Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক

সজীব সরকার
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০১:২৭ PM
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০১:২৭ PM

bdmorning Image Preview


শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হবে? পৃথিবীজুড়েই এ সম্পর্ক একসময় ছিলো উলম্ব; শিক্ষকের স্থান ছিলো উঁচু আর শিক্ষার্থীর অবস্থান ছিলো একেবারে তলায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক সে সময় ছিলো ভয়ের সম্পর্ক। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ভয় পাবে-এমনটিই ছিলো প্রত্যাশিত। শিক্ষক মহত্তর আর শিক্ষার্থী ক্ষুদ্রতর- এমনটিই ছিলো সর্বজনগ্রাহ্য।

শ্রেণিকক্ষগুলোতে আগে একটি চৌকি ব্যবহার করে শিক্ষকের বসার স্থানটিকে উঁচু করার চল ছিলো; এখনও অনেক জায়গায় রয়েছে। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে এর খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। অর্থাৎ স্কুলে ভর্তির পর ক্লাসের প্রথম দিনই শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর একটি অসম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চমৎকার আয়োজন সুনিশ্চিত করা রয়েছে! ক্লাসরুমে শিক্ষক প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উঠে দাঁড়াতেই হবে; অন্যথায় রয়েছে শাস্তির প্রচলন। যুগ যুগ ধরে বলা হচ্ছে, ক্লাসরুমে বা অন্যত্র শিক্ষককে দেখে উঠে দাঁড়ানোটা সম্মানের প্রতীক; কিন্তু উঠে দাঁড়ালেও শিক্ষকের প্রতি যে ওই শিক্ষার্থীর মনে শ্রদ্ধা রয়েছে, তার নিশ্চয়তা কী?

বিশ্বের অনেক দেশে এমন আচারের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আমাদের এশিয়া অঞ্চলে বা যদি সুনির্দিষ্ট করে বলি, বাংলাদেশে এমন চর্চার বেশিরভাগই এখনো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। শিক্ষক এখানে ‘প্রভু’ আর শিক্ষার্থী হলো ‘দাস’। ব্রাজিলের শিক্ষাবিদ পাওলো ফ্রেইরি এই সম্পর্কটি ভাঙ্গার প্রস্তাব করেছিলেন। ফ্রেইরির প্রস্তাব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

শিক্ষক যদি ‘প্রভু’ হয়ে ওঠেন, তাহলে শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার সহজ ও স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যহত হয়; এখানে শ্রদ্ধার নয় বরং ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। যেখানে ভয় থাকে, সেখানে সহজাতভাবে ভাবের আদান-প্রদান ঘটে না। কিন্তু তথ্য বিনিময় ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি সহজ-সরল সম্পর্ক দরকার যেখানে উভয়েই কোনো জড়তা ছাড়া ভাবের আদান-প্রদান করতে সক্ষম হবে।

শিক্ষককে হয়ে উঠতে হবে শিক্ষার্থীর পরম বিশ্বস্ত বন্ধু, তার নিশ্চিন্ত নির্ভরতার স্থল। দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকবে; সহানুভূতি ও সমানুভূতি থাকবে। শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর কল্যাণাকাঙ্ক্ষি হয়ে উঠতে না পারেন, তাহলে তার পক্ষে আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থী যদি প্রয়োজনের সময় তার শিক্ষকের শরণ নিতে আগ্রহী না হয়, তাহলে সেই শিক্ষক ব্যর্থ শিক্ষক। কেবল অ্যাকাডেমিক আলোচনার জন্যেই নয়, প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের কল্যাণে তার ব্যক্তিগত বিষয়েও আলাপ-পরামর্শ করার মতো পরিবেশ একজন শিক্ষকের তৈরি করা উচিত।

শিক্ষক কেবল পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষক হয়ে ওঠেন না, একজন শিক্ষার্থীকে তার ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষক হয়ে ওঠেন।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে আমরা কতোজনের কাছেই তো পাঠলাভ করি; তাদের কতোজনের কথা বা অন্তত নাম শেষ পর্যন্ত আমাদের মনে থাকে? এতোজনের মধ্যে একজন-দুজনের কথা আমরা মনে রাখি; বাকি সবার নামটি পর্যন্ত ভুলে যাই! যাদের কথা মনে থাকে, তারাই আমাদের প্রকৃত শিক্ষক, আমাদের শিক্ষাগুরু; বাকিরা কেবলই শিক্ষক। কেবল ‘পেশায় শিক্ষক’ হলেই চলবে না, শিক্ষক হয়ে উঠতে হবে নিবিঢ় অধ্যবসায় দ্বারা, সুদীর্ঘ সাধনায়।

সজীব সরকার : সহকারি অধ্যাপক; জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ; স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। লেখক ও গবেষক।
[email protected]

Bootstrap Image Preview