Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাঁচ তারকা হোটেলে নদী ড্রেজিংয়ের প্রশিক্ষণ, পরামর্শকের খরচ ৮ কোটি টাকা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:২০ PM
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:২০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নদী ড্রেজিংয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ে করা হবে। আর এই আয়োজনের আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। তারা এই প্রশিক্ষণ কোনো প্রশিক্ষণবিষয়ক ভেনুতে করার জন্য বলছেন।

এতে ব্যয় কমবে। অন্য দিকে বিদেশ প্রশিক্ষণে মাথাপিছু ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা, প্রতি পরামর্শকের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা এবং ড্রেজিং খরচ প্রতি মিটারে দ্বিগুণ ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল রুট প্রকল্প-১ এর সংশোধিত ব্যয় পর্যালোচনায় এসব তথ্য ভৌত অবকাঠামো বিভাগের কাছে অসামঞ্জস্য বলে মনে হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ করিডোর বাংলাদেশের প্রধান অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল রুট প্রকল্পটি ২০১৬ সালের নভেম্বরে একনেক থেকে অনুমোদন দেয়া হয়।

২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা। কিন্তু সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে প্রকল্পের ব্যয় ২৪৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি সময় আরো এক বছর বাড়ানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৪৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে।

বলা হয়েছে, দেশে এই রুটের নাব্যতা কমে গেছে। তাই পারফরম্যান্স ভিত্তিক ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং, নৌযানের জন্য ছয়টি বড় আশ্রয়কেন্দ্র, ছয়টি বিভিন্ন টার্মিনাল নির্মাণ, ১৪টি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ এবং দুইটি পরিদর্শন জাহাজ সংগ্রহ করা হবে।

চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ করিডোর এবং নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালের বর্ধিতাংশকে অভ্যন্তরীণ এবং ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ নৌযান করিডোরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। দৈনিক প্রায় দুই লাখ যাত্রী এসব জনপথ ব্যবহার করছে। বিশ্বব্যাংকের দীর্ঘ দিনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইডিএ ফান্ডে এই প্রকল্পটি নেয়া হয়।

ঢাকার শ্মশানঘাট প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশালে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল উন্নয়ন, পানগাঁও ও আশুগঞ্জ কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ হবে। ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র হলো, আমিরাবাদ, চাঁদপুর, মেহেন্দিগঞ্জ, সন্দ্বীপ ও নলছিড়া।

১৪টি ল্যান্ডিং স্টেশন হবে ভৈরববাজার, আলুবাজার, হরিণা, হিজলা, ইলশা, মজু চৌধুরী, লাহারহাট, বেদুরিয়া, দৌলতখাঁ, তজুমুদ্দিন, মনপুরা, চেয়ারম্যান ঘাট, সন্দ্বীপ আরসিসি জেটি, বদ্দারহাট ও তমুরুদ্দিন। এখানে সব ধরনের ড্রেজিং হবে ৮৫০ কিলোমিটার। এখন নতুন করে কিছু অঙ্গ যুক্ত করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্যয় পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পরিমাণ ৩৯ লাখ ঘনমিটার। সংরক্ষণ ড্রেজিং ১৬৩ লাখ ঘনমিটার। উন্নয়ন ড্রেজিং বাবদ প্রতি ঘনমিটারে ব্যয় ৪০০ টাকা এবং সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ে প্রতি ঘনমিটারে ৫৯৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই ব্যয় অত্যাধিক বেশি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মনে করছে। বিভাগটি বলছে, নারায়ণগঞ্জ ও আশুগঞ্জ এলাকার নদী মেঘনা কিংবা পদ্মার মতো উত্তাল নয়।
পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইতঃপূর্বে ২৫০ টাকা দরে ড্রেজিং রেট প্রদান করে কাজ করা হয়েছে। তাই এই দর যৌক্তিক পর্যায়ে করা উচিত।

প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৩০ জনের জন্য চার কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তারপরও আবার আড়াই কোটি টাকা বৈদেশিক ভ্রমণ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব নতুন করে দেয়া হয়েছে। এখানে প্রতিজনের জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খরচ ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের মধ্যবর্তী সময়ে এসে এত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আপত্তি উত্থাপন করেছে। পাশাপাশি পরামর্শকের সংখ্যাও কমিয়ে আনার জন্য বলেছে।

শুরুতেই পরামর্শক ছিল ১৬ জন। এটাকে বাড়িয়ে এখন ৩৫ করা হয়েছে। ফলে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৭৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রতি পরামর্শকের পেছনে ব্যয় হবে সাত কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

ব্লক অ্যালোকেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছে, ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা অতি আবশ্যক নয়। এই ব্যয় বাদ দিতে হবে। এর আগে সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, খাতওয়ারি বরাদ্দ করার পরও কেন বড় অঙ্কের ব্লক অ্যালোকেশন দেয়া হয়। এটাকে ভেঙে ফেলতে হবে।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো: মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌপথে ড্রেজিং করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা নৌপথে নৌচলাচল চালুর উদ্দেশ্য ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি প্রকল্প পিইসি থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। একই স্থানে দুইটি প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং কাজের দ্বৈততা সৃষ্টি করবে।

তাই ঢাকা-ভোলা নৌরুটে খননের প্রস্তাব ও ব্যয় বাদ দেয়া উচিত। এ ছাড়াও বিভিন্ন রুটে খননকাজ চলছে। তাই দ্বৈততা সৃষ্টি হলে সেই অংশ বাদ দেয়া উচিত। দায়িত্বশীলতার সাথে প্রকল্প পরিচালক সংশোধিত ডিপিপিটি প্রণয়ন করেননি। সেখানে কোনো ধরনের ব্যয়ের পার্থক্য দেখানো হয়নি।

Bootstrap Image Preview