Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গোপালগঞ্জে শিক্ষকদের বিরূদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ

হেমন্ত বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৫৯ PM
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০১:০৪ PM

bdmorning Image Preview


গোপালগঞ্জ সদর উপজেলাধীন নিজড়া হাই স্কুলের শিক্ষক সুধাংশু হালদার ও মো. ফরহাদ আহমেদ মুন্সী সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসনের নজরদারির উর্ধ্বে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা' কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোচিং বা প্রাইভেট পড়া বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে জারি করা হয়েছে, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা- ২০১২’। এ ব্যাপারে মহামান্য উচ্চ আদালত থেকেও স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অথচ এ নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন কতিপয় মুনাফালোভী শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিএসসি শিক্ষক সুধাংশু হালদার নিজড়া গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে ভোর ৬টা থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের সময় ব্যতীত মোট ৫টি ব্যাচে গণিত বিষয়ে পড়ান, প্রতি ব্যাচে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০ থেকে ৬৫ জন, আর প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে নেয়া হয় মাসিক ৪শ' টাকা করে। 

অপরদিকে মো. ফরহাদ আহমেদ মুন্সী নিজড়ার জাঙ্গাল বাজার থেকে ২শ' গজ উত্তরে তার নিজ বাড়ির সামনে নিজস্ব কোচিং সেন্টারে ভোর ৬টা থেকে শুরু করে প্রতিদিন ৩টি ব্যাচ পড়ান, প্রতি ব্যাচে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ জন। তিনি পড়ান ইংরেজী বিষয়, টাকা নেন প্রতি শিক্ষার্থী মাসিক ৪শ' টাকা।  

রবিবার (২১ এপ্রিল, ২০১৯) সকাল সোয়া ৭টার সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি অপরিচ্ছন্ন, জরাজীর্ণ ও অপরিসর ঘরে গাদাগাদি করে ৬০ থেকে ৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রী কোচিং করছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সুধাংশু হালদার ঘরের আরেক পাশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতের দিকে চলে যান। আর যাওয়ার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি মিথ্যা কথা শিখিয়ে দিয়ে যান।

মিথ্যা কথাটি হলো, এখানে কোন স্যার পড়ান? জিজ্ঞেস করলে তারা বলবে, আন্টি পড়ান (সুধাংশ হালদারের স্ত্রী)।

বাস্তবে তাই হলো, এখানে কে পড়ান? উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যখন জানতে চাওয়ায় তারা অবলীলায় বলে ফেলে, আন্টি পড়ান। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিভাবক জানান- আমরা নিজড়া স্কুলের শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি, কোনো উপায় নেই, তাদের কাছে পড়াতেই হবে, তাদের কাছে না পড়লে অথবা অন্য কোথাও প্রাইভেট পড়লে আমাদের ছেলে মেয়েদের ক্লাসে ফেল করিয়ে দেবার মতো জঘন্য কাজটি করতে তারা দ্বিধা করেন না।

তারা আরো জানান, শিক্ষকদের এই কোচিং বাণিজ্য চালানোর পিছনে সহকারী প্রধান শিক্ষক বিভূতি ভুষন বালার মদদ আছে।

‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা- ২০১২’  উপেক্ষা করে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সুধাংশু হালদার বলেন, আমি পড়াই না, আমার স্ত্রী পড়ান।

এ প্রসঙ্গে ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক মো. ফরহাদ মুন্সী বলেন, আমার বিরূদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। এলাকার কিছু অভিভাবকদের অনুরোধে এবং স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কিছু ছাত্র ছাত্রীকে আমি পড়াই। এখান থেকে বাণিজ্য করা আমার উদ্দেশ্য নয়, তবে খুব শীঘ্রই আমি এই পড়ানোও বন্ধ করে দেবো।

এ বিষয়ে নিজড়া হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিভূতি ভুষন বালা বলেন, আমি অত্র স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং বাণিজ্য না করার বিষয়ে সকল শিক্ষকদের নোটিশ দিয়েছি এবং তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। আমি দূর থেকে আসি তাই কে, কোথায় কোচিং করায় সেটা দেখার সুযোগ আমার হয়ে উঠে না।

এ প্রসঙ্গে নিজড়া হাই স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি রমজেদ সরদার বলেন, আমি সকল শিক্ষককে সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোচিং না করানোর জন্য বলে দিয়েছি। এখন যদি কেউ করায় এর দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।

সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজড়া হাই স্কুলের শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ আকরাম হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। সরকারি নির্দেশনা না মেনে কোচিং বাণিজ্য চালানোর কারণে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক নীতিমালা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এলাকার সচেতন অভিভাবকরা স্কুলের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ এবং স্কুলের পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Bootstrap Image Preview