Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের কোন জেলায় কতজন এইডস রোগী আছে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০৩ PM
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১৬ PM

bdmorning Image Preview


এইচআইভি (এইডস) ঝুকিতে রয়েছে দেশের ২৩ জেলা। এসব এলাকায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনই রোগটির মোকাবিলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে, এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃর্ক ঘোষিত ‘নো ইয়োর স্ট্যাটাস’ অথার্ৎ ‘এইচআইভি পরীক্ষা করুন; নিজেকে জানুন’ শীষর্ক প্রতিপাদ্য ধারণ করে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস।

বাংলাদেশে এইচআইভি এইডস প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার বরাতে জানা গেছে, গত কয়েক বছর সরকারিভাবে এইডসের চিকিৎসা কলেবর বাড়ায় আক্রান্তদের মধ্যে সেবা নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে।

কিন্তু এরপরও দেশের ২৩টি জেলায় তুলনামূলকভাবে মাদকসেবী, পতিতাবৃত্তি, সমকামিতা, শিরায় মাদক নেয়া, অশোধিত রক্ত দান ও গ্রহণসহ যেসব আচরণ এইচআইভি সংক্রমণ ঘটায় এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

সম্প্রতি এক গবেষণায়ও দেখা গেছে এসব আচরণে অভ্যস্তদের মধ্যে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এইচআইভিতে আক্রান্ত। বিশেষ করে ঢাকায় শিরায় মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এইচআইভিতে আক্রান্তের হারও বেড়েছে। পাশাপাশি বিদেশফেরত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডস সম্পর্কের অসচেতনতা ও আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ লুকানোর প্রবণতায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদ্যদেরও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস-এসটিডি প্রোগ্রাম (এএসপি) সূত্রে জানা গেছে, এই মুহুর্তে বেশি ঝুঁকি চিহ্নিত ২৩টি জেলার মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ৯৪৭, গাজীপুরে ১৬৯, নারায়ণগঞ্জে ১৫২, মুন্সীগঞ্জে ২০৮, ময়মনসিংহ জেলা সদরে ৫২, কিশোরগঞ্জে ২৬, বরিশাল জেলা সদরে ৬১, পটুয়াখালীতে ৩৫, চট্টগ্রাম জেলা সদরে ৫৪২, কক্সবাজারে ১৯৭, কুমিল্লায় ৩২৫, চঁাদপুরে ১৫৩, সিলেট জেলা সদরে ৭৩৭, মৌলভীবাজারে ১৮৫, দিনাজপুরে ৩১, রাজশাহী সিটি কপোরেশনে ১২, বগুড়ায় ২৮, পাবনায় ৪১, সিরাজগঞ্জে ১৮, খুলনা সিটি করপোরেশনে ১৭২, বাগেরহাটে ২৩, যশোরে ১৩১ ও সাতক্ষীরায় ৬৪ জনসহ দেশের ২৩টি জেলায় ৪ হাজার ৩০৯ জনকে এইচআইভি পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় অঞ্চলে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে এইডস রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৯১, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৬৭১, সিলেটে ১ হাজার ৬২, খুলনায় ৫০৩, বরিশালে ১৩৭, রাজশাহী ১৪৪, রংপুরে ৫৩ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বতর্মানে দেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর মোট সংখ্যা ৫ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ৩০০ শিশু আছে। এখন পযর্ন্ত দেশে ৯২৪ জন এইডস রোগী মারা গেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লেও দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের কারণে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।পাশাপাশি আক্রান্তদের শনাক্তকরণ, চিকিৎসার জন্য এআরটি সেন্টার ও ওষুধ বিতরণ কাযর্ক্রমে ওএসটি সেবাদান তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে।

আবার গ্লোবাল ফান্ডিং বা বৈশ্বিক অথার্য়ন কমে যাওয়ায় এটি প্রতিরোধের লক্ষ্যমাত্র অজর্ন কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ জাতিসংঘের এইডস কমর্সূচির পরিসংখ্যান হিসেবে দেশে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা হওয়ার কথা ১৩ হাজার ২০০ জন। সেখানে এখন পযর্ন্ত শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৬ জন। সে হিসেবে শনাক্তের বাইরে রয়েছে ৭ হাজার ৬১৬ জন।

বিষয়টি সম্পর্কে এএসপির সিনিয়র ম্যানেজার আখতারুজ্জামান বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই দেশে এইচআইভি-এইডস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক ধরনের কমর্সূচি চালানো হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় ১ ডিসেম্বর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ২৩টি জেলায় এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার চালু করা হবে। তিনি দাবি করেন বৈশ্বিক পরিসংখ্যান হিসেবে বাংলাদেশে এইচআইভি-এইডসের বিস্তার মোট জনসংখ্যা অনুপাতে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের নিচে। যা তেমন উদ্বেগজনক নয়।

এদিকে, দেশে গত বছর (২০১৭ সালে) নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত ৮৬৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের ৩১ শতাংশ প্রবাসী। অথচ আগের বছরগুলোতে প্রবাসীদের আক্রান্তের হার ছিল ৩০ শতাংশের কিছুটা বেশি। যদিও প্রবাসীদের অনেকে তাদের এ রোগের বিষয়টি জানেন না।

আবার বিদেশে পরীক্ষা করে যাদের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে দেশে ফিরে বিষয়টি গোপন করে জীবনযাপন করছেন। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তার স্ত্রী ও গভের্র সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-এল (টিউবারকোলসিস অ্যান্ড লেপ্রোসি) ও এএসপির (এইডস-এসটিডি প্রোগ্রাম) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলামের বলেন, এইডস মানে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া এক সময় এমন মনে করা হলেও এখন এ ধারণার পরিবতর্ন হয়েছে। কারণ আক্রান্তরা চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। আর প্রবাসীদের মাধ্যমে যেন এইডস না ছাড়ায় সে জন্য বিমানবন্দরকে কীভাবে টেস্টের আওতায় আনা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।

ওই কমকর্তা বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ৯০-৯০-৯০ সূত্র পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে দেশে থাকা এইচআইভিতে আক্রান্ত মানুষের কমপক্ষে ৯০ শতাংশকে খুঁজে বের করে অন্তত ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। যারা চিকিৎসার আওতায় আসবে তাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৯০ শতাংশকে তুলনামূলক সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে টিকিয়ে রাখার অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে।’

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। সরকারের এইডস এসটিডি প্রকল্প ও সেবাদানকারী বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে বিভিন্ন কমর্সূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে আজ সকালে কৃষিবিদ ইনস্টিউিশনে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ রেডিও-টেলিভিশনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কমর্সূচি পালিত হবে।

Bootstrap Image Preview