Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বিয়ে ভেঙে দেয়ায় শামীমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯, ১০:২৬ AM
আপডেট: ২১ মে ২০১৯, ১০:২৭ AM

bdmorning Image Preview


যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী শামীম হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত কফিল উদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

কফিল বলেছে, ‘শামীম কূটনামী (বদনাম) করে আমার বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। সে আমার চরিত্র নিয়েও কথা বলেছে। এ কারণে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি।

ঘটনার রাতে আমি আর শামীম বারিধারায় কাছাকাছি বুথে ডিউটি করছিলাম। ভোরে গিয়ে দেখি শামীম চাঁদর মুড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। পকেট থেকে হাতুড়ি বের করে উপর্যুপরি তার মাথায় ৫টি আঘাত করি। এতেই সে মারা যায়। এরপর আমি আমার ডিউটিস্থলে চলে যাই।’

শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমানের আদালতে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ১৫ মে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার পূর্বধনিরাম গ্রাম থেকে গ্রেফতার হয় কফিল।

কফিল আদালতকে জানায়, ‘প্রতিবেশী চাচাতো ভাই শামীম ২০১৮ সালে আমাকে ঢাকায় নিয়ে এসে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি দেয়। শামীমও একই কোম্পানিতে চাকরি করে।

ঢাকায় আসার পর শামীম আমাকে তার সুবাস্তু টাওয়ারে ভাড়া বাসায় থাকতে দেয়। মাসখানেক পর শামীমের বাবা-মা আমাকে ওই বাসায় থাকতে নিষেধ করলে ভাটারার নয়ানগর মুন্সিবাড়ি এলিট ফোর্সের জোন কমান্ডার শাহীনের মেসে উঠি।

এরই মধ্যে আমার সঙ্গে সাবিনা নামে এক চা দোকানির পরিচয় হয়। সাবিনা আমার সঙ্গে তার ছোট বোন শাহানাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যাই। এক দিন সাবিনা এবং সাবিনার স্বামী আবদুল মালেককে শামীম জানায়, কফিলের (আমার) অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, স্বভাব চরিত্র ভালো না- এ বিয়ে হলে শাহানা সুখী হবে না। এসব কথা শুনে সাবিনা আমার সঙ্গে তার বোনকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া আমার সম্পর্কে এলিট ফোর্সের জোন কমান্ডার শাহীনের কাছেও বদনাম করে শামীম। এ কারণে রাগে-ক্ষোভে শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করি। ঘটনার দুই-তিন দিন আগে ভাটারার নতুনবাজার থেকে হাতুড়ি, সাদা প্যান্ট, সোয়েটার (জ্যাকেট) এবং মুখোশ কিনি। এগুলো একটি ব্যাগে লুকিয়ে রাখি। ২০ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গুলশান-২ এর গোলচত্বর এলাকায় ইউসিবি বুথে ডিউটি করি। ওই দিনই তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউসিবি বুথে ডিউটিতে যাওয়ার সময় ব্যাগে করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও পোশাক এবং মুখোশ সঙ্গে করে নিয়ে যাই। রাত ১০টায় গুলশান-২ এর ইউসিবি বুথের ডিউটি শেষ করে ব্যাগ নিয়ে বারিধারা জে ব্লকের ইউসিবি বুথের উদ্দেশে রওনা দেই। পথে সাবিনার চায়ের দোকানে বসে চা খাই। এ সময় শামীম পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। এরপর আমি ও শামীম দু’জন একসঙ্গে রওনা হই। আমি বারিধারার জে ব্লকের ইউসিবি বুথে ডিউটিতে যাই। আর শামীম বারিধারা জে ব্লকের যমুনা ব্যাংকের বুথে ডিউটিতে যায়। রাত গভীর হলে বুথের চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর ৬টায় ঘুম ভাঙে। এরপর এটিএম বুথের ছাদ থেকে ব্যাগটি নামিয়ে পোশাক পরিবর্তন করি। ব্যাগ থেকে হাতুড়ি ও মুখোশটি নিয়ে হাতুড়িটি ডান পাশের পকেটে রাখি। পোশাক পরিবর্তন করার পর ব্যাগটি পুনরায় ইউসিবি বুথের ছাদে রাখি। এরপর যমুনা ব্যাংকের বুথে গিয়ে দেখি শামীম চাদরমুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। পকেট থেকে হাতুড়ি বের করে শামীমের মাথায় পাঁচটি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করি। পরে বুথের ভেতরের ক্যামেরা ভেঙে সেখান থেকে বের হয়ে যাই। এরপর অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়ে ইউসিবি বুথের ছাদ থেকে ব্যাগটি নিয়ে খুনের সময় পরিহিত পোশাক পরিবর্তন করে এলিট ফোর্সের পোশাক পরি। পোশাক, মুখোশ ও হাতুড়ি ব্যাগের ভেতর রাখি। পরে ব্যাগটি নিয়ে বাসায় গিয়ে রেখে দেই। এরপর থেকে শামীমের স্বজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করি। শামীমের লাশ ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া, দাফনসহ আনুষঙ্গিক কাজে শামীমের পরিবারকে সহযোগিতা করি।’

কফিল আরও বলে- ‘হত্যাকাণ্ডের পর এলিট ফোর্সের চাকরি ছেড়ে দেই। বকেয়া বেতনের টাকা নিতেও ঢাকায় আসিনি।’

উল্লেখ্য, ২১ জানুয়ারি ভোরে বারিধারার জে ব্লকের যমুনা ব্যাংকের বুথ থেকে শামীমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর নিহত শামীমের বাবা নজরুল ইসলাম (৪৭) বাদী হয়ে ভাটারা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে ভাটারা থানা পুলিশ, এরপর ডিবি উত্তরের টিম মামলার তদন্ত করে। পরে ৩ এপ্রিল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) ন্যস্ত হওয়ার পর তদন্ত করে আসছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (দক্ষিণ) এসআই পুলক সরকার।

পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন জানান, মামলার তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার, সোর্স নিয়োগ এবং ওই এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা শেষে ১৫ মে কফিলকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার পূর্বধনিরাম গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।

Bootstrap Image Preview