Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ শনিবার, মে ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দুনিয়াতেই যেসব কাজের হুবহু প্রতিদান পাওয়া যায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৫:৩৮ PM
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৫:৩৮ PM

bdmorning Image Preview


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বসা ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘হে বৎস! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শেখাব। আল্লাহর বিধানগুলো সংরক্ষণ করবে, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর দাবিগুলো (বিধান) আদায় করবে, তুমি আল্লাহকে তোমার সামনেই পাবে। আর যখন তুমি কোনো কিছু চাওয়ার ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে।

যখন সাহায্য চাইতে হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে। জেনে রেখো! যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তবু তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনই তোমার উপকার করতে পারবে না। আর যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তবু তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং দপ্তরসমূহ শুকিয়ে গেছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)

আলোচ্য হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মানুষ যেমন কাজ করবে তেমন ফল পাবে। কখনো কখনো আল্লাহ মানুষের কাজের প্রতিদান অনুরূপ কাজের মাধ্যমে দেন। কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা থেকে এমন কিছু কাজের বিবরণ তুলে ধরা হলো—

১. আল্লাহকে সাহায্য করা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের কদম (অবস্থান) দৃঢ় করবেন।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৭)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, ‘যদি তোমরা জিহাদের ময়দানে শত্রুর বিরুদ্ধে আল্লাহর রাসুলকে সাহায্য করো, আল্লাহর দ্বিন প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা-সংগ্রাম করো, তবে আল্লাহ তার দ্বিনের সাহায্যকারীকে সাহায্য করবেন এবং তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করবেন।’

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহকে সাহায্য করবে আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাহায্য করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান ও পরাক্রমশালী।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৪০)

২. আল্লাহকে স্মরণ : আল্লাহ বলেন, ‘আমাকে স্মরণ কোরো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)

সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) এই অর্থ এভাবে করেন, ‘আনুগত্যের মাধ্যমে তুমি আমাকে স্মরণ করো, আমি ক্ষমা ও অনুগ্রহের মাধ্যমে তোমাকে স্মরণ করব।’ আর হাসান বসরি (রহ.) অর্থ করেন, ‘তোমার ওপর আমি যা যা আবশ্যক করেছি তা পালনের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ করো, আমি পুরস্কার ও প্রতিদানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার মাধ্যমে তোমাকে স্মরণ করব।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

৩. আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার পূরণ : আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূরণ করো আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪০)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতটি বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে অবতীর্ণ। তারা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) আগমন করলে, তারা তাঁকে সত্যায়ন করবে এবং মেনে নেবে। কিন্তু সেই অঙ্গীকার তারা রক্ষা করেনি।

এ ছাড়াও আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য এবং তার প্রতিদানে জান্নাত অথবা অবাধ্যতার শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম প্রদানের বিষয়গুলোও আল্লাহর অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত।

৪. অন্যের দোষ গোপন করা : মানুষের দোষচর্চা ইসলামে নিষিদ্ধ। কেউ যদি অন্যের দোষ গোপন করে তবে আল্লাহ তার দোষও গোপন করবেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ গোপন রাখে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০২৮)

শায়খ শফিউল্লাহ মুবারকপুরী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘কেউ যদি মুসলমানের এমন কোনো দোষ বা ত্রুটি জেনেও গোপন করে—যা প্রকাশে সে লজ্জাবোধ করে, তবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন এবং পৃথিবীতেও তাকে পাপের জন্য লজ্জিত করবেন না।’ (মিন্নাতুল মুনয়িম ফি শরহিল মুসলিম : ৪/২৪২)

৫. মসজিদ নির্মাণ : মসজিদ আল্লাহর ঘর। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পৃথিবীতে তাঁর ঘর মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ জান্নাতে তার জন্য ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ তৈরি করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬৬১)

৬. আল্লাহর বিধান সংরক্ষণ : আল্লাহর বিধান সংরক্ষণের অর্থ হলো, তা মান্য করে চলা। আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা করা এবং করতে নিষেধ করেছেন তা পরিহার করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান মেনে চলবে, আল্লাহ তাকে যাবতীয় অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন। আলোচ্য হাদিসে যেমনটি বলা হয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো পুরুষ বা কোনো নারী যদি ভালো কাজ করে, আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৭)

৭. দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করা : পৃথিবীতে যারা দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে অনুরূপ শাস্তি দেবেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী হবে, কিয়ামতের দিন তার দুটি আগুনের জিহ্বা হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৫)

৮. সৃষ্টির প্রতি দয়া করা : যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ করবে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে দয়াশীলদের প্রতি দয়া করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়া করো, যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

Bootstrap Image Preview