Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লাউয়াছড়ায় বিপন্ন প্রাণীকুল 

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৪ PM
আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


একসময় মৌলভীবাজার জেলা ছিল ঘন বনাঞ্চলে আবৃত। যে কারণে এ জেলায় বাস ছিল অসংখ্য বন্যপ্রাণীর। কিন্ত সময়ের বিবর্তনে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এবং বনাঞ্চলে হাজার হাজার একর সরকারি খাস ভূমি বেদখল করে বাড়িঘর ও আনারস, লেবু বাগান গড়ে তোলায় এ জেলার বন্যপ্রাণীরা আজ বিলুপ্তির পথে।

বিলুপ্তির হাত থেকে টিকে থাকা অবশিষ্ট বন্যপ্রাণীর শেষ আশ্রয় লাউয়াছড়া। কিন্তু লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে রেললাইন, সড়ক পথ, বিদ্যুতের লাইন ও বন উজাড় করে লেবু বাগান করার কারণে এখানকার বন্যপ্রাণীগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্ন কারণে মারা পড়ছে অসংখ্য পশুপাখি।

লাউয়াছড়া বনের বুক চিরে বয়ে চলা রেললাইনের ওপর দিয়ে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫টি ট্রেন অতিক্রম করে। একইসঙ্গে এর ভেতর দিয়ে পাকা সড়কে গাড়ি চাপায় এবং বিদ্যুৎ লাইনে লেগে প্রায় প্রতিনিয়তই প্রাণ হারায় বাঘ, হরিণ, সাপ, বানর, উল্লুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি।

বিভিন্ন কারণে গ্রামীণ ঝোঁপ-ঝাড় কেটে ফেলার ফলে প্রায়ই লাউয়াছড়া বনের কিছু প্রাণী লোকালয়ে ছুটে গিয়ে ধরা পড়ে মানুষের হাতে। এই প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করে আবার বনে অবমুক্ত করা হয়। তাই গ্রামীণ ঝোঁপঝাড় রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কান্তি দে। 

তিনি বিডিমর্নিংকে বলেন, বনের ভেতর থেকে খাদ্যের সন্ধানে যে সমস্ত বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে যাচ্ছে আমরা সেই বন্য প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করে আবার লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করছি। এছাড়াও স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে সচেতনতামূলক সভা শীঘ্রই শুরু করব। তবে তিনি প্রত্যেককেই অনুরোধ করেন গ্রামে-গঞ্জে যে সকল ঝোঁপঝাড় রয়েছে বন্য প্রাণীর বেঁচে থাকার স্বার্থে প্রত্যেকেই যেন সেগুলোকে রক্ষা করেন।

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. জাহিদ হোসেন বিডিমর্নিংকে বলেন, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সচেতন নাগরিক হিসেবে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যাতে লাউয়াছড়ার পরিবেশ নষ্ট হয়।

পাহাড় রক্ষা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, লাউয়াছড়ার ভেতরে প্রভাবশালী অনেকেই জায়গা দখলে নিয়ে লেবু এবং আনারস বাগান করেছে, তাদের হাত থেকে এ জায়গাগুলো দ্রুত উদ্ধার করা উচিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনিরুল এইচ খান তিনি বিডিমর্নিংকে বলেন,  ‘ লাউয়াছড়ায় বানর, বিভিন্ন প্রজাতির হনুমান, সাপ, ব্যাঙ, অত্যন্ত বিরল প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। এই অনন্য বনের প্রাণীকুলকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে দেখা যায় রেলে কাটা পড়ে কিংবা গাড়ির চাপায় পিষ্ট হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী মারা যাচ্ছে যা একেবারেই কাম্য নয়। 

মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, লাউয়াছড়া বন সরকার ঘোষিত একটি বিশেষ বন তাই আমরাও তা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে সকল অপশক্তি এই বনের জায়গায় অবৈধপন্থায় দখল করে রেখেছে তাদের হাত থেকে সেই জায়গাগুলো উদ্ধার করে লাউয়াছড়া বনে ফিরিয়ে দেব। পাশাপাশি যে সকল কালো শক্তি কিংবা অপশক্তি এ বনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছ তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া শুধু শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ কিংবা মৌলভীবাজারের সম্পদ নয় এটি সারাবিশ্বের একটি রেইন ফরেস্ট এরিয়া। এই বন যেন বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় আমরা জেলা প্রশাসন সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। এই বনের জীববৈচিত্র্য এবং বায়ো-ডাইভারসিটি ইকোলজিক্যাল যে ব্যালাস্ট রয়েছে তা রক্ষার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

Bootstrap Image Preview