বাজার –টু-দিঘদাইর সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ। এ সড়কের পাশেই রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ২টি সরকারী প্রাইমারী স্কুল, ২টি মাদ্রাসা, বাসারা হাই স্কুল, তেলিসাইর ঈদগাহসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সড়কটি বড় বড় গর্ত ও কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে থাকছে। তাতে আমাদের চলাচলে নিধারুণ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। অথচ এ সড়কটির কাজ না করে এ সড়কের আইডি ব্যবহার করে ৩ কিলোমিটার ব্যবধানে অপর কম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিস্বার্থে ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যা জনস্বার্থের পরিপন্থি ও সরকারের অর্থের অপচয়।

উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সূত্র জানায়, নির্মণাধীন সড়কটি ১৪৫৫মিটার প্রাক্কলিত মূল্য এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের নাম আইআর আইডিপি- ২।

কাজটির ঠিকাদার মোঃ হাসান আলী পাওয়ার পর সড়কটি দেখতে গেলে দেখতে পায় মূল সড়ক থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার ব্যবধানে অন্য একটি সড়ক। যে সড়কটিতে মূল সড়কের অইডি ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে সড়কের প্রসস্ততা ১০ফুট থেকে কমিয়ে ৮ ফুট করা হলেও উদ্ধৃত্ত ২২/২৩ লাখ টাকার হদিস পাওয়া যায়নি।

ঠিকাদার হাসান আলী জানান, ১ম বার কার্যাদেশ ১৪মার্চ/২০১৯ ইং এ পেয়ে দেখতে পাই মূল সড়ক ব্যতিরেকে অন্য সড়কে কাজ করার জন্য মৌখিক আদেশ দেন উপজেলা প্রকৌশলী। এ অবস্থা দেখে আমি ৫মে/২০১৯ইং এ নির্বাহী প্রকৌশলী রবাবরে আপত্তিপত্র দাখিল করি। অতঃপর ৮/জুন২০১৯ইং এ আরোও একটি আপত্তিপত্র দাখিল করি। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে কাজের জামানতের প্রায় ১২ লাখ টাকা ডিফান্ডেড হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে।

২৮ অক্টোবর/২০১৮ইং এ প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক রাস্তা যাচাই-বাচাই করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দেয়। পত্র পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে প্রাক্কলিত বাসারা বাজার-টু-তেলিসাইর ঈদগাঁ রাস্তা ভায়া হাসপাতাল রাস্তার প্রাক্কলন দিয়ে উক্ত রাস্তা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত কামতা-সেন্দ্রা রাস্তা হতে দিঘিরপাড়-টু-দিঘদাইর সড়ক টেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করে যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতারণার সামিল।

এদিকে ঠিকার মোঃ হাসান আলী কাজ না করার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় নির্বাহী প্রকৌশলী ১ ডিসেম্বর/২০১৯ ইং এ উক্ত রাস্তা পরিদর্শনপূর্বক ভেরিয়েশন করে ১০ ফুট রাস্তা থেকে ৮ ফুট করে পূর্বের প্রাক্কলিত মূল্যে পুন:রায় কার্যাদেশ প্রদান করে। কার্যাদেশের তারিখ থেকে কাজ সমাপ্তির তারিখ মে‘ ২০২০ইং ছিল।

এদিকে ১১ ‘ডিসেম্বর ২০১৯ইং এ নির্বাহী প্রকৌশলী পত্র দিয়ে ১৮‘মার্চ/২০১৯ইং এর মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করে। অপরদিকে চলমান কাজের মাঝেই মার্কেন্টাইল ব্যাংক ম্যানেজারকে টাকা বাজেয়াপ্তের চিঠি ইস্যু করে।

এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারকে অবহিত করলে, ঠিকাদার ব্যাংক ম্যানেজারের নিকট ৩ দিনের মৌখিক সময় চেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী কর্তৃক লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে। যার প্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী তার কার্যালয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে কাজ হস্তান্তরের সম্পূর্ণ বেআইনী ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে জোর পূর্বক চুক্তিনামায় ও ৫টি চেকে বøাঙ্ক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ ঘটনার পর অবৈধভাবে চুক্তি দেওয়া ঠিকাদারকে বিল-ভাউচার জালসহি স্বাক্ষর করে ৩টি চেকে ১ কোটি টাকা প্রদান করে।

