Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাসিত হয়েও শঙ্কা কাটাতে পারছেন না প্রথম ভোটাররা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪৮ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:০৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ বিডিমর্নিং


রাত পোহালেই ভোট। ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে যেমন নির্বাচন কমিশন তাদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করছে, তেমনি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে দু’দিন আগে। কিন্তু ভোটের আমেজ নতুন ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। দূর-দূরান্তের কর্মস্থল–শিক্ষাস্থল থেকে তরুণেরা বাড়ি যায় ভোট দিতে। এই নির্বাচন নিয়ে তাঁরা যেমন উচ্ছ্বাসিত, তেমনি তাঁদের মধ্যে শঙ্কাও কাজ করছে।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ। আর জীবনে প্রথমবারের মতো নতুন ভোট দিতে যাচ্ছেন ১ কোটি ২৩ লাখ। ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী তরুণ প্রজন্ম ভোটার  ২২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক চতুর্থাংশ তরুণ ভোটারের দিকে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক দলগুলো।  

একেকটি ভোট যেন একেকটি ইট, গণতন্ত্রের ইমারত সেসব ইটে গড়া। নতুন ভোটারদের কাছে এই ইমারত যতোটা না গণতন্ত্রের ঠিক ততোটায় আবেগের। সাহস দেখানো, রক্ত ঝরানো, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোতে কখনো পিছপা হয়নি তরুণেরা। মুক্তিযুদ্ধে সশরীরে লড়াই করেছিল ৫ লাখ তরুণ। আর আমাদের আছে প্রায় আড়াই কোটি তরুণ ভোটার!

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রথম ভোটারদের অভিমত, কেমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চান, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ কেমন চান সে বিষয়ে জানতে চেয়ে তাদের মতামত তুলে ধরা হলো-

সুষ্ঠু ভোটকেন্দ্রের প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা তাসলিমা হোসেন নদী বলেন, ‘আমি ঢাকা ১০ আসনের ভোটার। আসলে প্রথম ভোটার হিসেবে আমি বেশ এক্সাইটেড। তাও কেন যেন আনন্দিত হতে পারছিনা, বরং একটু দুশ্চিন্তাই লাগছে। আসন্ন নির্বাচনটা ভয়াবহ, মানুষের মুখে এক প্রকার আচরণ করছে, মনে আরেক। প্রাক্তন সরকারের সমালোচনা করবো না, তবে যেহেতু তিনি কিছু কাজ শুরু করেছেন, তাকে সেটা শেষ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের দেশটা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে, দলগত নিজেদের রেশারেশি আর কতদিন! ভোট কেন্দ্র নিয়েই যত দুশ্চিন্তা, জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারি কিনা, নাকি আবার কোনও দুর্ঘটনা হয়, তারই যত ভয়। এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় ভোট দিতে যাবো।‘

নিজের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তওকির তাসনিম অয়ন বলেন, ‘নোয়াখালী-৪ এর ভোটার আমি। ভোট নিয়ে তেমন কোন অনুভূতি নেই। নিজের ভোটটা নিজে দিতে পারবো কিনা সেটা নিয়েই সংশয়। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য নেই। মন্তব্য হচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। একটা দেশের সবচেয়ে বড় পাওয়ার হচ্ছে সেই দেশের জনগণ। আর এই পাওয়ারটা ইমপ্লিমেন্ট করার জায়গাটা হচ্ছে ভোট। আর ভোটের সময়ই যদি আমরা 'সংশয়' নিয়ে থাকি তাহলে বুঝতে হবে আমাদের অবস্থা আসলে ভালো না। আমরা আসলে ভালো নেই। বর্তমান সরকার বড় বড় ব্রিজ ঠিকই দিয়েছে, জিডিপি বেড়েছে, মাথা পিছু আয় বেড়েছে কিন্তু আমার নিজের সিকিউরিটিটাতো নেই। উটপাখির মত বেঁচে থেকে লাভ কি?  ভোট কাকে দিব জানিনা। নিজের এলাকার প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করলে আমি হয়তো নৌকায় ভোটটাই দিব। কারণ এলাকায় অন্য যেসকল প্রার্থী দাঁড়িয়েছে তাদের সবার চেয়ে নৌকার প্রার্থীকেই যোগ্য মনে হয়েছে। আমাকে যদি কোন দল এসে জিজ্ঞেস করে আমার থেকে কি চাও? আমি শুধু একটা জিনিসই চাইবো, আমাকে সিকিউরিটি দিন। কথা বলার অধিকার দিন। এই সিকিউরিটির মধ্যে নিজের সিকিউরিটি, জব সিকিউরিটি, চিকিৎসা সিকিউরিটি সবই ইনক্লুডেড পাশাপাশি পুলিশকে জনগণের বন্ধু বানান, আস্থার জায়গা বানান। ঘৃণা বা ভয়ের না।‘

