হয়তো বৈশাখ মাসে জন্মেছিল বলে আব্বু-আম্মু আদর করে নাম রেখেছিল বৈশাখী। সেই পয়লা বৈশাখে পৃথিবী নামক নরক থেকে নিরবে বিদায় নিল অনাদরে, অবহেলায়, অনিদ্রায়, বিনা চিকিৎসায় রাস্তায় বেড়ে ওঠা ৩ বছরের শিশু বৈশাখী। রাস্তায় জন্ম, রাস্তায় বেড়ে ওঠা, রাস্তায় মৃত্যু কী সৌভাগ্য তার! কী দারুণ নীরব মৃত্যু তার।
মা ছাড়া কাঁদার লোক নেই, নেই ক্যমেরা, নেই সাংবাদিক, নেই পুলিশ, নেই প্রশাসন, নেই জন প্রতিনিধি, নেই শুভাকাঙ্খী, নেই উৎসুক জনতা, নেই কোন হৈচৈ। আছে শুধু ক’জন প্রতক্ষ্যদর্শীর নীরব চোখ চাওয়া-চওয়ি।
অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে মৃত্যু শিশুকে কোলে জড়িয়ে শুধুই মায়ের কান্না। যখন সবাই পান্তা-ইলিশ, বৈশাখী সাজ, শোভাযাত্রা র্যালি, সেলফি, গান-বাজনা, বক্তব্য ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত তখন তার মৃত্যু জানান দিয়ে গেল আমাদের এ লোক দেখানো কর্মযজ্ঞের সামান্য অংশের প্রচেষ্টা তাদের মত সুবিধাবঞ্চিতদের জীবন বাঁচাতে পারে।
এলাকাবাসী জানায়, মেয়েটির মা-বাবা দু'জনেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তালা সদর ইউনিয়নের আটারই গ্রামের বাবার বাড়ি ও রহিমাবাদ গ্রামে শশুরবাড়ি হলেও সেখানে তাদের কিছুই নেই। নিরুপায় হয়ে তিন শিশুসন্তান নিয়ে রাস্তার অলি-গলি আর উপজেলার বিভিন্ন অফিসের বারান্দায় রাত কাটে তাদের।
স্থানীয় অনেকেই জানান, তাদের নাকি বসতভিটা ও কয়েক বিঘা কৃষি জমিও আছে যা বেদখল হয়ে আছে। তাহলে তাদের এ দুর্দশা মনুষ্য সৃষ্ট। আমাদের মত সুবিধাভোগী ও ক্ষমতাবানদের নির্লিপ্ততা তা কি দায়ী নয়?
মা বিলাপে বলেন, বৈশাখি তোকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই তোর জন্য করতে পারিনি। আমাদের তুই মাফ করিস। কারণ আমরাও তো সুবিধাভোগীদের দলে। আজ পয়লা বৈশাখে তোর জন্য দুফোঁটা চোখের জল। এপারে তো হলো না, পরপারে ভাল থাকিস মা বৈশাখী। লোকে বলে ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্য। জানি না তোর জন্মই বা কার জন্য মঙ্গল, তোর দুর্দশাগ্রস্থ জীবনকাল বা কার জন্য মঙ্গল আর তোর অকালমৃত্যু-ই বা কারও জন্য মঙ্গল। পরপারে ভাল থাকিস।