Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘হুরপরী’ সাধনার সঙ্গে যৌনাচার, সব হারাচ্ছেন জামালপুরের ডিসি!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:৫২ PM
আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:৫২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নিজের হাতে চাকরি দেওয়া অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার সঙ্গে আপত্তিকর ও অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জীবনের সব অর্জন হারাচ্ছেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীর। চার মিনিট ৫৮ সেকেন্ড ও ২৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মানসম্মান, চারিত্রিক সনদ, ভালো ভালো অর্জন- কিছুই রইলো না তার। যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় আজ রোববার তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার শুদ্ধাচার সনদও কেড়ে নেয়া হবে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তদন্ত করে সাবেক এ ডিসি ও নারী সহকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ফরহাদ হোসেন বলেন, আহমেদ কবীরকে এর আগে শুদ্ধাচার পদক দেয়া হয়েছিল। সেটি ফিরিয়ে নেব। যাতে এ ধরনের কাজ ভবিষ্যতে অন্য কেউ না করতে পারে। আগামীতে ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নৈতিকতা বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কমিটি ভালোভাবে তদন্ত করে, বুঝে, কী ঘটেছে সেখানে, কতটুকু অনৈতিকতা সেখানে হয়েছে- সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দেবে। সেটির ভিত্তিতে আমরা এক্সামপ্লিয়ারি একটা প্রিম্যাটিক মেজার্স নেব।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জামালপুরের ডিসি অনৈতিক কাজ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হযেছে। অধিকতর তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সময় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘পাশাপাশি যে নারীর নাম এসেছে তাকেও তদন্তের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, জেলায় একজন ডিসি অনুকরণীয় ব্যক্তি। তার কাছ থেকে এ রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ড কাম্য নয়। তার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে ঘটনাটি ‘সাজানো’ বলে দাবি করেন ডিসি আহমেদ কবীর। ওই ঘটনায় জামালপুরসহ সারা দেশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের বদলে নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মোহাম্মদ এনামুল হককে।

এদিকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের পর ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কজন কর্মকর্তা কর্মচারী এ প্রতিবেদককে বলেন, সাধনা ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্ধ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সাথে দেখা করেন। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক। উন্নয়ন মেলা চলাকালীন তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে যা শারীরিক সর্ম্পকে রূপ নেয়। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে আহমেদ কবিরকে ওএসডিও করা হয়েছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। সেই সর্ম্পকের সূত্র ধরে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নিজে ও তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন।

সাধনা অফিস সহায়ক পদে যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস রুমের পাশে খাস কামরাটিতে মিনি বেড রুমে রূপান্তর করতে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সাজ্জসজ্জা করেন। সেই রুমেই চলতো তাদের রঙ্গলীলা।

অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয়েছিল লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো বিশ্বস্ত পিয়ন। এই সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার জন্য প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতো কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই। লীলা শেষে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতো তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। সবুজ বাতি জ্বলে উঠার পরেই শুরু হতো দাপ্তরিক কার্যক্রম।

ডিসি অফিসে গুঞ্জন রয়েছে, ছায়া ডিসি সাধনার হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নি দপ্তরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে সাধনাকে ম্যানেজ করতো সুবিধাভোগীরা। সবার মাঝেই ছায়া ডিসি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন এই প্রভাবশালী পিয়ন।

Bootstrap Image Preview