Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভুল চিকিৎসায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু, চিকিৎসকসহ পাচঁজনের বিরুদ্ধে মামলা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০১৯, ০৪:৩৪ PM
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯, ০৪:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভূল চিকিৎসায় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মিয়া (৩৪) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার চন্ডিবের মধ্যপাড়া এলাকার হাজী আলাউদ্দিনের ছোট ছেলে। 

শুক্রবার (৫ জুলাই) এঘটনায় জুয়েল মিয়ার বড় ভাই মো. কামাল মিয়া বাদী হয়ে ট্রমা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিজিটি অর্থপেডিক সার্জারী ডা.কামরুজ্জামান আজাদ কে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ্য করে ভৈরব থানায় মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় ভৈরবের স্থানীয় ট্রমা জেলারেল হাসপাতালে ভুল এনেসথিয়া দেয়ায় অপারেশন টেবিলেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার খবর পেয়ে রোগীর স্বজনসহ স্থানীয় এলাকাবাসী হাসপাতাল ভাংচুরসহ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদ ও হাসপাতাল মালিক মো.মোশারফ হোসেন কে অবরুদ্ধ করে রাখে।

পরে খবর পেয়ে ভৈরব থানার পুলিশ, র‌্যাব১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ সময় খবর পেয়ে ছুটে আসেন উপজেলা সহকারি কমিশনার ( ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা পযর্ন্ত স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালটি অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রাত ২টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর পুলিশ র‌্যাবের নজরদারিতে ডা.কামরুজ্জামান আজাদ কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

রোগীর স্বজনদের দাবি ডা. ইমরান অপারেশনের সময় এনেস্থিসিয়া দিতে ভূল করেছে। এছাড়াও এনেস্থিসিয়া করার পূর্বে কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীকে ভুল ঔষধ প্রয়োগ করার কারণে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

রোগীর বড় ভাই মো.কামাল মিয়া জানান, আমার ছোট ভাই জুয়েল দুই বছর পূর্বে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তার হাতের কবজি ভেঙ্গে যায়। তার চিকিৎসার জন্য আহত অবস্থায় ভৈরব ট্রমা হাসপাতালে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ভাংঙ্গা হাতের চিকিৎসা করানো হয়।

সে সময় হাতের কবজিতে বড় একটি অপারেশন মাধ্যমে তার হাতে স্ক্রুসহ দুটি প্লেট প্রবেশ করায় চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান আজাদ। দুই বছর পর সে স্ক্রু ও প্লেট অপসারণের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদ অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়।

হঠাৎ রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওটি থেকে ডাক্তার বের হয়ে বলেন আপনাদের রোগীটা একটু শ্বাস কষ্টে সমস্যা দেখা দিছে উনাকে জরুরি ঢাকাতে আইসিওতে নিতে হবে এ কথা বলে তিনি আবার অটিতে চলে যান।

এর কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমাকে ও ছোট ভাইকে ডেকে নিয়ে বলেন আপনার ভাইয়ের কাজটা তো সুন্দরভাবে করলাম যখন বেডে নেব সেসময় শ্বাস কষ্ট বাড়তি সেটা আমরা ক্লিয়ার করতে পারছি না। এখন সেটা সমস্যা লাগছে।

তখন আমি তাকে জিঙ্গাসা করলাম আমার ভাই কি আছে নাকি মারা গেছে তারপর আমি অটিতে গিয়ে দেখি আমার ভাই টেবিলেই মারা গেছেন। ভুল ঔষধ দিয়ে তার ভাইকে মেরেছে বলে তার অভিযোগ।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান আজাদ জানান, সম্পূর্ণ অজ্ঞানে ঝুঁকি থাকায় রোগী জুয়েল মিয়াকে অপারেশনের সময় সম্পূর্ণ অজ্ঞান না করে রোগীর একটি পাশ অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। রোগীর আবদার ছিল সে জন্য কোন রকম টের বা খবর না পায় সেজন্য ঘুম পাড়াতে বলে।

তার অনুরোধে অজ্ঞান বিশেজ্ঞ চিকিৎসক ইমরান তাকে ঘুমের ঔষধ দেন। এর ২০-২৫ মিনিটের মধ্য তার হাত থেকে সার্জারির মাধ্যমে স্ক্রুসহ দুটি প্লেট অপসারণ করা হয়। তারপর যখন অপারেশন শেষ করার সময় হঠাৎ করে রোগীর পেশার কমে যায় এবং তার হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তার পরক্ষনেই রোগী মৃত্যুবরণ করেন । রোগীর ভয়ের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ভৈরব থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোখলেছুর রহমান জানান, ভুল চিকিৎসায় একজন রোগী মারা যাবার ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পৌছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করে। হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় আজ শুক্রবার সকালে নিহতের বড় ভাই মো. কামাল মিয়া বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ্য করে একটি মামলা দায়ের করেন । এ মামলার প্রধান আসামী চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান আজাদ কে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

Bootstrap Image Preview