Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লালমনিরহাটে সিন্ডিকেটের ধান যাচ্ছে সরকারি গুদামে

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৯, ১১:১৯ AM
আপডেট: ২৪ মে ২০১৯, ১১:২১ AM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


লালমনিরহাটে চলতি মৌসুমে ইরি-রোবো ধানের ভালো ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা। জেলায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু হলেও কৃষকের তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক শতক জমিতেও ইরি-রোবো চাষাবাদ করে নাই এবং কৃষির সাথে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের নাম ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে। কৃষকের বদলে ফড়িয়া মহাজনদের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিচ্ছেন একটি সিন্ডিকেট। 

জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় চলতি বছর ২৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৪৯৩ মে: টন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ হাজার ৭৩১ মে:টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে ৩৪৫ মে:টন আতব চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। কিন্তু এবার মুনাফা বেশি হওয়ার কারণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন একটি সিন্ডিকেট। তাদের দাপটে সাধারণ কৃষকরা ক্রয় কেন্দ্রের আশেপাশেই ভিড়তে পারছেন না। কেউ ক্রয় কেন্দ্রে গেলেও ধান কেনা শেষ বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে কৃষকদের কাছ থেকে রাইচ মিল মালিকরা ধান না কেনায় আরো দরপতনের আশঙ্কা রয়েছে। সরকারিভাবে চাল ৩৬ টাকা ও ধান ২৬ টাকা কেজি দরে দাম নির্ধারণ করে ক্রয় করা হলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, জেলার চিহ্নিত ফড়িয়ারা এবং সিন্ডিকেটের লোকজন সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং ব্যাংক হিসাবের চেক কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে যেসব কৃষকের ব্যাংক হিসাব নেই সেসব কৃষককে না জানিয়েই তার নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা হচ্ছে। কৃষকের নামে ফড়িয়া ও সিন্ডিকেটের লোকজনের ধান দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও খাদ্য গুদামের ইনচার্জগনসহ কতিপয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।

সড়েজমিনে দেখা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য রমজান আলীর পরিবার থেকে ৫জনের নাম কৃষক তালিকায় স্থান পেয়েছে। ওই তালিকায় তপন ঘোষ নামে এক ব্যক্তি নাম স্থান পেলেও উক্ত তপন ঘোষ এক শতক জমিতেও ইরি-বোরো চাষাবাদ করেনি। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের সহকারী কৃষি কর্র্মকর্তা ডালিম কুমার সরকার জানান, ওই ব্যক্তিদের নামে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তালিকা দিয়েছেন। তবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, তিনি কৃষক তালিকায় কোনো নাম দেননি। তালিকা করেছেন কৃষি বিভাগের লোকজন। 

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের কৃষক জালাল হোসেন, সাইদুল ইসলাম, আব্দুস ছামাদ বলেন, এ বছর বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় জমিতে সেচ দিতে হয়েছে বেশি। বিঘা প্রতি সেচ বাবদ খরচ হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকারও বেশি। বর্তমানে জেলার হাট বাজারগুলোতে  মোটা ধান ৪৩০ টাকা আর চিকন ধান ৪৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকার চালের দাম ৩৬ টাকা ও ধানের দাম ২৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে, এটা আশার কথা। কিন্তু এ কার্যক্রমের সুফল আমরা পাচ্ছি না। এক শতক জমিতেও ইরি বোরো চাষাবাদ করে নাই এমন ব্যক্তিদের নামে তালিকা করে খাদ্য গুদামে দেয়া হয়েছে।

জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ৪০শতক জমিতে ২৯মণ ফলন পেয়েছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ১১হাজার টাকা। বর্তমান বাজারমূল্যে বিক্রি করলে খরচ বাদ দিলে লাভ হবে মাত্র ১হাজার ৪শত টাকা।

ওই এলাকার কৃষক জুয়েল রানা জানান, প্রতিমণ ধান ৫০০টাকায় বিক্রি করলেও তার উৎপাদন খরচ উঠবে না। ধানের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি।

ধান ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও আব্দুল করিম বলেন, আমরা ধান ক্রয় করে অটোরাইচ মিলগুলোতে বিক্রি করি। কিন্তু এখনও রাইচ মিলগুলো তেমন ধান কিনছে না। এ কারণে বাজারে ধানের দরপতন শুরু হয়েছে।

নাম না প্রকাশ শর্তে এক সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জানান, কোন কৃষক কি পরিমান ধান বিক্রি করতে পারবেন সেটি নির্ধারণ করার দায়িত্ব কৃষি বিভাগের। ধান ক্রয়ের জন্য কৃষককের তালিকা তৈরী করবে কৃষি বিভাগ। কিন্তু কতিপয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তার অনুসারী লোকজনের একটি তালিকা তৈরী করে সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।

এ দিকে ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষকদের দাবি, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরী করে নামের পাশের স্বাক্ষর যাচাই ও কৃষককে জিজ্ঞাসা করে ধান কিনতে হবে।

লালমনিরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া কৃষি কার্ড মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। এজন্য একটি কৃষক তালিকা তৈরী হয়েছে। ওই তালিকা উপজেলা ক্রয় কমিটি অনুমোদন করেছে। এবার অনেক গুরুত্বের সাথে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের চেষ্টা করছে সরকার।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, সরকারী ধান ক্রয়ে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের বিষয়টি ইউএনওদের দেখভাল করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তারপরও কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

Bootstrap Image Preview