বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বর্তমানে ৪২টি জেলার প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই কোটি মানুষ এখনও আর্সেনিকযুক্ত দূষিত পানি পান করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে আর্সেনিক দূষণের কারণে প্রতি ১৮ জনে ১ জনের মৃত্যু ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পানির মাধ্যমে শরীরে আর্সেনিক প্রবেশ করলে তা বের করা কষ্টসাধ্য। আর্সেনিকের কারণে শরীরে যে পরিবর্তন ঘটে, তা কোনোভাবেই আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। ফলে সাধারণত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত বা ক্ষেত্রবিশেষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় ত্বক। এসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটা অস্বাভাবিক নয়।
জানা গেছে, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। আড়াইহাজারে করা এ গবেষণায় দেখা গেছে, আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের কারণে সাধারণ রোগে গড়ে মৃত্যুঝুঁকি ২১ শতাংশ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
প্রতি লিটার পানিতে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক পান করার ফলে ক্রনিক ডিজিজ যেমন- ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়বেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুঝুঁকি ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই দাবি করেছে।
‘নেপোটিজম অ্যান্ড পনগলেক্ট : দ্য পাইলিং রেসপন্স টু আর্সেনিক ইন দ্য ড্রিংকিং ওয়াটার অব বাংলাদেশ’স রুরাল পুওর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, বাংলাদেশের আর্সেনিক সংক্রান্ত অসুস্থতায় প্রতিবছর প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ মারা যায়।
আর্সেনিকের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা তৈরি হয়। প্রতিবেদনের লেখক ও এইচআরডব্লিউ’র জ্যেষ্ঠ গবেষক রিচার্ড পিয়ার্সহাউজ বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের খাওয়ার পানিকে আর্সেনিকমুক্ত করার জন্য মৌলিক ও জরুরি পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০০৩ সালে করা এক জরিপে সারা দেশে ২৭১টি উপজেলায় ৫০ লাখ নলকূপে আর্সেনিক পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য সংস্থাটি। যার মধ্যে ২৯ ভাগ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও দেশের অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর নলকূপ পরীক্ষা করা হয়নি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যে ১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিকজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তা মোকাবেলায় সরকার ১ হাজার ৯৬৬ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে আর্সেনিক ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।