আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গারা গণহারে পাসপোর্ট পাচ্ছেন। কিন্ত বাংলাদেশী প্রবাসীরা পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। দূতাবাসের সামনে বাঙ্গালিরা অসহ্য গরমে দিনরাত্রি কাটাচ্ছে। তাদের দূর্ভোগের কোন কথাই শুনছেন না কাউন্সিলর জেনারেল ইকবাল খান। কোন ধরণের সহযোগিতা পাচ্ছে না প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে করে দুবাই প্রবাসিরা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এই ভাবে প্রকাশ্যে দুর্ণীতি করায় রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী জানান, ৩০/৪০ হাজার দিরহামের(বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ টাকা) বিনিময়ে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গারা খুব সহজে পাসপোর্ট পাচ্ছে। আর হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীরা পাসপোর্ট পেতে দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে রাতে রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকে আর দিনে অসহ্য গরম পাসপোর্টের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করেন।
কিন্তু দূতাবাস ও কনসুলেটের বড় বড় অফিসাররা এসিতে রুমে আরামে ঘুষের টাকা কামাচ্ছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পাসপোর্টের সেবা নিতে আসা হাজার হাজার বাংলাদেশি।
রাস্তার মানুষের কোন খরব তাদের নেই। এতো গরমের মাঝে তাদের কষ্ট দেখলে অবাক লাগে।
অতচ এই প্রবাসীদের টাকা নিয়ে তারা চলেন। দূতাবাসের কোন অফিসার ভালো করে বাংলাদেশীদের সাথে কথা বলেন না।
তারা আরো জানান, এই সব দুর্নীতিবাজ অফিসার যদি দুতাবাসে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সরকারে বদনাম আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরকে প্রবাসীরা গালি দিবে।
দুবাই থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী মোহাম্মদ ইসমাঈল সিআইপি বলেন, আমি ১৭ বছর দুবাই ছিলাম। কোনদিন দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিপক্ষে কিছু লিখতে বা বলতে পারি নাই। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী বলে মোটা অংকের টাকায় পাসপোর্ট পাবে, আর বাংলাদেশীরা দূতাবাসের সহযোগীতাতু দুরের কথা সহজে পাসপোর্ট পাচ্ছে না।
আজকে বাধ্য হয়ে কিছু বাস্তব ঘটনা বলছি। কারণ প্রবাসীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গালি দিলে আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আছি তারা মেনে নিতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠিয়ে সিআইপি মর্যাদা পেলাম। তাই দূতাবাসে এধরনের অনিয়ম দুর্নীতি গুলো দেখলে খারাপ লাগে।
ইসমাঈল সিআইপি বলেন, ৫/৬ বছর আগে দূতাবসে মারামারি করে ছিলাম, কারণ কিছু বাঙ্গালী দূর্ভোগে পড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে গালি দিয়েছিল বলে।
তিনি বলেন, একসময় দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাস জামায়াত আর বিএনপি ঘাটি ছিল।
কনসুলেটের অসহযোগিতা আর দূতাবাসে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পাসপোর্টের সেবা নিতে আসা হাজার হাজার বাংলাদেশি।
এদিকে পাসপোর্ট করতে না পারায় ভিসা ও লাইসেন্স নবায়ন, দেশে ফেরাসহ অনেক কাজই করতে পারছে না দুবাই, শারজাহ, আজমান, ফুজেইরাহ, রাসাল খাইমাহ, উম্মুল কুয়েইন অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসেরও সহযোগীতা পাচ্ছে না। ঘুষ দিতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পাসপোর্টের সেবা নিতে আসা হাজার হাজার বাংলাদেশি। পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ভাইস কনসাল জেনারেল ইকবাল খানই প্রতিদিন শতশত গ্রাহকে পাসপোর্ট সেবা দিতে ঘুষ বাণিজ্যে করছেন।
অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুবাই দূতাবাসে যে পরিমাণ সেবা দেওয়া হয়, তা অন্যখানে সম্ভব নয়। দূতাবাসে ওই পরিমাণ জনবল নেই। তাই দুবাইতে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা সেবা নিতে কষ্টপাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে দুবাই কনসুলেটের কনসাল জেনারেল ইকবাল খান কে তাঁর অফিসে পাওয়া যায়নি। অন্য কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজি হননি।
দূতাবাসে সেবা নিতে আসা এক বাংলাদেশি অভিযোগ করেন, ‘পাসপোর্ট রিনিউ (নবায়ন) করব, পাসপোর্টের ডেট ওভার (মেয়াদ শেষ) হয়ে গেছে। এখন আমার ভিসা লাগতেছে না রিনিউয়ের জন্য। শত শত বাঙালি কষ্ট করে এই সমস্যা নিয়ে আসে। লাইসেন্স রিনিউ করতে পারে না, ভিসা লাগাইতে পারে না।’
ওই প্রবাসী বলেন, ‘একজনের মা মারা গেছে, উনি দেশে যাইতে পারতেছে না, পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য। এগুলার দায়দায়িত্ব কেডা নিবে ভাইজান।’
পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দুইবার এখানে এসেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসলেই সিকিউরিটি আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। কোনো অফিসার আসে না। আমাদের খোঁজ-খবর খবর নেয় না। তাহলে আমরা কী করে এখানে বসবাস করি।’
এদিকে পাসপোর্টের সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা জানান, কনসুলেট যথাযথভাবে সেবা দিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশিদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। হাজার হাজার পাসপোর্ট গ্রাহককে দূতাবাসে দিনের পর দিন লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকে, অনেকে দরাস্তায় ঘুমান।
অনেকে দূতাবাসে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আনতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রবাসীরা।