Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দুই ভাইয়ের জঙ্গি হয়ে ওঠার গল্প

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩৮ PM
আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩৮ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। এরমধ্যে শাহরিয়ার নাফিস ওরফে আম্মার হোসেন (২০) ও রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪) বগুড়ার ধুনট উপজেলার চরখুকশিয়া গ্রামের রেজাউল করিম টিপুর ছেলে।

রবিউল তাবলীগ জামায়াতের তিন চিল্লার সাথী এবং তার ছোট ভাই আম্মার হোসেন ৫ পারা কোরআনের হাফেজ ও দাখিল পরীক্ষার্থী। শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই সহোদর ভাইয়ের গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ জানার পর তাদের পরিবার ও গ্রামের মানুষের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, রেজাউল করিম টিপুর অভাব অনটনের সংসার। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান। মেয়ে ২টিকে অনেক দিন আগে বিয়ে দিয়েছেন। ১৯৯২ সাল থেকে নরসিংদির মাধবদি এলাকায় পাওয়ারলুম কারখানায় কাজ নেয় রেজাউল। তার ইচ্ছা ছিল দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

সেই লক্ষ্য নিয়ে বড় ছেলে রবিউলকে গ্রামের পাশে মহিশুরা দাখিল মাদরাসায় ভর্তি করেন। সেখান থেকে ২০১০ সালে দাখিল পাস করে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল থেকে ২০১৫ সালে ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করে রবিউল। এরপর ওই বছরই তাবলীগ জামায়াতের তিন চিল্লায় নাম লেখান রবিউল। প্রায় এক বছর ধরে তাবলীগ জামায়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান। প্রায় ২ বছর ধরে বাবার সাথে একই কর্মস্থলে পাওয়ারলুম কারখানায় কাজ করছে রবিউল।

এদিকে ছোট ছেলে আম্মার হোসেনকে প্রথমে মহিশুরা দাখিল মাদরাসা ও পরে ২০১৩ সালে বগুড়া মারকাজ মাদরাসায় ভর্তি করে। ২০১৬ সালে মহিশুরা দাখিল মাদরাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় পাশ করে। এরপর সিরাজগঞ্জের আলমপুর কওমী মাদরাসা, নরসিংদির মাধবদি দরগাবাড়ি কওমী মাদরাসা ও ঢাকার যাত্রাবাড়ি আবু বক্কর কওমী মাদরাসায় লেখাপড়া করে সে ৫ পারা কোরআন হেফয করেছে।

এ ছাড়া আম্মার হোসেনের সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বেতগাড়ি দাখিল মাদরাসা থেকে চলতি দাখিল পরীক্ষায় তার অংশগ্রহণের কথা ছিল। প্রায় ৫ মাস আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি মেঘনা সেতু এলাকায় মশার কয়েল তৈরীর কারখানায় কাজ নেয় আম্মার হোসেন।

উপজেলার চরখুকশিয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক আব্দুস কুদ্দুস ও কৃষক জামাল উদ্দিন, ইব্রাহীম হোসেনসহ অনেকে জানান, ছোট বেলা থেকেই রবিউল ও আম্মার হোসেন গ্রামের সুবোধ ছেলে হিসেবে পরিচিত। ভদ্র ও নমনীয় স্বভাবের। বেশীরভাগ সময় তারা গ্রামের বাইরে থেকেছে। তবে মাঝে মধ্যে গ্রামে এসে সবাইকে নামাজ পড়ার কথা বলেছে। গ্রামের মসজিদে ইমামতি করেছে। ইসলামী শরীয়া মতে জীবন যাপন করতে বলেছে। বে-নামাজির হাতের কোন কিছু খেত না।

প্রায় ৩/৪ বছর ধরে তাদের বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। পরিবারটি কঠোর ভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তারপরও কিভাবে যে দুই ভাই জঙ্গি হয়েছে তা কখনও বুঝতে পারিনি। তাদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় কিছুই বোঝা যায়নি। তবে এসব কাজে কারো যাওয়া ঠিক না।

এ বিষয়ে রেজাউল করিম টিপু বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে হয়তো মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। তার এমন পরিবর্তন আমি বুঝতে পারিনি। আমি বিশ্বাসও করতে পারছি না আমার সোনার ছেলেরা এ ধরনের কাজ করবে। ভেবেছিলাম ছেলেরা আলেম হবে, কিন্ত এখন শুনছি জঙ্গি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘যারা আমার কোমলমতি দুই সন্তানকে জঙ্গি বানিয়েছে তাদের আমি শাস্তি চাই। আমি চাই আর কারো সন্তান যেন এ ধরনের জঙ্গি সংগঠনে না জড়ায়। এ জন্য আমি সরকারের কাছে কঠোর পদক্ষেপ আশা করছি।

Bootstrap Image Preview