Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্বপ্ন দেখানো সেই মানুষটির মৃত্যু বার্ষিকী আজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩৯ AM
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৪৭ AM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


বর্তমান প্রজন্মের মনে আজীবন একজন মেয়রের কথা মনে থাকবে। যে মেয়র স্বপ্ন দেখাতে পারতেন, যে মেয়র ঢাকাকে ধূসর থেকে সবুজ করার প্রত্যয় নিয়ে ছিলেন, যে মেয়র তার কর্ম দিয়ে ভক্ত তৈরী করেছিলো রাজধানীর সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামবাংলায়, যে মেয়র আদর্শবান হবার জন্য তরুণদের উজ্জীবিত করেছিলেন। আজ তারই মৃত্যুর এক বছর।

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত বছর ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হসপিটালে ৬৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় স্ত্রী রুবানা হক, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে তাঁর পাশে ছিলেন।

গত বছর ২৯ জুলাই তিনি ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর, তাঁকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হসপিটালে ভর্তি করার পর আইসিইউতে রাখা হয়। গত ১৩ আগস্ট চিকিৎসকরা তাঁর মস্তিষ্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটি শনাক্ত করেন। পরে অবস্থার উন্নতি হলে ৩১ অক্টোবর তাঁকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। পরে আনিসুল হকের শারীরিক অবস্থার খানিকটা উন্নতি হলেও হঠাৎ আবার তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। ফলে তাঁকে আবারো আইসিইউতে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই সে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করার পর ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচনের সময় নগরীর বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করে ‘এবার সমাধান যাত্রা’কে মূল প্রতিপাদ্য করে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন আনিসুল হক। ওই ইশতেহার তখন এসেছিল একটি বড় চমক হয়ে। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া আনিসুল হক রাজনীতিবিদ ছিলেন না, রাজনীতিতে এসে তিনি কী করতে পারবেন তা প্রমাণ করাও তাঁর জন্য ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সব দ্বিধার অবসান ঘটিয়ে আনিসুল হকের অভাবনীয় প্রচারণা কৌশল নির্বাচনে ভিন্নমাত্রার সূচনা করেছিল।

নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মতো নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতিতেও সফল ছিলেন আনিসুল হক।

আমরা জানি, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সাধারণত রাজনীতিবিদদের কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। কিন্তু নির্বাচনের আগে আনিসুল হক যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও সেসব প্রতিশ্রুতি পালনে তাঁকে আন্তরিক দেখা গেছে। মেয়র হওয়ার পর তিনি একে একে গাবতলীসহ ৯টি জায়গাকে পার্কিংমুক্ত করেন, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেন। এছাড়া বিমানবন্দর সড়কের যানজট কমাতে ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ, ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকার চাকা বাস সার্ভিস চালুসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করে এক আশাবাদের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। আধুনিক ঢাকার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা সফল করতে মেয়র হওয়ার পর থেকেই আনিসুল হক পুরোদমে কাজ করতে শুরু করেন। একটি মানুষই যে একটি শহরকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে এমন অনন্য নিদর্শনই নিজের কর্মের মাধ্যমে স্থাপন করেছিলেন আনিসুল হক।

আনিসুল হক আজ আর আমাদের মাঝে নেই। এরই মধ্যে গাবতলীর বাসস্ট্যান্ড এবং তেজগাঁওয়ের ট্রাকস্ট্যান্ড আবার নিজ নিজ জায়গায় ফিরে এসেছে। বর্তমান জায়গা থেকে কারওয়ান বাজার নবনির্মিত তিনটি পাইকারি বাজারে স্থানান্তর করার যে পরিকল্পনা আনিসুল হক করেছিলেন তাও আর বাস্তবায়িত হয়নি। বস্তুতই আনিসুল হকের অকাল মৃত্যুতে অপূর্ণ রয়ে গেছে ঢাকার উন্নয়নে দেখা তাঁর অনেক স্বপ্ন। নতুন রূপে সজ্জিত হতে শুরু করার পর মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলা বিবর্ণ ঢাকাকে এখন মানুষ যতবার দেখে, ততবারই আফসোস ভরে স্মরণ করে আনিসুল হককে।

উল্লেখ্য, আনিসুল হক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবেও অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ দশকে টেলিভিশনের উপস্থাপক হিসেবেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি।

Bootstrap Image Preview