Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জীর্ণশীর্ণ দশায় পাঠদান, বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৫ AM
আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩৫ AM

bdmorning Image Preview


দীর্ঘদিন ধরে জীর্ণশীর্ণ দশা নিয়ে কোনোরকম পাঠদান কার্যক্রম চলছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত ছনখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ। এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১৫ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জীর্ণশীর্ণ দশা নিয়ে কোনো রকম চলছে বিদ্যালয়টি। শ্রেণী আর আসন সংকটের কারণে বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।

সাতগাঁও এলাকার বাসিন্দা শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সম্পাদক সাংবাদিক এম ইদ্রিস আলী বিডিমর্নিংকে জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেহাল দশা নিয়েই চলছে সাতগাঁও চা বাগান এলাকায় অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি।

তিনি আরো জানান, এ বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চা শ্রমিকদের সন্তান। চরম দারিদ্রতার কারণে এমনিতেই চা শ্রমিকের সন্তানরা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। তার মধ্যে এমন জরাঝীর্ণ বিদ্যালয় আসন সংকট, এমনকি মাটিতে বসে পড়াশুনা করতে হচ্ছে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকেই কোমলমতি এসব শিশুদের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হওয়াটা একান্তই জরুরি। আর কর্তৃপক্ষ সেটা করতে পারছেনা বলেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। বিশেষ করে চা বাগান এলাকাগুলোতে যে সমস্ত বিদ্যালয়গুলো রয়েছে এসবের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের অবস্থাই চরম খারাপ অবস্থা। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চা শ্রমিকের সন্তানদের সংখ্যাই বেশি।

এসব সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা রোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুতই চা বাগান এলাকায় অবস্থিত সবক'টি বিদ্যালয়ের ভবন সংকটসহ সকল সমস্যা নিরসন করে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। একমাত্র তবেই অবহেলিত কোমলমতি চা-শ্রমিকদের সন্তান শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা সম্ভব।

তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির জানায়, ঝড়ের দিন আসলে ঘর নড়াচড়া করে এবং বৃষ্টির পানিতে বইপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।

চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র বিজয় জানায়, টয়লেট আর পানির জন্য আমাদের খুব সমস্যা হয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিতা দেব জানান, বিশেষ করে ঝড় তুফানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বেশ বিপাকে পড়েন। তীব্র ঝড় শুরু হলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সমস্ত শিক্ষক পার্শ্ববর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেন। তাই এই দ্রুতই এই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

শ্রীমঙ্গল পূবালী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক বাবুল দাশ বলেন, একদিন একটি বিশেষ কাজে ঐ এলাকায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে বিদ্যালয়টি আমার চোখে পরে। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো কৃষকের পরিত্যক্ত কোনো ঘর হবে।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি দেখে প্রথমে আমি বুঝতেই পারিনি আসলেই এটি কোনো বিদ্যালয়। তাই অনেকটা কৌতুহল নিয়ে কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলাম, দেখে আমিতো অবাক। দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত গতিতে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে আর ঠিক এই মুহূর্তে এসে বাঁশ, ছন আর পুরাতন জং ধরা ঢেউটিনের বেড়া দিয়ে নির্মিত ছোট ছোট ৩টি কক্ষে ব্রেঞ্চের অভাবে মাটিতে বসে পাঠদান করছেন কোমলমতি শিশুরা।

এটা আমার মতে একেবারেই অমানুবিক মনে হয়েছে তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুতই বিদ্যালয়টিকে ভবনে রূপান্তরিত করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট। শ্রেণিকক্ষ আর আসনের অভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেমন শিক্ষা উপযোগী ভালো পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি শিক্ষকদেরও সঠিকভাবে পাঠদানে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে বলেও অভিযোগ করেছেন নকুল দেবনাথ নান্টু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে সাতগাঁও চা বাগানের ৩৩ শতক ভূমি বরাদ্দ নিয়ে চার কক্ষবিশিষ্ট একটি কাঁচাঘর তৈরি করে বিদ্যালয়টি প্রথম স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের ১ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় জাতীয়করণ করা হয়। এরই মধ্যে জাতীয়করণের পর আরও পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। জাতীয়করণ হলেও বিদ্যালয়টি ঠিক আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠার ১০ বছর অতিবাহিত হলেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে আজও পর্যন্ত বিন্দু পরিমান উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি আজও পর্যন্ত একটি পাকা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি সরকার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি ছন বাঁশ আর টিন দিয়ে নির্মিত। কিছু কিছু স্থানে ছন সরে গিয়েছে, সেই সাথে বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা টিনে জোড়াতালি দেয়া, টিনগুলোতে জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই উপর দিয়ে পানি পরে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের বসার জন্য নেই পর্যাপ্ত আসন। শুধু তাই নয় নিরাপদ খাবার পানি, উন্নত স্যানিটেশনের পাশাপাশি নেই অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন।

সাতগাঁও চা বাগান ছনখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজভী আক্তার ও ঝর্না কৈরী বলেন, একদিকে বিদ্যালয়ের চারপাশে কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় মূল রাস্তার পাশ ঘেঁষে খোলা মাঠে গড়ে ওঠা এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের নিয়ে সারাক্ষণ দুর্ঘটনার ভয় কাজ করে। খেলার ছলে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা সড়কে ওঠে যায়।

এই দুই শিক্ষক জানান, আসন আর ভবন সংকটে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। শত প্রতিকূলতা নিয়েও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৫ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।

শিক্ষকরা জানান, আমরা শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সামগ্রী হিসেবে বিভিন্ন খেলনা ক্রয়ের জন্য বছরে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ও অন্যান্য কাজের জন্য বছরে ৪০ হাজার টাকা সরকারি সহযোগিতা পাই। এছাড়া খাতাপত্র কেনার জন্য প্রতিমাসে ৫০০ টাকা ও উপবৃত্তির জন্য মাসে ১ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো সুযোগ সুবিধা আমরা পাই না।

সাতগাঁও চা বাগান ছনখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো উপজেলার রাজপাড়া, এম আর খান, পুটিয়াছড়া, জুলেখানগর, শিশেলবাড়ি, জঙ্গলবাড়ি, হরিণছড়া, বর্মাছড়া, দিনারপুর, রাজঘাট (লালটিলা) চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোরও একই অবস্থা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বিডিমর্নিংকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে যে সকল বিদ্যালয়ে ভবন নেই সেই সব বিদ্যালয়গুলোর ভবন নির্মাণ কাজ দ্রুতই শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডারও হয়ে গেছে। এখন শুধু ভবন নির্মাণের অপেক্ষা।

Bootstrap Image Preview