ব্রাহ্মবাড়িয়া ২ আসনের প্রথম ভোটার অংকন পুরকায়স্থ বলেন, 'অবশ্যই প্রথম ভোটার হিসেবে খুবই আগ্রহী। আমাদের এলাকায় সকল প্রার্থীদের অংশগ্রহণ সঠিক মনে হয়েছে। ভোট দিবো এমন একজনকে যে গত সময় ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছে। নিজের ভোট নিজে দিতে পারার মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রের আন্তরিক ও উৎসবমুখর পরিবেশ আশা করছি।' 

মার্কা দেখে নয়, যোগ্যতা দেখে ভোট দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবর রহমান সুমন বলেন,  ‘সাতক্ষীরা-৩  এর ভোটার আমি। প্রথমবার দেশের সরকার গঠনের জন্য পরোক্ষ মতামত দিতে পারবো সে কারণে উত্তেজনা কাজ করছে। ভোটের মাত্র আর এক রাত বাকী। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়নি দেশে ভোট হচ্ছে। তেমন কোন উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়েনি। এছাড়া সকল রাজনৈতিক দল প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাইনি। সেকারণে সুষ্ঠ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমি চাই মানুষ যাকেই ভোট দিক না কেন, যেন নিজের ভোটাধিকারটা নিজে প্রয়োগ করতে পারে। আর মার্কা দেখে নয়, যিনি যোগ্য এবং এলাকার প্রধান প্রধান অসুবিধা নিয়ে কাজ করবেন, এলাকায় থাকবেন, দলের নয় গণ মানুষের কথা শুনবেন তাকেই প্রথম ভোটটি দিতে চাই। ভোট কোন যুদ্ধ নয়,ভোট হচ্ছে উৎসব। তাই উৎসবমুখর পরিবেশ চাই ভোটকেন্দ্রে। কোন শঙ্কা না নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবো এমন পরিবেশ আশা করছি।‘

বাবা-মা নিষেধ করায় ভোট দিতে হয়তো যাবেন না সে আক্ষেপটি জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা বাশার ইশিকা বলেন, 'দেশের পরিস্থিতির উপর তেমন ভরশা করতে পারিনা। তাই সুষ্ঠু পরিবেশ আশা করলেও আদৌতে কাল কি হবে ঠিক জানিনা। তাছাড়া কিছু সমস্যার জন্য আব্বু আম্মু মানা করে দিয়েছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার। তবে প্রত্যাশা রাখি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের।' 

বেকার সমস্যা নিরসনের দাবি নিয়ে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার মুন্নি বলেন, ‘প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন, আমরা চাই সে যোগ্যতাসম্পন্ন হোক। আমি এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই, যে বিগত দিনে যুব সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন এবং সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। পাশাপাশি বেকার সমস্যা নিরসন, বরিশালের অবকাঠামোগতদিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই ভোট দিতে চাই। আর প্রার্থীকে অবশ্যই তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।‘

গুজব রটানো বন্ধের দাবি জানিয়ে ঢাকা ১৭ আসনের প্রথম ভোটার সৃষ্টি আক্তার বলেন, ‘এবারই আমার প্রথম ভোট। আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। কিন্তু গতকাল ব্যাচেলরদের চলে যাওয়া কিংবা রাতে পুলিশ ব্যাচেলরদের তুলে নিয়ে যাবে এমনসব ভুয়া নিউজের পর আব্বু বাড়ি থেকে ফোন করে বলে দিয়েছে ৩০ তারিখ ঘর থেকে বের না হতে। হোস্টেল সুপারকেও বলে দিয়েছে আমি যেন বের হতে না পারি। আমি মনে করি আসলে আমরা তরুণরা আঠারো বছরের দৌলতে ভোটার হয়েছি কিন্তু বাক স্বাধীনতা ঠিক করে পাইনি।‘

Bootstrap Image Preview