Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নারী পকেটমারদের টার্গেট পুরুষ, শিশুদের টার্গেট নারী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০২০, ১০:০৫ PM
আপডেট: ২২ জানুয়ারী ২০২০, ১০:০৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ফারুকের (আসল নাম নয়, শিশু হওয়ায় নাম প্রকাশ করা হলো না) বয়স ১৩ বছর। বাপ-দাদা সবার পেশাই পকেটমারা। ফারুকের বাড়ি বগুড়া শহরের চেলোপাড়া সান্দারপট্টিতে। পড়াশোনা করেনি। পারিবারিক পরিমণ্ডল, আবহ তাকে এই পেশায় নিয়ে এসেছে। এখন পাঁচজনের একটি দল চালায় ফারুক।

জানা গেছে, এখন বগুড়া শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৩০০ পকেটমার। পকেটমারের তালিকায় যেমন আছে ফারুকের মতো কিশোর, তেমনি আছে নারী সদস্যসহ মাঝবয়সী পুরুষরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের ফতেহ আলী বাজার, গালাপট্টি, নিউ মার্কেট, সাতমাথা, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্র টার্গেট করে মানুষের সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় তারা।

তারা মিশে থাকে মানুষের মধ্যে। ফাঁদে ফেলে বিশেষ করে বগুড়ায় কাজে আসা বা বেড়াতে আসা লোকজনকে। সুযোগ পেলে তাদের কেউ কেউ ছিনতাই করতেও পিছপা হয় না।

নারী পকেটমাররা টার্গেট করে পুরুষের পকেট ও নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগ। শিশু-কিশোরদের টার্গেট মূলত নারীরা। চার-পাঁচজনের দল নিজেদের মধ্যে ভিড় তৈরি করে কেনাকাটা করতে আসা নারীদের ব্যস্ত রাখে। এরপর কৌশলে ব্যাগের চেইন খুলে বা কেটে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা, মুঠোফোন ও মূল্যবান গয়না।

দিন শেষে পকেটমারের হাতিয়ে নেয়া এসব মুঠোফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র বিকিকিনির জন্য সান্দারপট্টি এলাকার কয়েকটি স্থানে বসছে গোপন বাজার। সেখানে চলছে কেনাবেচা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা-ফাঁড়ি পুলিশ বিষয়টি জানার পরও নিচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। এ কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এদের দৌরাত্ম্য।

থানা সূত্র জানায়, পকেটমারের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানো মানুষের বেশির ভাগই থানায় অভিযোগ করে না। তারপরও প্রতিদিন লিখিত-মৌখিক মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে সৌভাগ্যবান দু-একজন হয়তো প্রতিকার পায়। তবে এক্ষেত্রে লাগবে প্রভাবশালীদের সুপারিশ।

বগুড়া সদর ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ বলেন, পকেটমার সারা শহরে ছড়িয়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোও একটা সমস্যা। কারণ প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। দেখা যায় ধরে আনলে উল্টো সামলানো দায় হয়ে পড়ে। এরাই রাত নামলে নেমে পড়ে শহরের রাস্তাঘাটে। এদের অনেকেই দিনে পকেটমার, রাতে হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। এরা অস্ত্রও ব্যবহার করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিনের পকেটমার আর রাতের ছিনতাইকারীদের সঙ্গে থানা-ফাঁড়ির পুলিশের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার প্রভাবশালীদের রয়েছে অন্য রকম সখ্য। পকেট কেটে, নারীর ব্যাগ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা-পয়সা ও মুঠোফোন, মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রির অর্থের ভাগ যাচ্ছে পুলিশ ও নেতাদের পকেটে। এ কারণে পুলিশ অ্যাকশন চালায় না।

পকেট কাটতে গিয়ে অথবা ছিনতাই করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দু-একজন জনতার হাতে ধরা পড়লেও পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে বেরিয়ে আসে দ্রুতই। থানায় সোপর্দ করার পর পকেটমারকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের কাছে তদবির করেন অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালীরা।

টাকা-পয়সার বিনিময়ে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে একাধিক। মাঝে মাঝে গ্রেফতার অভিযান চালানো হলেও জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের পাঠানো হয় জেলহাজতে। দু-এক দিনের মাথায় জামিনে বেরিয়ে গিয়ে আবারও পুরনো সেই কাজে জড়িয়ে পড়ে তারা।

ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের পকেটমারের বেশির ভাগই চেলোপাড়া-সান্দারপট্টি এলাকার। এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। সান্দারপট্টির পকেটমার পল্লীটিও তারই নিয়ন্ত্রণে। এমন উদাহরণও আছে, পুলিশের কাছ থেকে তার কাছে অনুরোধ পৌঁছানোর পর এক ঘণ্টার মধ্যে খোয়া যাওয়া মালপত্র ফেরত পাওয়ার।

স্থানীয়রা জানায়, পকেটমার পল্লীর বেশির ভাগ পকেটমারই মাদকসেবী। হেরোইন, ইয়াবাসহ নানা নেশায় আসক্ত তারা। সেখানে ১২ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছর বয়সী পকেটমারও রয়েছে। সান্দারপট্টি ছাড়াও শহরের নামাজগড়, সেউজগাড়ি, সূত্রাপুর এলাকায়ও রয়েছে বেশ কিছু পকেটমার।

Bootstrap Image Preview