তিনি আরও জানান, কাজ পেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ১ পার্সেন্ট টাকা প্রদান করতে হয়। সে টাকা আমি দেইনি বিধায় আমার সাথে এ ধরনের আচরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন এলাকাবাসী জানান, নির্মাণাধীন রাস্তার কাজ লকডাউনের মধ্যে অনিয়মের মধ্যদিয়েই শুরু হয়েছে। রাস্তার এএস-এর মধ্যে ১৯ ইঞ্চি (বালু ও কংক্রিট মিক্স) দেওয়ার শর্ত থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র ২-৩ ইঞ্চি। মেকাডম ৬ ইঞ্চি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দেওয়া হয়েছে ২-৩ ইঞ্চি। তাছাড়া গাইড ওয়ালের বেইচে সিসি ঢালাই দেওয়া হয়নি। সম্পূর্ণ বাজে ইট দিয়ে কনা করে রাস্তায় ব্যবহার করা হয়েছে। বালি ও কনার মিশ্রণে পরিমাণ রক্ষা করা হয়নি।
বর্তমানে সর্বশেষ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তাটির কাজ তাড়াহুড়া করে শেষ করার জন্য ০৭ জুন/২০ইং রোববার রাস্তায় তেল লাগানো হয়েছে। অদ্য ০৮/২০ইং সোমবার অনিয়মের মধ্যে দিয়েই কার্পেটিং চলছে।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, কাজটির কারিগরি কর্মকর্তা মোঃ শাহাজান ও ওয়ার্ক স্ট্যান্ড মোঃ মতিউর রহমান একবারের জন্যও কাজের কাছে যায়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট অবৈধ চুক্তিনামার ঠিকাদার যা ইচ্ছে তাই করেছে। এ হচ্ছে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের কাজের তদারকির হাল।

কাজের গুণগতমাণ রক্ষা হচ্ছে না বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের মাধ্যমে ঠিক করা চুক্তিবদ্ধ বেআইনী ঠিকাদার মোঃ মাহাবুব মোশের্দ কচি জানান, কাজের ভালো হয়েছে। তবে পুরোপুরি সঠিক করা সম্ভব হয়নি। সিসি ঢালাই ও প্লাস্টার না করেও করছেন বলে জানান।

তিনি আরোও জানান, কাজটি নিয়ে আমার লাভ হবে না। তবে উপজেলা জেলা প্রকৌশল দপ্তর সন্তুষ্ট থাকলে অন্য কাজে হয়তো লাভ করা যাবে।

তিনি এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বার বার অনুরোধ করেন।

কাজের বিষয়ে ওয়ার্ক স্ট্যান্ড মোঃ মতিউর রহমান জানান, আমাকে এসও শাহাজান সাববলেছেন, ওনার দায়িত্ব পালন করতে। কিন্তু অফিসিয়াল কাজের জন্য আমি একবারও যেতে পারিনি কাজের সাইডে।

এ বিষয়ে উপজেলা কারীগরি কর্মকর্তা মোঃ শাহাজান মিয়ার এক সড়কের আইডি অপর সড়কে ব্যবহারের কথা স্বীকার করে জানান, আমি লকডাউনের কারণে কাজটির সাইডে কম গিয়েছি। কিন্তু একেবার যাইনি তা সঠিক নয়। গত সপ্তাহেও গিয়েছি। তিনি কাজের সাইডে একবারও না গিয়ে দাবি করেন কাজের গুণগতমাণ ঠিক রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ড. মোঃ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অপর রাস্তার অইডি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রাস্তাটির কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে একটি অইডি দিয়ে দেওয়ার পর ব্যবহারিত আইডটি পূর্বের রাস্তায় দিয়ে দেওয়া হবে।

কাজের গুণগত মান রক্ষা হচ্ছে না প্রশ্নের জবাবে বারাবরের মতো বললেন, ভালোই হচ্ছে। তাছাড়া অবৈধ চুক্তিনামা সম্পাদন করে দেওয়া ঠিকাদারের ও প্রশংসা করলেন যে, সে ভালো কাজ করে। অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ না করে ব্যক্তিস্বার্থে কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে কেন?

এ প্রশ্নের জবাবে জানান, কে বলেছে এ রাস্তাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউনূস বিশাসের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, কাজের গুণগত মাণের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে আপনার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলব। সড়কের ১০ ফুট প্রসস্ততার স্থলে ৮ ফুট করায় ২২/২৩ লাখ টাকা বেঁচে যাওয়ার কথা। সে টাকা কোথায় সমন্বয় করে? উত্তরে কোনও জবাব দেয়নি। তাছাড়া এক সড়কের আইডি ব্যবহার করে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে অপর সড়ক নির্মাণে কারণে জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা নিতে বলবো বলে জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের (০২১৮১৮২৯০) নাম্বারে বার বার ফোন দিয়েও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Bootstrap Image Preview