Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শুধু ভোটে জিতলে চলবে না, জনগণের হৃদয়ও জয় করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৯, ০৫:৫৮ PM
আপডেট: ২৭ মে ২০১৯, ০৫:৫৮ PM

bdmorning Image Preview


জনগণের কল্যাণে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনস্বার্থে যদি আপনি কাজ করেন, মানুষের হৃদয় যদি আপনি জয় করতে পারেন তাহলে দেখবেন জনগণই আপনার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে এবং আপনাকে তাঁদের সেবা করার সুযোগটা বারবার দেবে। শুধু ভোটে জয়লাভ করলেই চলবে না, জনগণের হৃদয়ও জয় করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আপনাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আপনারা তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। তাঁদের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে। রাজনীতিটা যদি ব্যক্তি স্বার্থে হয় তাহলে সে রাজনীতি কখনও জনগণের কল্যাণ করতে পারে না।

আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরবৃন্দের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব। তাই মনে রাখতে হবে-জনপ্রতিনিধি হওয়া মানেই জনগণের জন্য, শুধু যারা আপনাকে ভোট দিয়েছে তারা নয়, আপনি এলাকার সব মানুষেরই প্রতিনিধি।

তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী তখন সমগ্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দল মত নির্বিশেষে সকলের কল্যাণ করাই আমার দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাও সেভাবে নিজেকে মনে করবেন এবং স্ব-স্ব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদার আসন করে নিয়েছে সেটা অব্যাহত থাকবে। আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন এবং আমার তরফ থেকে সবরকম সহযোগিতা আপনারা পাবেন।

ময়মনসিংহ নতুন সিটি কর্পোরেশন, এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে সেটা আপনারা পারবেন, যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত মেয়র একরামুল হক টিটুকে শপথ বাক্য পাঠ করান।   পরে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম একইস্থানে সংরক্ষিত আসনসহ ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৪৪ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী একরামুল হক টিটু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। এরআগে জাতীয় পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।

গত ৫ মে অনুষ্ঠিত হওয়া ময়মনসিংহের সিটি নির্বাচনের ৩৩টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার।

৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য প্রায় ২৪২ ন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া ১১টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৭০ জন।

দেশের ১২তম সিটি কর্পোরেশন ময়মনসিংহের সিটি নির্বাচনে এবার ভোট প্রদানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তাঁর সরকারের আমলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অতীতের তুলনায় কয়েকগুল বাজেট বৃদ্ধির প্রসংগ টেনে বলেন, আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে এ বছরের বাজেট পেশ করা হবে এবং এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, উন্নয়ন বাজেট যা অতীতে ছিল মাত্র ১৯ হাজার কোটি টাকা সেটার আকার দাঁড়াবে এবার প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ উন্নয়নের ছোঁয়াটা কেবল শহরভিত্তিক নয়, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম ভিত্তিক যেন হয়। আর এবারেও আমরা ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করেছি।

দেশের বাজেটের ৯০ শতাংশ সরকার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বাস্তবায়ন করে থাকে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বাধীন জাতি হিসেবে কারো কাছে হাত পেতে নয় বরং আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশকে আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে তিনি নবনির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এই বিষয়টা অবশ্যই ভালোভাবে দেখবেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক- যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে, একটি দেশকে ধ্বংস করে, সমাজকে ধ্বংস করে। কাজেই, আপনাদের কারো ছেলে-মেয়েই কখনো যেন এদিকে দৃষ্টি না দেয়। এরসাথে জড়িত না হয়।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনাদের গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং এসব প্রতিরোধে একযোগে কাজ করতে হবে।

এ সময় তিনি প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে সকলকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দুর্নীতি করলে কোন লাভ হয় না। কারণ, একদিন মাটির নিচে চলে যেতে হয়। তখন আর অর্জিত সম্পদের কোন কিছুই সাথে যায় না। উপরন্তু বদনামটা থেকে যায়। কাজেই দেশকে আমরা দুর্নীতি মুক্ত করতে চাই। তাহলে আমাদের দেশ আরো উন্নত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ময়মনসিংহসহ এই অঞ্চলের মানুষের যেন সার্বিকভাবে কল্যাণ হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই ময়মনসিংহ বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশন করা হয়েছে। কাজেই, তিনি নতুন সিটি কর্পোরেশনে কাজের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সচেষ্ট থাকার জন্যেও নির্বাচিতদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি স্মরণ করেন ’৯৬ সালে সরকারে আসার পরই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন অর্জন করে। তাঁর সরকার ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশকে উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত করে। ২০০১ সালে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সময়ও দেশে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের ৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদেই জনগণ অনুভব করে যে- সরকার জনগণের সেবক। আর ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের সরকারের সময় দেশটি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, অস্ত্র চোরকারবার, মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতির একটি আখড়ায় পরিণত হয়।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। আবার সেই উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশটি খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিনত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে তাঁর সরকারের শাসনে বাংলাদেশ আজকে উন্নত হয়েছে। আজকে জাতির পিতার হাতে গড়া বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের দেশ, মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যে মর্যাদা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।

তিনি বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে উঠেছে। আমাদের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা দারিদ্রের হার ৪১ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ সামনে একে আরো কমিয়ে আনবো এবং বাংলদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে গড়ে তুলবো, সেটাই আমাদের স্বপ্ন।

প্রধানমন্ত্রী এসময় জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৭ মাচর্ ২০২০ থেকে ২৬ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ পালন এবং নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তায়তার সরকার গৃহীত শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন।

Bootstrap Image Preview