Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দুই পা নেই, 'জিনের বাদশা' সেজে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০২০, ০৭:৫১ PM
আপডেট: ২৭ জানুয়ারী ২০২০, ০৭:৫১ PM

bdmorning Image Preview


নিখোঁজ শিশু উদ্ধারের নামে জিনের বাদশা সেজে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বাবুল মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ। আজ সোমবার মামলার পর ওই জিনের বাদশাকে কাল মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হবে।

তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কবিরবুলসোমা গ্রামের মো. সব্দর আলীর ছেলে। হাঁটুর ওপর পর্যন্ত তার দুই পা নেই। দুই হাতের বেশ কয়েকটি আঙ্গুলও কাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দশ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার পা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেটে ফেলতে হয়। এরপর থেকে সুস্থ বাবুল পুঙ্গু হয়েও ভয়ংঙ্কর হয়ে ওঠেন। ডলার বিক্রির ফাঁদে ফেলা ছাড়াও সোনার পুতুল ও পিলার বিক্রির ফাঁদে ফেলে নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। প্রায় ২০ জনের দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।

এলাকার লোকজন জানান, এলাকার বাহিরে গিয়ে তিনি ছেঁড়া কাপড় পড়ে মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে ভিক্ষাবৃত্তির কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে বিশেষ পদ্ধতিতে ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করে। ধরা খেলেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় সকল সময়ে বাবুল পার পেয়ে যায়।

পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, নরসিংদি জেলার রায়পুরা উপজেলার বাছাইকান্দি গ্রামের রূপচাঁন কাজীর মাদরাসা পড়ুয়া ছেলে দুলাল কাজী (১২) নিজ এলাকার একটি মাদরাসা থেকে গত ১৮ নভেম্বর হারিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তার সন্ধান করতে পারেনি।

তার বড় ভাই রিয়াদুল ইসলাম হৃদয় জানান, ভাই নিখোঁজের খবর পেয়ে তার বাড়ির পাশে রাজমিস্ত্রির কাজ করা সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লক্ষীগঞ্জে। তার বাড়ির পাশেই এক ব্যক্তি জিন নামিয়ে হারানো বা নিখোঁজ হওয়া কোনো কিছু সহজেই উদ্ধার করে দেন। এ অবস্থায় তার নিখোঁজ ভাইকে পেতে মাত্র চার ঘণ্টা সময় লাগবে। এতে কিছু টাকা খরচ হবে। এ কথা শুনে দুইদিন পর সাদ্দামের সাথে এসে ওই জিনের বাদশা বাবুলের কাছে আসেন।

বাবুল তাৎক্ষণিক বলেন, এই শিশু উদ্ধারে মাত্র চার ঘণ্টা লাগবে। এই জন্য টাকা দিতে হবে পাঁচ লাখ। দফা রফা করে ৫০ হাজার টাকা কমে সাব্যস্থ করা হয়। নগদ দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। বিশ্বাস যোগ্যতার জন্য কোরআন শপথ করেন। বাকী টাকা উদ্ধারের পর দেওয়া হবে শর্তে জিন নামানোর কাজ শুরু করে বাবুল। এক পর্যায়ে জানানো হয় যেকোনো সময় চলে আসবে নিখোঁজ শিশু। এ অবস্থায় তাদের বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রিয়াদুল আরো জানান, বাড়িতে গিয়ে দুদিনেও নিখোঁজ হওয়া ভাই না আসায় ফের জিনের বাদশা বাবুলকে জানালে তিনি বাকী টাকা দাবি করেন। না দিলে উদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্ব হবে। এমতাবস্থায় আর বাকী টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু না হলে তারা পরিবারের লোকজন নিয়ে বাবুলের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের মাইজবাগ ইউনিয়নের কবিরবুলসোমা গ্রামে যান। এ সময় বাবুল আবার টাকা চাইলে তারা টাকা দিতে অস্বীকার করে বাকী টাকা ফেরত দেওয়া জন্য বলতেই বাবুলের স্ত্রীসহ ৫/৬জন মিলে অস্ত্র দেখিয়ে চলে যেতে বলে। অন্যথায় জীবনে মেরে ফেলার হুমকী দেয়।

এ ঘটনা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসীকে জানানো হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে পাঠালেও অভিযুক্ত বাবুল মিয়া আসেননি। পরে ঘটনাটি ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়। সেখান থেকে গত শনিবার ঈশ্বরগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেওয়া ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান, অভিযুক্ত বাবুলসহ চক্রটিকে ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এ অবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত রবিবার রাতে বাবুল মিয়াকে আটক করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview