Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ছাতকে মসজিদের বরাদ্দ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

হাসান আহমদ, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৩ মে ২০১৯, ০৯:৩৩ PM
আপডেট: ০৩ মে ২০১৯, ০৯:৩৩ PM

bdmorning Image Preview


ছাতকে একটি মসজিদের বরাদ্দ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। এডিপির দেয়া বরাদ্দ আত্মসাৎ করতে মসজিদের নামে দেয়া হয়েছে ভুয়া প্রজেক্ট কমিটি। কাজ শেষ হয়েছে বলে জমা দেয়া হয় নবনির্মিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছবি। এ নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও ভুয়া প্রজেক্ট দাখিলকারিদের মধ্যে হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মসজিদের ইমাম। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামে।   

জানা যায়, সম্প্রতি ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও জামে মসজিদের উন্নয়নের জন্যে ইউএনও অফিসে সরকারি বরাদ্দ চাইতে যান মসজিদের মোতাওয়াল্লী নূর মিয়া ও ইমাম হাফেজ খলিল আহমদ। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন কিছুদিন পূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের রাজস্ব খাত থেকে কাজিরগাঁও ও রহমতপুর জামে মসজিদের নামে কেবা কারা ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন। জমা দেয়া হয়েছে একটি প্রজেক্ট কমিটিও। কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে জমা দেয়া হয় ছবিও। অথচ এর কিছুই জানেনা মসজিদ পরিচালনা কমিটি।

পরের দিন আবারো গ্রামবাসী ইউএনও অফিসে উপস্থিত হন। তারা উদ্ধার করেন ভুয়া প্রজেক্ট কমিটি ও মসজিদের ছবি হিসেবে দেয়া একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছবি। প্রজেক্ট কমিটিতে স্বাক্ষরসহ সভাপতি রয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (১ নং ওয়ার্ড) রহমত পুর গ্রামের ইউনুছ আলী ও কাজিরগাঁও গ্রামের নিজাম উদ্দিনের নাম।

এসময় গ্রামবাসী নিজাম উদ্দিনের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইলে জানান, তিনি এর কিছুই জানেন না। পরে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্যে বলাবলি করেন, দেখব ওরা কিভাবে টাকা নেয়। ২৮ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগ এনে ইউএনও বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় মসজিদ পরিচালনা কমিটি।

এদিকে নিজামের এমন দম্ভোক্তি শুনে গেল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জুমআর নামাজের পর গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বরাদ্দের টাকার পরিবর্ততে নিজামের দুটি গরু আটক করে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে নিজাম থানা পুলিশ নিয়ে মসজিদে হাজির হয়। পুলিশ গ্রামবাসীকে প্রথমে ধাওয়া দেয়। পরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে উত্তেজিত জনতা জড়ো হলে নিষ্ক্রিয় হয় পুলিশ। এসময় নিজামের স্ত্রী তেড়ে আসলে পুলিশের উপস্থিতিতেই গ্রামবাসীরা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইউপি সদস্য ইউনুছ বিষয়টি বিচারের মাধম্যে দেখে দেয়ার কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে গরু দু’টি ছাড়িয়ে নেন। ওই রাতেই গ্রামবাসীসহ ইমামকে আসামী করে থানায় অভিযোগ দেয়।

এ বিষয়ে কথা হলে মসজিদ কমিটির সদস্য নিয়াজুল ইসলাম জানান, বরাদ্দ চাইতে গিয়ে আমরা জানি আমাদের মসজিদের নামে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে গ্রামের নিজাম গংরা ভুয়া প্রজেক্ট কমিটি ও ছবি জমা দিয়েছে। আমরা ব্যাখ্যা চাইলে আমাদের চ্যালেঞ্জ করে সে। পরে শুক্রবার আমরা গ্রামবাসী তার গরু আটক করি। সে পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। এসময় ইউনুছ মেম্বার এসে বিষয়টি দেখে দেবার শর্তে গরু নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তির কথা রয়েছে। অভিযুক্ত নিজাম মিয়া’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল হেকিম বলেন, উপজেলায় মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজনের সাথে আমার সাক্ষাত হয়, তাদের আমি বিষয়টি দেখে দেয়ার কথা বলি। ওরা টাকা উঠায়নি বরাদ্দের টাকাও যেহেতু অফিসে জমা আছে, এতে চিন্তার কারণ নেই। তবুও তারা এলাকায় একটা বিশৃংখলা তৈরি করেন। তারা নিজামের স্ত্রীকে অমানসিকভাবে নির্যাতন করেছে।   

উপজেলা এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার অনুপম চৌধুরী বলেন, এ বরাদ্দটি নিয়ে এলাকায় ঝামেলা হচ্ছে। যেহেতু প্রকল্পে কাজ হয় নাই, সেহেতু আমরা বরাদ্দের টাকা দেয়নি।

ছাতক থানার এসআই অরুণ কুমার দাস বলেন, নিজামের অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। শুনেছি সামাজিকভাবে বিয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। সমাধান না হলে মামলা রেকর্ড হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম আবেদা আফসারী মসজিদ কমিটির অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবকে দেখার দায়িত্ব দিয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

 

Bootstrap Image Preview