Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবৈধ ইটভাটায় ছেয়ে গেছে হবিগঞ্জ

আজিজুল ইসলাম সজীব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১২:০৬ PM
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১২:০৬ PM

bdmorning Image Preview


হবিগঞ্জ জেলার সদর, চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল, নবীগজ্ঞ উপজেলাগুলোতে সরকারি ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যঙ্গের ছাতার মতো ছেয়ে গেছে ইটভাটা। নেই ইটভাটা স্থাপনের পরিবেশ রক্ষায় নীতিগত সরকারি অনুমোদিত ছাড়পত্র, নেই কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।  

এছাড়া এই ইট ভাটায় আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সংবিধান অনুযায়ী তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কাজ করা হচ্ছে তাও আবার মোমবাতির আলোতে নয় করছে প্রকাশ্য দিবালোকে।

সেগুলো হল- শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে শিশু শ্রমিক; যে ইট তৈরি করা হয় তাতেও ভেজাল ইট, ওজনে ও মাপে কম;
ফসলি জমিতে দেওয়া হচ্ছে ইটভাটা, ইট বানানোর জন্য যে মাটি ব্যবহার করে তাও ফসলি জমির মাটি না হয় নদীর বুকের; পরিবহনে ব্যবহার করা হয় এমন এক গাড়ি যা যন্ত্র দানব খ্যাত ট্রাক্টর। এই দানব গাড়ি চলাচল করে অনুমতি ছাড়া, রাস্তা-ঘাটের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে।

এছাড়া বেসামাল গাড়ি হওয়ায় এবং অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে গুরুত্বর আহত এমকি নিহতের সংখ্যাও কম নয়। ইট পোড়ানোর সময় যে ব্যবহার করা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে পরিবেশ বিনষ্ট করে পাহাড়ের ও পরিবেশের মূল্যবান সম্পদ বনাঞ্চলের গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।

তাছাড়া ইটের ভাটা তৈরি করা থেকে ইট পোড়ানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয় না।

এসব কিছুই সঠিক ভাবে করা হচ্ছে না প্রশাসন ও কিছু অদৃশ্য সুযোগ সন্ধানী নেতাদের এ অবহেলার কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলছে বিষাক্ত দূষিত পরিবেশ যা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। 

সদর উপজেলার সদর, গোপায়া ও লস্করপুর এলাকায় ছিল হাতে গোনা দু-একটি ইটভাটা রাতারাতি যেন কি থেকে কি হয়ে উঠল। আর এইসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে  সরাসরি ভাবে পরিবেশ বিরোধী ড্রাম চিমনি দ্বারা লাকড়ির মাধ্যমে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ থেকে চুনারুঘাট, চুনারুঘাট থেকে বাল্লা সীমান্ত, মিরপুর রোড, ঢাকা-সিলেট পুরাতন রোড, বাহুবল, পানিউম্দা, নবীগজ্ঞ, মাধবপুর, বানিয়াচঙ্গসহ পুরো জেলার সকল উপজেলাতেই একটা রং, একটা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। 

আরো আশপাশের এলাকা যে সব এলাকাতে আগে যে দিকে চোখ যেত শুধুু সবুজ সমারোহের ধানের জমি, আর ধান কাটার সময় দেখা যেত যে হলুদ সবুজের মিলন-মেলা। 

আর এখন সেই সব এলাকা যেন মনে হয় কোন অপরিচিত দৃশ্য দেখে চিনতে নিজেকেই ভুল মনে হয়। আর এই সবকটিতেই ড্রাম চিমনি দ্বারা লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। যা সরকারিভাবে যা আইনত দণ্ডনীয়। এতে হুমকির মুখে রয়েছে আমাদের দেশের মানুষের ভবিষ্যত পরিবেশ। 

সরাসরি কাঠের লাকরি ব্যবহারের কারনে বিলুপ্ত হচ্ছে সবুজের মেলা ভার বলা বনাঞ্চল গুলো। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকির কারন হয়ে দাড়াতে পারে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এসকল ভাটাগুলোর বেশীর ভাগই নদীর পাশে অবস্থিত হওয়ার কারনে নদীর পাড়ের মাটি অবৈধ ভাবে কেটে ইট তৈরীর কাজে লাগাচ্ছে, এর মাটি বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্র দানব খ্যাত ট্রাক্টর।  

এ সমস্ত মানুষ রূপে অমানুষিক মস্তিষ্কের অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের লোভের বশবর্তী করে সৃষ্টি করছে নদী ভাঙ্গন, যন্ত্র দানব ট্রাক্টর অদক্ষ এবং কম বয়সি চালক দিয়ে কাজ চালাচ্ছে যার ফলে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পত্রিকা খুলেই চোখে পড়ে আর যারা দুর্ঘটনায় সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পরিবারের কাছে যেন বোঝা পড়ছেন।  
জনবসতি পূর্ণ এলাকায় ভাটা গুলো অবস্থিত হওয়ার কারনে সৃষ্টি হচ্ছে শ্বাস কষ্ট জনিতসহ বিভিন্ন রোগ বালাই। 

বারবার এ সমস্ত অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও এইসব বিষয়ে খোঁজখবর বা প্রশাসনিক কার্য তাও তাদের বিরুদ্ধে দেখা যায় না। 

গণমাধ্যমের চাপে পড়ে মাঝে মধ্যে ২ একটা ইটভাটাকে লোক দেখানো সামান্য কিছু জরিমানা করলেও বন্ধ করতে বিশেষ আইন অনুযায়ী  যাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। 

এব্যাপারে ইটভাটা মালিক সমিতির এক নেতা জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটা গুলো চালু রেখেছে, এ ছাড়া উপর নির্ভর নেতাদের সঙ্গে রয়েছে সক্ষমত বা অনেকের রয়েছে নিজেই    ইটের ভাটা। এমনকি ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয় না বলে দাবি স্থানীয়দের। 

এ সকল অবৈধ ভাটা মালিকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, আমরা মানুষ বাংলাদেশি টাকা দিলে অই সব ব্যবসা করা জন্য অনুমতি পাইত, ভাই বুঝতা না তুমি এসব। আমরা প্রত্যেকে ম্যানেজ করে চলি আপনাদের লাগলে কইন এইসব বিষয় না । 

যদি অবৈধভাবেই হতই তাহলে একদিনে সারা জেলার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা ইটের ভাটা ছাড়া বাকি সবকটি বন্ধ করতে হবেই। কাগজপত্র কিছুই সঠিক ভাবে নাই। প্রকাশ্যে কয়লার আগুনের বদলে লাকারী পুড়ে ব্যবস্থা নেন। কোন ধরনের কার্যক্রম তো আজ পর্যন্ত আমার চোখে পড়ে না ছোট ভাই । তাকে জিজ্ঞেসা করতেই এমন ভাবে উত্তর উপস্থাপন করল নিজেই মুখ ঘুরিয়ে নিতে হল নিজেকে। 

মানুষের বসবাসের উপযোগী পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে অনতিবিলম্বে এই সকল অবৈধ ইটভাটাগুলোকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

Bootstrap Image Preview