Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

`পুরুষের চরিত্রে প্রশ্ন তোলার জন্যে নারীর প্রধান অস্ত্র এখন #মিটু'

বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৩ PM
আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


আরিফ চৌধুরী শুভ।।

বাংলাদেশে নারীর ওপর যৌন হেনস্তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে '#মিটু' আন্দোলন জোরদার হচ্ছে দিনদিন। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে হ্যাশট্যাগ মিটু’ নামের এই আন্দোলনের শুরু হয় মূলত ২০০৬ সালে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘মাইস্পেস’-এ আফ্রিকান-আমেরিকান সমাজকর্মী তারানা বুর্ক তের বছর বয়সে যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে শুরু করেন এই আন্দোলন।

তার বার্তা ছিল তুমি একা নও, আমিও আছি। মিটু নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণও করেছিলেন তিনি। তারপর থেকে একে একে যোগ হয়েছে অনেক নাম। অভিনয় ও বিনোদন জগত থেকে করপোরেট, রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, পাইলট থেকে সাধারণ নারীরা এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। মিটু হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন নিজের যৌন হয়রানি হওয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।

এবার বিখ্যাত কলামিস্ট প্রফেসর আলী রিয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে মিটু লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ছাত্রী। আলী রিয়াজ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর। ঢাবির ওই সাবেক ছাত্রী বতর্মানে কানাডায় থাকেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করছেন অনেকেই। আলী রিয়াজের ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে  ফেসবুকে নিজের অভিমত দিয়েছেন ঢাবির আন্তর্জাতিক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আরিফ চৌধুরী শুভ। তিনি লেখেন...

সবাই #মি-টু লেখে কিন্তু আমার #Me_Too লেখা কি ঠিক হবে?

আমি মি-টু লেখলে তো কালই এই সমাজের নারীরা আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন। আমাকে ভিলেন বানিয়ে ছেড়ে দিবেন। অনেকেই ধরে নিবেন হয়তো সত্য হয়তো বা কিছু একটা। আমি সমান দোষের ভাগিদার হবো আপনার বিচারে। এটাইতো সমাজের বাস্তবতা, তাই না?

এই শহরে যতগুলো টিউশানি ছেড়েছি আমি, তার বেশির ভাগই ছিল নারী গঠিত কারণ। কথা না শুনলে টিউশানির টাকা নিয়ে গড়িমশি করতেন। বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হতো টিউশানি। একদিনতো একজনে বলেই দিলেন আপনার দরকার মাস শেষে টাকার, আমার মেয়ে পড়ুক আর না পড়ুক আপনি এসে বসে থাকবেন, আমার সাথে গল্প করবেন। মা-মেয়ে বোন-খালা সবার চোখে আমি যেন বাজারের জৈষ্ঠ্য মাসের আম। স্বনামধন্য কলেজের আরেক ছাত্রীতো একদিন বলেই দিলো স্যার বাসায় কেউ নেই, আপনি চাইলে আমার বেডরুমেও আমাকে আজ পড়াতে পারেন। এরকম কত ঘটনা বলবো। বাকিটা ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছি না। বিবেক দিয়ে বুঝে নিন। তাই বলে সব মেয়েরা খারাপ না। সব ছেলেরাও ভালো না। এইরকম অভিজ্ঞতা অনেক মেয়ে ছেলের জীবনে কমবেশ আছে। কিন্তু আপনি কিভাবে দেখছেন বিষয়টি?

যেমন আজকে এই সমাজে জৈনিক এক নারী ভাসা ভাসা তথ্যে Bangladeshi American political scientist and writer, Distinguished Professor at Illinois State University এর Ali Riaz স্যার সম্পর্কে মি-টু লেখে আলোচনায় আসার চেষ্টা করছে। আমি জানি না তিনি কতটুকু সফল হবেন। তবে আমি সত্য মিথ্যের পার্থক্য করার আগে উত্থাপিত তথ্যের গুনগত বিচার করলেও আপনি অভিযোগকারী ফেঁসে যাবেন। শুধু আলী রিয়াজ স্যারই নয়, আজ ঢাবির আইবিএর শিক্ষকসহকারী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ স্যারকে মিথ্যে ধর্ষণ মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। এইসব কি থামবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন এক ক্লাসে ক্লাস টিচারের লেকচারের মাঝে নারী ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশ্ন করেই আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম আমাদের মধ্যেও এমন অনেক পুরুষ আছেন যারা নারীবাদে পুরাই অন্ধ। আবার অনেকেই মনে করেছেন আমি নারী বিদ্ধেষী। বিষয়টা আসলে তা নয়। যে মানুষটা যতটুকু সম্মান পাওয়ার, তাকে আপনি কেন সেই সম্মান থেকে বঞ্চিত করবেন। আমার পারসোনাল অবজারবেশন, পুরুষ শাসিত সমাজে ৯৫% নারীই করুণার দৃষ্টিতে যোগ্যবান। ব্যাখ্যাটা অনেক লম্বার। উপলব্ধিটা আপনার মতো করে আপনি করতে থাকুন।

