Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দিন

সজীব সরকার
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০১৯, ০৬:৩০ PM
আপডেট: ১৫ মে ২০১৯, ০৬:৩০ PM

bdmorning Image Preview


অনেক বিষয়েই শিশুদের ইচ্ছে বা আগ্রহ কিংবা পছন্দ-অপছন্দের কথা বড়রা জানতে চান না, এমনকি শিশুরা নিজে থেকে তা জানাতে চাইলেও অভিভাবকেরা বিরক্ত হন এবং রীতিমতো বকাঝকা করেন। কোথাও বেড়াতে বা বাইরে খেতে যাওয়া, শিশুর জন্যে পোশাক-পরিচ্ছদ কেনা, পড়াশোনা বা খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ বা অনাগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে শিশুদের কোনো মতামত নেয়া হয় না; বড়রা নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেন।

শিশুদের মতামত না নেয়া বা না শোনার পক্ষে বড়দের যুক্তি হলো, ‘শিশুরা কিছু বোঝে না।’ আসলেই কি তাই?

শিশুরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনেককিছু শেখে। তারা প্রতিনিয়ত চারপাশের দরকারি-অদরকারি সব বিষয় নিজের মতো করে পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রতিনিয়ত শেখার প্রক্রিয়ায় থাকে। শিশুরা একেবারে যে কিছু বোঝে না, তা ঠিক নয়; তাদের মধ্যে সহজাত বোধের প্রবৃত্তি অনুপস্থিত নয় - এটি বড়দের বোঝা দরকার।

যেসব বিষয়ে শিশুদের মতামত বা পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিলে তা কারো কোনো ক্ষতির কারণ হচ্ছে না, সেখানে অবশ্যই তা করা উচিত। এতে শিশুর মধ্যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, তাদের মধ্যেও অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার মানসিকতা তৈরি হবে।

অনেক ক্ষেত্রে বড়রা কথা বলার সময় শিশুরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বড়রা ক্ষিপ্ত হন; এটিও ঠিক নয়। শিশুকে সবসময় অগ্রাধিকার দিতে হবে, তাকে কথা বলতে দিতে হবে। বড়রা অনেক সময় শিশুদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন না এমন ধারণা থেকে যে, ‘শিশুদের কথা গুরুত্বপূর্ণ নয়’। বোঝা দরকার, বড়দের যেমন নিজের কথাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তেমনি শিশুদের কাছেও তাদের নিজেদের কথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিশুরা কথা বলার সময় অমনোযোগিতা বা তাদেরকে থামিয়ে দেয়া একেবারেই ঠিক নয়। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে শিশুদের বোঝানো যেতে পারে, অন্যরা কথা বলার সময় তাদের কথার মাঝখানে কথা বলা শুরু না করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে, তারা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলে তখন কথা বলা উচিত।

শিশুদের কথা বলতে না দিলে বা তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে না শুনলে শিশুদের মনের ওপর চাপ পড়ে; এই চাপ সামলে নেয়ার মতো সক্ষমতা সব শিশুর সমানভাবে থাকে না। এর ফলে এমন আচরণ শিশুর মনো-দৈহিক বিকাশে বাধা হয়ে ওঠতে পারে। এছাড়া শিশুরা যদি পরিবারে ও বাইরে বড়দের কাছ থেকে কথা বলার স্পেস না পায়, তাদের মতামতের গুরুত্ব না পায় এবং বড়দের মনোযোগ না পায়, তাহলে শিশুদের মধ্যে বড়দের প্রতি আস্থাহীনতা, অশ্রদ্ধা এবং ভীতিও তৈরি হতে পারে। এমন ঘটলে পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে মানুষ সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক ধারণা এমনকি অপরাধপ্রবণতাও উস্কে দিতে পারে।

নিশ্চয়ই এটি ঠিক যে ভালো-মন্দের জ্ঞান শিশুদের মধ্যে বড়দের তুলনায় কম; তবুও যেখানে যতোদূর সম্ভব, শিশুদের মতামত জানতে চাওয়া উচিত, তাদের পছন্দ-অপছন্দকে যথাসম্ভব গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করা উচিত। কোনো ক্ষেত্রে শিশুর মতামত ভুল বা ক্ষতিকর বলে তা গ্রহণের মতো না হলেও তাকে থামিয়ে না দিয়ে বরং আগে তার কথা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে, এরপর তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে - কেন তার মতামত নেয়া যাচ্ছে না।

শিশুরা অনেককিছু বোঝে। বড়রাই বোঝে না যে শিশুরা কতোকিছু বোঝে। শিশুরা গুরুত্ব পেলে তারা অন্যকে গুরুত্ব দিতে শিখবে, শিশুরা সম্মান পেলে অন্যকে সম্মান করতে শিখবে। তাই শিশুদেরকে বুঝতে হবে, শিশুদেরকে শুনতে হবে।

সজীব সরকার : লেখক ও গবেষক

সহকারি অধ্যাপক; জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ; স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

[email protected]

Bootstrap Image Preview