নাটোরের সিংড়ায় ভুয়া দলিল করে আনোয়ার হোসেন আলীরাজ নামের এক সাংবাদিকের ঘর-বাড়িসহ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে। ভুয়া দলিল জায়েজ করতে স্ত্রীর নামে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের আগপাড়া শেরকোল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্থ ওই সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীসহ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ ওই সাংবাদিককে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৫৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ৪৩৬৩ নম্বর দলিলমূলে আজিরন বেওয়া নামে এক নারীর কাছ থেকে ২৯ শতাংশ জমির মধ্যে তার পিতা আজগর আলী ১০ শতাংশ এবং মা নকিরন নেছা নামে ১০ শতাংশ জমি খরিদ করে। মূল মালিকের নামে ৯ শতাংশ জমি থেকে যায়।
১৯৯৩ সালের ১৬ জানুয়ারি আজগর আলী বাকী ৯ শতাংশ জমি খরিদ করে একই বছর ২৭ অক্টোবর মারা যান। মারা যাওয়ার আগে ১৯৯১ সালে সিংড়া সহকারী জজ আদালত নাটোর (সিংড়া কোটে) ভুয়া দলিল দাবি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নম্বর ৭৭/৯১।
আফছার আলীর দাবি, নালিশী তফসিল ভূমি তিনি খরিদ করেছেন। পরবর্তিতে তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের নামে হস্তান্তর করে। ১৯৯৩ সালে আজগর আলীর মৃত্যুর পর প্রতিবেশী আফছার আলী আনোয়ার হোসেন আলীরাজ ও তার বোন ময়না খাতুনকে মারপিটের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক আদালতে নিয়ে আইনজীবীর যোগসাজসে সোলেনামার মাধ্যমে মামলা (ডিসমিস) করে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়।
সিংড়া, নাটোর ও রাজশাহী সাব-রেজিষ্টার অফিস তল্লাশি করে আফছার আলীর নামে কোন দলিলের হদিস পাওয়া যায়নি। তাহলে তিনি কিভাবে ওই জমি তার স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করলেন?
এদিকে মামলার নথিতে দেখা গেছে, সোলেনামার মাধ্যমে এক তরফা ডিগ্রি নিতে আদালতে পরপর দুইটি দরখাস্ত দাখিল করে। তবে তৎকালীন বিচারক আবু সাইদ জোয়ারদার সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন,আমার দৃঢ় বিশ্বাস সোলেনামা দুইটি যোগ সাজসী।
সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আলীরাজ বলেন, আমার মা নকিরন নেছা মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশী আফছার আলী জোরপূর্বক জমি দখল নিয়ে আমার পিতা আজগর আলীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে টিনের ঘরসহ সোনা-দানা লুট করে যায়। তিনি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তখন ভয়ে কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ভূয়া দলিল জায়েজ করতে আফছার তার স্ত্রীর নামে জমি হস্তান্তর করেছে।
তিনি আরো বলেন, শুনেছি আমার মা একজন বীরাঙ্গনা। তিনি ১৯৭১ সালে পাকসেনা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়ে ১৯৭২ সালে মারা গেছেন। তবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম আসেনি।
এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সকল সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। উপজেলার আগপাড়া শেরকোল গ্রামের আব্দুল মজিদ মোল্লা, আসমত আলী মন্ডল, ইউসূব আলী প্রাং রওশন আলী সরকার আব্দুল হামিদ প্রাং, মানিক সরকার, রজব আলী ও ইসমাইল মৃধা জানান, নকিরন নেছা ১৯৭১ সালে পাকসেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছিল। পরে স্বাধীনতার ১ বছর পর মারা যায়। সিংড়া প্রেসক্লাব,সিংড়া মডেল প্রেসক্লাব,সিংড়া উপজেলা প্রেসক্লাব ও চলনবিল সাংবাদিক ইউনিয়নের কর্মরত সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধারা ওই সাংবাদিককে পূর্নবাসনের দাবী জানিয়েছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল ওয়াদুদ ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে ভবিষ্যতে সুযোগ থাকলে অবশ্যই দেখা হবে।
শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনে আজগর আলীর স্ত্রী নকিরন নেছা ১৯৭২-৭৩ সালে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সিংড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।