মানুষ মাত্রই বিপরতি লিঙ্গের প্রতি যৌনতা আকর্ষণ হতেই পারে। আমিও তুলসি পাতা নই। কিন্তু নিজের স্বার্থের কারণে যৌনতায় জড়িয়ে স্বার্থ ফুরালে, না হয় স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে কেউ যদি মি টু লেখেন, তাহলে সেটা কি তার অপরাধ না আমার? এখনো আমার কাছে বহুপরিচিত জনের তথ্য আছে যারা বসকে খুশি করে চাকুরিটা নিয়েছেন। তারা মনে করছেন ক্যারিয়ারের জন্যে যোগ্যতার বাইরে এটা তাদের জন্যে আরেকটি পরীক্ষা। এখানে দোষ কার? কিন্তু ঐ অফিস থেকে বস চলে যাবার পরে আপনি শুদ্ধ! বাহ কি চমৎকার আপনার আত্মকথন! বেশিরভাগ মিটুই এখন এভাবে তৈরি হয়। গল্পের রসে আমরা পড়ে আনন্দ পাই মধ্যরাতের চটি গল্পের মতো। প্রশ্ন তুলি অভিযোগে জড়িত ব্যক্তি ও অভিযোগকারীর চরিত্রে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।

আমার কাজে কর্মে, গুনবিচারে আমার প্রতি কারো আকর্ষণ অনুভব করা দোষের কিছু নয়। ঠিক আমিও যদি কারো প্রতি এমনটি অনুভব করি, তাহলে কি দোষ করে ফেলবো? কিন্তু আমি যদি তাকে প্রশ্নয় না দেই বা সে যদি আমাকে প্রশ্নয় না দেয় তাহলে কি মি-টু লেখে নিজেকে শুদ্ধ ঘোষণা করবো আমরা? এমন ঘটনার মুখোমুখি যারা, তারা জীবনের এই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে শুদ্ধতার চর্চা করাই উত্তম বলে আমি মনে করি।

পতিতালয়ের কোন পতি যদি খদ্দের সেজে বিক্ষ্যাত কোন মানুষের নামে মি-টু লেখে তাহলে তার মূল্য কি দিয়ে বিচার করবেন? সুতরাং এই সকল ব্যক্তি আক্রমন বন্ধ করুন। তার জায়গায় আপনি থাকলে আপনিও কম করতেন না। আপনি সুযোগটি পেয়েছেন বলার, কিন্তু করার সুযোগ পাননি।

আমার যদি কাউকে ভালো লাগে, তাহলে সে যদি নিজেকে সম্পর্কে জড়িয়ে মিটু পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে এই দোষ কার? আমার নাকি তার, না উভয়ের? আবার আমাকে পছন্দ হয় কিন্তু কিছু দূর চলার পরে তার চাওয়া পাওয়াগুলোকে যদি আমি প্রশ্রয় না দেই, তাহলে কি আমার বিরুদ্ধে মিটু লিখতে হবে। আমি জানি অনেকগুলো সত্য কথা অনেকেরই পছন্দ হবে না, কিন্তু অন্ধকারে সেই নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পায়, যে অন্তত মানুষ। যে সর্বময় মঙ্গল চায়। যে তার কর্মে অনুতপ্ত থাকে।

৩০ বছর আগের কোন ঘটনা উল্লেখ্য করে একটা স্টেটমেন্ট দিলেই তাকে বিশ্বাস করতে হবে সে শুধু মেয়ে মানুষ বলেই? একটা গল্প সাজিয়ে স্টেটমেন্ট দিলেই তাকে বিশ্বাস করতে হবে, কারণ আপনার অভিযোগটি যার বিরুদ্ধে তিনি এই সমাজের আইকন। আপনার চৌদ্দগোষ্টির ভন্ডামিতে যখন এই পৃথিবী অভিশপ্ত, তখন আপনার চরিত্রে আপনি আবিষ্কার করতে চান আরেকজন সজ্জন মানুষকে যে আপনার স্বার্থের পরিপন্থি, না হয় আপনি তার। আপনি ভিলেন। পুরুষের চরিত্রে প্রশ্ন তোলার জন্যে নারীর প্রধান অস্ত্র এখন মিটু।

লেখক- উদ্যোক্তা ও সংগঠক, নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন। শিক্ষার্থী(মার্স্টাস), আন্তর্জাতিক সর্ম্পক ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখাটি লেখকের ফেসুবক থেকে সংগৃহীত করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview