সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের সেই বিতর্কিত ওসি আবুল হাসেমকে অবশেষে জনস্বার্থে বদলি করা হল।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে ওসি আবুল হাসেম জামালগঞ্জ ত্যাগ করেন। এর আগে বুধবার রাতেই তিনি নবাগত ওসি মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে ইসলামকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেন।
জেলা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র ওসি আবুল হাসেমের জনস্বার্থে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আপাতত তাকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ওসি হিসাবে আবুল হাসেম সুনামঞ্জের জামালগঞ্জ থানায় দায়েত্বভার গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল বুধবার সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খানের এক আদেশে তাকে জামালগঞ্জ থানা তেকে বদলিপুর্বক জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ছিল ১০ মার্চ। ভোট গ্রহণের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন থেকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে ওই উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন।
প্রধম ধাপে স্থগিত হওয়া জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ নির্বাচন কমিশনে জামালগঞ্জ থানার ওসি আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবির লিখিত অভিযোগ করেন।
গত ১২ মার্চ সাবেক ওই উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তদন্ত করে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্ট ইসিতে প্রেরণ করেন।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ষড়যন্ত্র ও হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা, হকিষ্টিক, লাঠিসোটা, বাঁশ, রড ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ এনে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরেছেন জামালগঞ্জ থানার ভীমখালী ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারের পঞ্চগ্রাম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে আসামিরা নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হাজির হলে এজাহারে উল্লেখিত প্রতিবন্ধী তারা মিয়া ও অন্যান্য আসামিরা ৬০ থেকে ৭০ জন রামদা, হকিস্টিক, বাঁশ, রড ও দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। পরে গত ২২ জানুয়ারি ওই মামলায় তারা মিয়া জামিন নিতে হাইকোর্টে যান।
পরবর্তীতে জামিন শুনানিতে অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী তারা মিয়ার ছবিসহ প্রকাশিত দেশের একটি শীর্ষ ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবন্ধী একজন মানুষ তারা মিয়া। ডান হাত একেবারেই নাড়াতে পারেন না তিনি। তিনিই নাকি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে নির্বাচনের দুই দিন আগে হকিস্টিক, রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন। পুলিশের মামলায় সেই সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন হাইকোর্টে হাজিরা দিতে। তারা ছবিসহ প্রতিবেদন একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত হলে সারা দেশে একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশের গায়েবি মামলা নিয়ে ফের নানামুখী সমালোচনা শুরু হয়।
ওই মামলাটি থানায় রেকর্ডভুক্ত করা হয় ওসি আবুল হাসেমের সার্বিক নির্দেশনা। যে কারনে ওই মামলায় একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে আসামি করায় ওসি সারা দেশে বিতর্কিত হন।
শুধু এখানেই শেষ নয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন জামালগঞ্জ ইউএনও’র কার্যালয়ে ওসি হাসেম সরকার দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাত ধরে মনোনয়নপত্র দাখিল কলে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়। এ নিয়ে দেশের শীর্ষ দৈনিকসহ অন্যান্য স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে সেই হাত ধরে মনোনয়পত্র দাখিলের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হলে নানামুখী সমালোচনায় পড়তে হয় ওসি আবুল হাসেমকে।
এর আগে ওসি আবুল হাসেম পুলিশের সিলেট রেঞ্চের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানায় বদলি হয়ে দায়েত্বপালনের পর নানা বিতর্কিত কমকান্ডের মুখে বার বার বদলি হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালগঞ্জের একাধিক লোকজন জানান, জামালগঞ্জ থানায় যোগদান করার পর থেকেই মামলার ফাঁক-ফোঁকর ছাড়াও নানা মহলকে খুশী করতে গিয়ে ওসি থানাকে সালিসখানায় পরিণত করেন। জমি-জমা বসত বাড়ি নিয়ে নিয়মিত সালিস বৈঠকের মাধ্যমে এক পক্ষকে জিতিয়ে দিয়ে তিনি নিজেও নিজের আখের গুছিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাতে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খানের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের নিকট জামালগঞ্জ থানার ওসি আবুল হাসেমের বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বললেন, জনস্বার্থে আবুল হাসেমকে বদলি করে আপাতত পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।